চট্টগ্রাম বিভাগে ৪২ সেরা করদাতাকে সম্মাননা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২১ at ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের চার কর অঞ্চলের অধীন ২০২০-২০২১ করবর্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও ৪-জেলা কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৪২ জন সেরা করদাতাকে সম্মাননা দিয়েছে আয়কর বিভাগ। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে এ সম্মাননা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও ব্যক্তিগত কারণে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, আমরা ভ্যাট দেব, ট্যাক্স দেব তবে সেটি যেন হয়রানিমুক্ত হয়। আমরা ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছায় ভ্যাট-ট্যাক্স দেব সেখানে ভীতি কেন থাকবে? আরেকটি বিষয় হল- আমরা শুধুমাত্র যারা ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছি, কর বিভাগ থেকে বারবার তাদেরকে ভ্যাট ট্যাক্স দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। এ বছর কত দিচ্ছি, আগামীতে ট্যাক্স বেশি দিচ্ছি কিনা সেই হিসাব রাখা হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখছি, ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোর প্রতি কারো নজর নাই। আমি এই অনুষ্ঠান থেকে প্রস্তাব করব- বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় ট্যাক্সের জন্য একটি অফিস দেয়া হোক এবং সেখানে পর্যাপ্ত লোকবল দেয়া হোক। তাহলে এই করের আওতা বাড়ানো যাবে। আমাদের দেশে তিনকোটি মানুষ এখন ট্যাক্স দেয়ার ক্ষমতা রাখে। বর্তমানে গ্রামীণ অর্থনীতি শহরের অর্থনীতির চেয়ে অনেক ভাল। আপনারা যদি চিন্তা করেন, এই উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাউজান এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া কিংবা সাতকানিয়ার মতো উপজেলায় এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যারা ৪০-৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করেন। তারা কিন্তু ট্যাক্সের আওতায় নাই। তাদেরকে যদি ট্যাক্সের আওতায় আনা যায়, তাহলে ট্যাক্স আদায় বাড়বে। স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪ এর কর কমিশনার এম এম ফজলুল হক বলেন, উন্নত দেশ হতে চাইলে নাগরিকদের উন্নত মূল্যবোধ থাকতে হবে। নাগরিকরা উন্নত মূল্যবোধ সম্পন্ন হলে কর নিয়ে আর সমস্যা হবে না। প্রতিটি উন্নত দেশের সবচেয়ে আধুনিক আইন হচ্ছে কর আইন। আমরাও কর আইনকে সবচেয়ে আধুনিক করেছি। এই কারণে স্বাধীনতা পরবর্তী বাজেটে করের অবদান যেখানে ২০০ কোটি টাকা ছিলো- সেখানে এখন ৩ লাখ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. আকবর হোসেন বলেন, দেশের উন্নয়নের চাকা গতিশীল করতে অবশ্যই ট্যাঙ দিতে হবে। সভ্য সমাজে ট্যাঙ একটি অপরিহার্য বিষয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা করেছে। এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে ট্যাঙ দেয়ার বিকল্প নাই।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর কর কমিশনার ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৩ এর কমিশনার মাহমুদুর রহমান, কর অঞ্চল-২ এর কমিশনার একেএম হাসানুজ্জামান, কর আপিল অঞ্চলের কর কমিশনার মঞ্জুমান আরা বেগম এবং কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ।
সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম জেলা, কঙবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা থেকে মোট ১২ জন দীর্ঘ সময় ধরে করদাতা, ১৮ জন সর্বোচ্চ করদাতা, ৬ জন মহিলা করদাতা এবং ৬ জন তরুণ পুরুষ করদাতাকে (৪০ বছরের নিচে) সম্মাননা দেয়া হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে ২০২০-২১ করবর্ষের দীর্ঘ সময় ধরে করপ্রদানকারী সম্মাননা নেয়া দু’জন হলেন- মো. আলী মেহের এবং সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান। এছাড়া সর্বোচ্চ করপ্রদানকারী ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পাওয়া তিনজন হলেন- মো. কামাল, মো. নাদের খান এবং মো. নাছির উদ্দিন। সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী মহিলা করদাতা হিসেবে সম্মানানা পেয়েছেন জেবুন নাহার ইসলাম। এছাড়া তরুণ পুরুষ (৪০ বছরের নিচে) সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী ক্যাটগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন আসিফ মাহমুদ।
চট্টগ্রাম জেলা থেকে দীর্ঘ সময় ধরে করপ্রদানকারী করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন- হাজী বজল আহমদ এবং মো. নুরুল ইসলাম। সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন- ইঞ্জিনিয়ার মো. মহসিন, দেলোয়ার হোসেন এবং মো. মাইনুল হাসান। সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী মহিলা করদাতার সম্মাননা নিয়েছেন-জান্নাতুল মাওয়া এবং তরুণ পুরুষ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা সম্মাননা নেন- মো. আনোয়ার হোসেন।
কঙবাজারের দীর্ঘ সময় ধরে কর প্রদানকারী ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পাওয়া দুজন হলেন- হাজী মোহাম্মদ ছিদ্দিক এবং মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম। এছাড়া সর্বোচ্চ তিন করদাতা হিসেবে সম্মাননা পেলেন- মোহাম্মদ আইয়ুব, ইঞ্জিনিয়ার মো. আলমগীর এবং মুহাম্মদ আবু কাউসার। সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী মহিলা করদাতা ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন রেহেনা বেগম এবং ৪০ বছর বয়সের নিচে তরুণ পুরুষ হিসেবে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন মো. জিয়াবুল। অন্যদিকে রাঙামাটি জেলার দীর্ঘ সময় ধরে কর প্রদানকারী ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন-সুভাষ সাহা এবং মো. লোকমান হাকিম (হীরা)। এছাড়া সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী সম্মাননা পাওয়া তিনজন হলেন, লোকমান হোসেন তালুকদার, মো. রফিকুল আলম লিটন এবং সুলতান কামরুউদ্দিন। সর্বোচ্চ করপ্রদানকারী মহিলা করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন- গীতা দে এবং তরুণ পুরুষ ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা নেন মো. সাখাওয়াত হোসেন সোহেল।
খাগড়াছড়িতে দীর্ঘ সময় ধরে কর প্রদানকারী ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পাওয়া দুজন হলেন- মো. আবু তালেব এবং রঞ্জিত কুমার পালিত। এছাড়া সম্মাননা নেয়া সর্বোচ্চ করপ্রদানকারী তিনজন হলেন- এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা, মো. নুর আলম এবং মোসাম্মৎ ফরিদা আক্তার। সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী মহিলা করদাতা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন- বিউটি দেব এবং তরুণ পুরুষ ক্যাটগরিতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেলেন মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদশা।
বান্দরবানে দীর্ঘ সময় ধরে করপ্রদানকারী ক্যাটাগরিতে সম্মাননা নেন- কাজল কান্তি দাশ এবং মোহাম্মদ নুরুল আবছার। এছাড়া সর্বোচ্চ সম্মাননা পাওয়া তিনজন সর্বোচ্চ করদাতা হলেন- মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ নুরুল আবছার এবং রাজু বড়ুয়া। এছাড়া সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী মহিলা করদাতা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন- হুরে জান্নাত হুরাইন এবং তরুণ পুরুষ ক্যাটগরিতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা নেন সায়েদ হোসেন মো. জুয়েল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরো সহজ হচ্ছে সঞ্চয়পত্র ক্রয় বিক্রয় কার্যক্রম
পরবর্তী নিবন্ধ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির দাবি চেম্বার সভাপতির