চট্টগ্রামে ৫৬ জঙ্গির মধ্যে শেষ হয়েছে চারজনের বিচার

বেশিরভাগ মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে জেএমবিসহ (জামায়াতুল মোজাহেদিন বাংলাদেশ) অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের ৫৬ সদস্যের মধ্যে শেষ হয়েছে মাত্র ৪ জনের বিচার। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। বেশিরভাগ মামলা আটকে আছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হামজা ব্রিগেডের তিন মামলার বিচার কার্যক্রম। মামলা দায়েরের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো রায় ঘোষণা হয়নি। আটকে আছে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রমে। অথচ হালিশহর, হাটহাজারী ও বাঁশখালী থেকে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসস্ত্রসহ হামজা ব্রিগেডের জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করে।
এ অবস্থায় জঙ্গি মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিচার নিষ্পত্তি করতে পারলে জঙ্গিরা ভয় পাবে। তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবে।
চট্টগ্রাম কারাগার সূত্র জানিয়েছে, কারাগারের হেফাজতে বর্তমানে জঙ্গি রয়েছে ৫৬ জন। তাদের সকলকে একটি ভবনে রাখা হয়েছে। অন্য বন্দিদের সঙ্গে যাতে মেলামেশা করতে না পারে তাই এ ব্যবস্থা। সূত্র আরো জানায়, ৫৬ জঙ্গির মধ্যে ৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। তারা হলেন জেএমবি নেতা জাবেদ ইকবাল, শামীম হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও মনজুরুল মুরাদ। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় জাবেদ ইকবালের সাজা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত তাকে একশ বছরেরও বেশি সাজা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর আদালতে বোমা হামলা মামলার রায়েও তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। বাকি ৫২ জঙ্গির মামলা বিচারাধীন।
চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল (এ আদালতে চট্টগ্রামের জঙ্গির বিচার হয়) সূত্র জানায়, বর্তমানে এ ট্রাইব্যুনালে মোট ১০২টি জঙ্গি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মামলাই রয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। কিছু রয়েছে যুক্তিতর্ক, শুনানি পর্যায়ে। আবার কিছু রয়েছে রায় ঘোষণা পর্যায়ে।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, হামজা ব্রিগেড ছাড়াও জেএমবি, নব্য জেএমবি, হিজবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নামের জঙ্গি সংগঠনগুলোরও মামলা রয়েছে সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মামলা হচ্ছে জেএমবি ও নব্য জেএমবির। এর পরের অবস্থানে রয়েছে হিজবুত তাহরীর। হরকাতুল জিহাদ সদস্যদের রয়েছে ৫টি মামলা।
ট্রাইব্যুনালের পিপি মনোরঞ্জন দাশ আজাদীকে বলেন, দীর্ঘদিন এ মামলায় বিচারক ছিলেন না। বিচারক না থাকাটা অবশ্যই সমস্যার। তবে এখন বিচারক সংকট নেই। নিয়মিত মামলার শুনানি হচ্ছে, সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে। এমনকি যুক্তিতর্ক, শুনানিও নিয়মিত হচ্ছে। বর্তমানে তিনটি মামলায় রায় ঘোষণার জন্য তারিখ রয়েছে। এর মধ্যে সদরঘাটের একটি মামলার রায় হবে আগামী ১২ এপ্রিল। এ মাসে চান্দগাঁও ও কোতোয়ালীর একটি করে মামলার রায়ও ঘোষণা হবে। এ দুটি মামলার আসামি আইনজীবী ও ইঞ্জিনিয়ার। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
উচ্চ আদালতের বিচারক রুহুল কুদ্দুস সম্প্রতি ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গিদের বিচারে এখন আগের তুলনায় গতি পাবে। এখন ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলবে বিচার কার্যক্রম। গতি কীভাবে বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিতেই তাঁর এ পরিদর্শন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমাদের প্রকৃত কাজ হচ্ছে জঙ্গিসহ অন্য বন্দিদের নিরাপদ হেফাজতে রাখা। আমরা সেই কাজটি সততার সাথে করছি। তাদের দিকে সারাক্ষণই নজর থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রতি ভবনে সপ্তাহে ১ দিন পরিদর্শন করি।
তিনি জানান, জঙ্গিরা এক ভবনেই থাকে। খাওয়া-দাওয়ার সময় শুধু অন্য বন্দিদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। সেখানেও আমাদের স্টাফ থাকে। তাদের দ্বারা যাতে অন্য কোনো বন্দি বিপথে যেতে না পারে সেদিকে নজর থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে আগুন আতঙ্ক ।। রোগী-স্বজনদের হুড়োহুড়ি
পরবর্তী নিবন্ধতিনদিন পর নিখোঁজ চীনা নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার