চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে গত মঙ্গলবার সড়ক অবরোধ করে রোগী ও স্বজনদের আন্দোলনের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। ডায়ালাইসিসের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং সরকারি ভর্তুকি মূল্যে আগের সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবিতে রোগী ও স্বজনরা এ আন্দোলন করছিল। শনিবার থেকে স্যান্ডরের ডায়ালাইসিস সেন্টারের সামনে ও হাসপাতালের অভ্যন্তরে আন্দোলন করে আসলেও মঙ্গলবার তারা রাস্তায় নেমে আসে। এসময় রাস্তা থেকে সরাতে চড়াও হওয়ার পাশাপাশি পুলিশ মারধর করেছে বলে অভিযোগ আন্দোলনরত রোগী ও স্বজনদের। এ ঘটনায় আন্দোলনকারীদের কয়েকজন আহত হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
যদিও মামলায় পুলিশের উপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। সড়ক অবরোধ, পুলিশের উপর চড়াও এবং সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ এনে ওইদিন (মঙ্গলবার) রাতেই পাঁচলাইশ থানা পুলিশ এ মামলা করেছে। মামলার বাদি পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান। মো. মোস্তাকিম নামের একজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়। নাম উল্লেখ করা একমাত্র আসামি মো. মোস্তাকিমকে ঘটনাস্থল থেকে মঙ্গলবার দুপুরেই আটক করেছিল পুলিশ। গতকাল তাকে আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আটক মোস্তাকিম নিয়মিত ডায়ালাইসিস সেবা নেয়া এক রোগীর ছেলে বলে জানা গেছে।
মামলা দায়ের ও রিমান্ড চাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দীন মজুমদার। আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও এবং মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি নাজিম উদ্দীন মজুমদার আজাদীকে বলেন, আমরা কাউকে মারধর করিনি। ওই যুবকই আমাদের উপর চড়াও হয়েছে। পুলিশের গায়ে হাত তুলেছে। তাদের আমরা রাস্তা থেকে সরাতে গেলে ‘পুলিশ মহিলাদের গায়ে হাত দিয়েছে’ বলে ওই যুবক হঠাৎ উসকানি দিতে শুরু করে। ওই যুবকই নেতৃত্ব দিচ্ছিল। এজন্য তাকে আমরা আটক করি। কিন্তু আমরা কোনো রোগীকে ধরিও নাই, মারিও নাই। একজনকে ধরলেও রোগী জানার পর দ্রুত হইল চেয়ারে করে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।
এ ঘটনায় নিজেদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত আছেন দাবি করে ওসি বলেন, ওদের কেউ আহত নাই। আমাদের কয়েকজন ইনজুরড আছে। এ ঘটনায় জড়িত ও ইন্ধনদাতা হিসেবে মোস্তাকিমকে আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (আজ) রিমান্ড শুনানির কথা আছে বলেও জানান ওসি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
আন্দোলনকারদের দাবি- ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে চমেক হাসপাতালের মূল গেইটের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। আসাদুল হক নামে এক রোগী সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের মারধর করেছে। তিনি নিজেও পুলিশের মারধরের শিকার হয়েছেন। ওসির নেতৃত্বে পুলিশ সড়ক থেকে তাদের টেনেহিঁচড়ে তুলে দেন বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের।
নতুন দশটি মেশিন পৌঁছেছে চমেক হাসপাতালে : সংকট নিরসনে জরুরিভাবে আরো তিনটি ডায়ালাইসিস মেশিনে সেবা চালু করেছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের নিচতলায় কোভিড জোনে (করোনা ইউনিটে) থাকা এই তিনটি মেশিন গতকাল থেকে চালু করা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে জরুরিভিত্তিতে চাওয়া নতুন দশটি ডায়ালাইসিস মেশিন হাসপাতালে পৌঁছে গেছে।
গতকাল সকালে এসব মেশিন হাসপাতালে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তিনি আজাদীকে বলেন, হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে চারটি মেশিনে সেবা চালু রয়েছে। কোভিড জোনে তিনটি মেশিন বসানো ছিল। বুধবার থেকে ওই তিনটি মেশিনে আমরা সেবা চালু করে দিয়েছি। আর হাসপাতালে সরকারি পর্যায়ে সেবার পরিসর বাড়ানোর লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে আমরা জরুরি ভিত্তিতে দশটি ডায়ালাইসিস মেশিন চেয়েছিলাম। বুধবার সকালেই নতুন দশটি মেশিন হাসপাতালে পৌঁছে গেছে। বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে এসব মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।