চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ

আধুনিকায়ন হয়নি এক যুগেও, ট্রেন চালাতে ভয় পান চালকরা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

রেললাইনের সম্প্রসারণসহ নতুন নতুন লাইন নির্মাণে দেশব্যাপী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা চট্টগ্রাম-দোহাজারী ৪৭ কিলোমিটার রেললাইন দীর্ঘ বছরেও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এর মধ্যে চলে গেছে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়।
দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ট্রেন চালাতে ভয় পাচ্ছেন চালকরা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ থেকে জানা গেছে, এখন সকালে একটি ডেমু ট্রেন পটিয়া পর্যন্ত এবং বিকেলে একটি ডেমু ট্রেন দোহাজারী পর্যন্ত যায়।
রেলওয়ে উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার কমতি নেই। নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। চলমান আছে অর্ধশত প্রকল্প। সেই সঙ্গে আছে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনাও। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে নির্মাণাধীন কক্সবাজার লাইনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দ্রুত গতির ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। প্রতি বছরই বিভিন্ন রুটে নামছে নতুন নতুন আন্তঃনগর ট্রেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে। তবে ব্যাপক উন্নয়নের মধ্যেও অবহেলিত চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান শাখা লাইন চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইন।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট লাইনে চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চলাচল করে। প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করলেও এই লাইনটির অবস্থাও ভালো নয় বলে জানান এক ট্রেন চালক। তিনি আজাদীকে জানান, আমি নিয়মিত এই দুই রুটে ট্রেন নিয়ে আসা-যাওয়া করি। দোহাজারী রুটে তো এখন লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুটি ডেমু ট্রেন চলাচল করে। একটি পটিয়া যায়, অপরটি যায় দোহাজারী পর্যন্ত। এই রুট দিয়ে ট্রেন নিয়ে যেতে সবসময় শঙ্কায় থাকি। প্রাণ হাতে নিয়ে যেতে হয়। অনেক জায়গায় ২০ কিলোমিটার গতিতেও ট্রেন চালানো যায় না। দোহাজারী রুটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার জ্বালানী তেলসহ ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই রেলপথের বেহাল অবস্থা। বিভিন্ন স্থানে প্রায় সময়ই খোলা থাকে ফিশপ্লেট, ক্লিপ, হুক, নাটবল্টুসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ। স্লিপারের অবস্থাও নাজুক। এই রুটের একজন নিয়মিত ট্রেন চালক জানান, পুরো লাইনজুড়ে কোথাও পর্যাপ্ত পাথর নেই।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জান আলীহাট থেকে শুরু করে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত বেশিরভাগ এলাকায় পাথরশূণ্য অবস্থায় আছে স্লিপারগুলো। কোন কোন এলাকায় নাটবল্টুও খোলা। অনেক এলাকায় স্লিপারও নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে রামু, কঙবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের বর্তমানে ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানিয়েছেন। অথচ স্থানীয়রা বলছেন, কঙবাজারমুখী রেললাইন চালুর আগে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত নাজুক রেলপথের উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। এ পথেই রয়েছে শত বছরের পুরনো কালুরঘাট রেলসেতু। জরাজীর্ণ এ সেতুটি জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। অবশ্য নতুন করে মেরামতের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্তৃপক্ষ। তারা বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের দ্বারস্থ হয়েছেন সেতুটি মেরামতের জন্য। বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা ইতোমধ্যে সরেজমিনে সেতু পরিদর্শন করেছেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে কালুরঘাট সেতুটি মেরামত করা হবে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ব্রিজ) আহসান জাবির।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধমোটরসাইকেল আরোহী ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু