চট্টগ্রামে এবার আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার কোটি টাকা। আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা না হলেও চট্টগ্রামে এই আয়কর প্রদানকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আয়কর প্রদান করছেন। গত পহেলা নভেম্বর থেকে নগরীর ইনকাম ট্যাক্স অফিসের চারটি জোনে করদাতাদের কাছ থেকে রিটার্ন এবং চেক গ্রহণ করা হচ্ছে। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে নিয়মিত করদাতাদের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে ৩ হাজারেরও বেশি নতুন করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে চারটি করাঞ্চলের আওতায় নয় লাখের মতো টিন নম্বরধারী রয়েছেন। কিন্তু টিন নম্বর নিলেই একজন মানুষকে রিটার্ন দাখিল করতে হয় না। নির্দিষ্ট পরিমাণের ইনকাম না থাকলে কাউকে ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করতে হয় না। যারা ইনকাম ট্যাঙ প্রদান করেন কেবল তাদেরকেই নিজের আয় ব্যয়ের হিসাব দেখিয়ে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। চট্টগ্রামের চারটি জোনে সাড়ে চার লাখের মতো মানুষ আয়কর প্রদান করেন। এবার চট্টগ্রামের চার জোনের আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। বিশাল অংকের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রামের চারটি জোনই নানাভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, এই আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে গত কয়েকবছর ধরে আয়কর মেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। তবে কোভিড পরিস্থিতিতে গত বছরও মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারও মেলার আয়োজন নেই। তবে নগরীর আগ্রাবাদস্থ ইনকাম ট্যাক্স অফিসে উৎসবমুখর পরিবেশে আয়কর গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা নেয়া হবে। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রামের চারটি জোনে ১৭ হাজার কোটি টাকা আয়কর আদায় করা হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি জোন এবং সার্কেলে কাজ চলছে।
মেলা না হলেও আয়কর রিটার্ন জমা নেয়ার কার্যক্রমকে একটি উৎসবের আমেজ দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, গত পহেলা নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম আয়কর অফিসের সামনে বিশেষ বুথ তৈরি করে রিটার্ন গ্রহণ করা হচ্ছে। চারটি কর অঞ্চলই নিজেদের জোনের আওতাধীন করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সুযোগ করে দিচ্ছে। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে ১৯ হাজার ১৩৫ জন মানুষ আয়কর সেবা নিয়েছেন। এদের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছেন ৭ হাজার ৮৬৮ জন। এসব রিটার্নের বিপরীতে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৮৬ হাজার ৬২৪ টাকার ট্যাঙ আদায় হয়েছে। গত এক সপ্তাহে নিয়মিত করদাতাদের পাশাপাশি ৩ হাজার ১৮৩ জন নতুন করদাতা ই-টিআইএন গ্রহণ করেছেন।
বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করা যাবে। তাই অনেকেই রয়ে সয়ে রিটার্ন দাখিল করতে চাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে রিটার্ন দাখিলের মাত্রা আরো অনেক বেড়ে যাবে বলেও সূত্রগুলো উল্লেখ করেছে।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-১ এর কমিশনার সৈয়দ আবু দাউদ গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা করদাতাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। যে কোনো মানুষ ইনকাম ট্যাঙ সংক্রান্ত যে কোনো প্রয়োজনে আমাদের বুথে আসলে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হচ্ছে। কাউকে কোনো ধরনের হয়রানির সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্য তৈরি হয়ে রয়েছেন। যে কেউ ইচ্ছে করলে এই সেবা নিতে পারেন।
তিনি চট্টগ্রামের চারটি জোনের এবার আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করে বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতি কিছুটা সংকট সৃষ্টি করলেও আশা করি আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হবে।
উল্লেখ্য, কোনো পুরুষ করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ টাকার বেশি হয় এবং কোনো মহিলা, তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয়, প্রতিবন্ধী করদাতার আয় বছরে যদি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয় তাহলে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে উক্ত করসীমা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে কোনো ট্যাঙ দিতে হয় না, তবে শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে হয়। আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেই কর দিতে হয় না, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী যখন করসীমার উপর আয় করেন তখন সে আয়ের উপর পৃথক পৃথক স্ল্যাবে পৃথক পৃথক হারে নির্ধারিত ট্যাঙ প্রদান করে থাকেন।
পুরো বছর জুড়ে আয়কর এবং অগ্রিম আয়কর নেয়া হয়। তবে বিগত অর্থবছরের আয়কর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে আয়কর প্রদান না করলে আয়কর অধ্যাদেশ অনুষায়ী শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।










