চট্টগ্রাম টিভির ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার এবং একজন কীর্তিমান হাছান মাহমুদ

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী | রবিবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

আমাদের অনেক কিছু নেই, সময়ের ব্যবধানে আমরা অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি; আমাদের নেতা ছিলেন মান্নান ভাই, হারুন ভাই, কায়সার ভাই, বাবু ভাই (আখতারুজ্জামান চৌধুরী)- তাঁদেরকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের চট্টগ্রামের মন্ত্রী ছিলেন মান্নান ভাই, মোশাররফ ভাই; মান্নান ভাই মন্ত্রী শুধু নয়, জীবনেও নেই, মোশাররফ ভাই বিদ্যমান থাকলেও বিপুল কর্মময় জীবনের ভারে অধুনা আনত। আমাদের মেয়র ছিলেন মহিউদ্দিন ভাই, সিটি কর্পোরেশনে প্রথম আওয়ামী মেয়র, সর্বশেষ তিনিও আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। রাষ্ট্রদূত ছিলেন কায়সার ভাই, আলম ভাই (নুরুল আলম চৌধুরী), তাঁরাও কোথায় হারিয়ে গেলেন; প্রাজ্ঞ, প্রবীণ নেতা ছিলেন ওহাব সাহেব (এমএ ওহাব-হাটহাজারী), ইউসুফ ভাই (এসএম ইউসুফ), ইদরিস ভাই (ইদরিস আলম), আশরাফ খান- তাঁরাও নেই, চলে গেছেন আমাদের রিক্ত, নিঃস্ব করে। এমপি ও সাহসী নেতা ছিলেন ইসহাক মিয়া, সুলতান ভাই (সুলতান উল কবির চৌধুরী, যিনি ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি কোর্ট বিল্ডিং-এ ওঠার পথে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আক্রান্ত জননেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িতে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ছুটে আসা বুলেট বৃষ্টি নিজের শরীর দিয়ে আড়াল করতে চেয়েছিলেন) এবং বাদল ভাই (মঈনউদ্দিন খান বাদল)- হারিয়েছি তাঁদেরও; বুক ফেটে কান্না আসে তাঁদের কথা মনে হলে।
কিন্তু এই নিঃসীম শূন্যতার মাঝেও আমাদের একজন মন্ত্রী আছেন, তিনি ড. হাছান মাহমুদ; যিনি আমাদের মন্ত্রীর অভাব পূরণ করেছেন; একই সঙ্গে এমপি ও নেতা তিনি-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আপতত তিনিই আমাদের অবলম্বন, নির্ভরতার প্রতীক। তাঁকে ঘিরেই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক শূন্যতা কানায় কানায় ভরে উঠেছে। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশই হাছান মাহমুদের বাকপটুতায় অবাক বিস্ময়ে অপলক তাকিয়ে রয়। তাঁকে নিয়ে আমার অন্য এক লেখায় আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকও হতে পারতেন হাছান ভাই। টেলিভিশনের পর্দায় ভাষণরত হাছান মাহমুদের বক্তৃতা শুনে শুনে আমি কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। তাঁর স্বরক্ষেপণের অদ্ভূত মনোহর ভঙ্গি, যুক্তির জাল বিস্তারের নৈপুণ্য, শব্দ নির্বাচনের কুশলতা, উপমা ও বিশেষণ, ব্যঙ্গ বিদ্রুপের তীক্ষ্ণ বান নিক্ষেপে প্রতিপক্ষকে মাটিতে শুইয়ে দেয়ার ক্ষমতা তিনি কখন কোথায় অর্জন করলেন অনেক ভেবেও আমি তার কোন কিনারা করতে পারি না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের ভাইও সুন্দর বক্তৃতা করেন। তিনি ষাট ও সত্তরের দশকের ছাত্রনেতা, তখন থেকেই বক্তৃতা করতে করতে পাকা হয়ে উঠেছেন, পরে সাংবাদিকতাও করেছেন। সুতরাং তাঁর বক্তৃতায় বাগ্মিতার প্রমাণ পেয়ে আমরা অবাক হই না। কিন্তু হাছান ভাই আরো পরবর্তীকালের ছাত্রনেতা; তিনি যখন আশির দশকের শেষে ও নব্বইয়ের দশকের আরম্ভকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসীন হচ্ছেন, তখন থেকে আমি তাঁকে চিনি। আমি তখন দৈনিক পূর্বকোণের বার্তা সম্পাদক। তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের অমিত সম্ভাবনা লক্ষ্য করে তাঁর নেতৃত্বের বিকাশের জন্য গ্রুমিংও আমি করেছি। কিন্তু বর্তমানের হাছান মাহমুদকে দেখে আমি অবাক না হয়ে পারি না। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রতিষ্ঠালাভ, তাঁর আশ্চর্য সাংগঠনিক দক্ষতা, অদ্ভূত মাদকতাময় বা আবেশমাখা বক্তৃতার জাদুতে আপনা থেকেই আমি নতশির হয়ে পড়ি তাঁর ব্যক্তিত্বের সম্মোহনে। কাদের ভাই অসুস্থ, আমরা চাই আরো বহুদিন তিনি নৌকার হাল ধরে আওয়ামী লীগকে নিরাপদ বন্দরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হন। তাঁর অসুস্থ শরীর তাঁকে কতদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে দেবেন সেটা আল্লাই জানেন। তবে আমাদের প্রিয় নেত্রী মাননীয়া শেখ হাসিনা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, কাদের ভাইয়ের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে উঠে আসছেন হাছান ভাই।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সম্প্রচারের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং সময়সীমা বৃদ্ধি করতে করতে এখন ২৪ ঘণ্টায় উন্নীত করেছেন। হাছান ভাইয়ের এ এমন এক কীর্তি, যা’ চেঁচিয়ে বলতে হয়। চট্টগ্রামের জন্য অসামান্য এক অর্জন। পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম থেকে দু’জন তথ্যমন্ত্রী ছিলেন- যুক্তফ্রন্টের আমলে মাহমুন্নবী চৌধুরী এবং আইয়ুবের আমলে ফজলুল কাদের চৌধুরী। বাংলাদেশ আমলে ড. হাছান মাহমুদই একমাত্র রাজনৈতিক নেতা, যিনি প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছেন এবং এই দায়িত্বের মর্যাদা দিয়ে তিনি বিটিভি চট্টগ্রামের সম্প্রচারের সময় ২৪ ঘণ্টা করে দিয়েছেন। সেজন্য তিনি চট্টগ্রামবাসীর কিছু ধন্যবাদ বা অভিনন্দন পেতেই পারেন।
লেখক : সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক সংগঠক

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধনারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে জাতীয় মহিলা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে