চট্টগ্রামে সুফল পাচ্ছে না চার লক্ষ যানবাহন

ডিজিটাল নম্বর প্লেট

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

চুরি-ছিনতাই-অপহরণ ঠেকাতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) যানবাহনে ডিজিটাল নম্বর প্লেট বসানোর প্রকল্প শুরু করে ২০১২ সালে। ধীরে ধীরে সব ধরনের যানবাহনে রেট্রো রিফ্লেক্টিভ নম্বর প্লেট থাকলেও মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ওই নম্বর প্লেটে অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত করা হয় আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) নামের ট্রেকিং ডিভাইস। আবার প্রাইভেট কার কিংবা জিপের সামনের গ্লাসে লাগানো হয় আরএফআইডি চিপযুক্ত বিশেষ স্টিকার। কিন্তু ২০১৫ সালে বিআরটিএ জরিপ কার্যক্রম চালালেও কার্যকর হয়নি আরএফআইডি ট্যাগ মেশিন বসানোর কাজ। ফলে দীর্ঘ ৯ বছরেও এর সুফল পাচ্ছে না চট্টগ্রামের প্রায় চার লক্ষ যানবাহন। যার মধ্যে আড়াই লক্ষ মোটর সাইকেল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হরহামেশাই ঘটছে মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার না দেওয়ায় বিআরটিএ-এর সার্ভারে থাকা গাড়ির তথ্য সম্পর্কে জানতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রয়োজনীয় জরুরি মুহূর্তে তথ্য না পাওয়ায় গাড়ি চুরির মতো অপরাধ দমনে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। তবে নিজস্ব সিডিএমএস++ (ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) অ্যাপসের মাধ্যমে গাড়ি চুরি রোধে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিআরটিএ বলছে, রাজধানী ঢাকার বেশ কিছু স্পটে আরএফআইডি ট্যাগ মেশিন বসানো হলেও চট্টগ্রামে বসানো হয়নি। তবে চট্টগ্রামে এ মেশিন বসানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীরা যানবাহন ব্যবহার করছে। চুরি ও ছিনতাইসহ হত্যার ঘটনায় অপরাধীরা প্রাইভেটকার ও মোটর সাইকেল প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে। এসব অপরাধ দমনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে ডিজিটাল নম্বর প্লেট। এই ভাবনা থেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দাবির প্রেক্ষিতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রকল্প হাতে নেয় বিআরটিএ। তবে প্রশ্ন উঠেছে, ডিজিটাল নম্বর প্লেটের প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রায় আড়াই লাখ মোটর সাইকেল, ৫০ হাজারের মতো প্রাইভেট গাড়ি, ৫০ হাজারের মতো সিএনজি অটোরিকশাসহ চার লাখের মতো নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, গাড়ি চুরি গেলে দ্রুত খুঁজে বের করাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করে ২০১২ সালে রেট্রো রিফ্লেক্টিভ নম্বর প্লেট (ডিজিটাল নম্বর প্লেট) ও আরএফআইডি স্টিকার দেওয়া শুরু করে বিআরটিএ। নম্বর প্লেট ও স্টিকার বাবদ যানবাহন অনুযায়ী ৪ হাজার ৬২৮ ও ২ হাজার ২৬০ টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করে বিআরটিএ। এসব স্টিকার রিড করার জন্য আলাদা আরএফআইডি ট্যাগ মেশিন প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু দীর্ঘ নয় বছরেও চট্টগ্রামে এ ধরণের মেশিন সংযোজন করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেসব এলাকায় আরএফআইডি ট্যাগ মেশিন বসানো হয়, ওই সব এলাকাতে স্টিকার ও চিপযুক্ত মোটর কার কিংবা বাইক প্রবেশ করলেও তার মেশিনে ধরা পড়ে। এতে চুরি হওয়া গাড়ির গতিপথ ও তথ্য পেতে সুবিধা হয়।’ এ কর্মকর্তা বলেন, ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে মহানগরীতে আরএফআইডি ট্যাগ মেশিন বসানোর জন্য জরিপ করা হয়েছিল। তখন মহানগরীতে ১২টি স্থানও চিহ্নিত করা হয়েছিল। পুরো কার্যক্রমটি ঢাকা থেকে মনিটরিং করা হয়। কিন্তু জরিপ পরবর্তী এখনো পর্যন্ত মেশিনগুলো স্থাপন করা হয়নি।
এদিকে গত ৬ নভেম্বর ডবলমুরিং এলাকায় বাসার নিচ থেকে চুরি হয় রহিম উল্লা নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরিজীবীর মোটর সাইকেল। ২৯ নভেম্বর একই এলাকা থেকে চুরি হয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেলের বাইকটিও। ভুক্তভোগীরা বলছেন, চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোটর সাইকেল খোয়া গেলে দ্রুত উদ্ধারের জন্যই ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগানো হয়। কিন্তু গাড়ির মালিক সেই সুফল পাচ্ছেন না। কিন্তু ডিজিটাল নম্বর প্লেট দেওয়ার জন্য বিআরটিএ প্রায় ৫ হাজার টাকার মতো ফি নিয়ে নেয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মো. শামসুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘গাড়ি চুরির বিষয়ে পুলিশের সিডিএমএস প্লাস প্লাস অ্যাপসে ‘লস্ট এন্ড ফাউল’ নামে একটি অপশন রয়েছে। সারাদেশে বিআরটিএ নিবন্ধিত যেসব গাড়ি চুরি হয়, ওই অপশনে সবগুলোর তথ্য থাকে। সেক্ষেত্রে দেশের যেকোনো স্থানে চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার হলে ওই অ্যাপসের মাধ্যমে তা সনাক্ত করা হয়। মোটর সাইকেল চুরির বিষয়টিও এভাবে সনাক্ত করা হয়।’
বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘গাড়িতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট হিসেবে এখন রেট্রো রিফ্লেক্টিভ নম্বর প্লেট এবং আরএফআইডি স্টিকার লাগানো হয়। এখানে গাড়ির যাবতীয় তথ্য থাকে। এসব তথ্য পেতে আরএফআইডি ট্যাগ মেশিন ব্যবহার করতে হয়। তবে চট্টগ্রামে এ ধরণের মেশিন এখনো স্থাপন করা হয়নি। এসব মেশিন লাগানোর বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়াও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধশিকলবাহা থেকে দেড় লাখ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ২