আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস
জাহেদুল কবির
চট্টগ্রামে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ার্ড ও বহির্বিভাগ মিলে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ২০ হাজার রোগী। এর মধ্যে নতুন আক্রান্ত রোগী ছিল ৬ হাজারের অধিক।
তবে রোগী বাড়ার সাথে সাথে চমেক হাসপাতালে ক্যান্সার ওয়ার্ডের সক্ষমতা অতীতের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে। বিশেষ করে বর্তমানে প্রতিদিন ওয়ার্ডে গড়ে ১৫০ জন রোগী রেডিওথেরাপি নিতে পারছেন। কেমোথেরাপি নিচ্ছেন প্রতিদিন গড়ে ৬০ জন রোগী। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৫ জন নারী জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্রেকিথেরাপি নিতে পারছেন।
ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, আগের চেয়ে সক্ষমতা বাড়লেও ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা থেকে এখনো অনেকাংশে পিছিয়ে চমেক হাসপাতাল। ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসার জন্য মলিকিউলার ল্যাব স্থাপন জরুরি। এছাড়া মাইক্রোওয়েভ অ্যাভলেশন মেশিন, বোনমেরু ট্রান্সপ্লান্টেশন সেন্টার, অনকো ইমেজিং, ইন্টারভেনশনাল প্যাথলজিস্ট, অনকো নার্স প্রয়োজন। এছাড়া ওয়ার্ডে এখন যে পরিমাণ রোগীর চাপ, আরো বেশি সংখ্যক কনসালটেন্টও দরকার। এসব কিছুর সমন্বয় করা সম্ভব হলে চট্টগ্রামে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, খুসখুসে কাশি হওয়া, গলার স্বর বসে যাওয়া, খাওয়ার সময় খাবার আটকে গিলতে সমস্যা হওয়া, অস্বাভাবিকভাবে বুক জ্বালাপোড়া করা, শরীরের কোথাও চাকা চাকা অনুভূত হওয়া, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হওয়া (মেয়েদের নিয়মিত ঋতুস্রাব ছাড়া সব রক্তক্ষরণই অস্বাভাবিক), এমন কিছু লক্ষণ শরীরে দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন ক্যান্সার আছে কিনা। তবে ক্যান্সার যদি প্রথম অবস্থায় শনাক্ত হয়, চিকিৎসা ভালোভাবে দেয়া যায়। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় পুরুষরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন মুখের ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে। মহিলারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সার, মুখ গহ্বর ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারে।
চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণের মধ্যে অসচেতনতা এবং জিনগত ব্যাপার থাকতে পারে। খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে ধূমপান, জর্দা, অ্যালকোহল, তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন ক্যান্সারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। এছাড়া পরিবেশগত দিকও এখানে জড়িত। দূষিত বাতাসও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ আজাদীকে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন শয্যা ৪৮টি। তবে আমাদের চিকিৎসা সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। একসময় ক্যান্সারের চিকিৎসায় রোগীদের ঢাকার ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। এখন সেটি হচ্ছে না। এতে রোগীদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। আমাদের ওয়ার্ডে রোগীরা রাত ১২টা পর্যন্ত রেডিওথেরাপি নিতে পারছেন। এছাড়া কেমোথেরাপির সক্ষমতাও বেড়েছে। অন্যদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে একমাত্র আমাদেরই ব্রেকিথেরাপি মেশিন আছে। এতে করে জরায়ু চিকিৎসায় আক্রান্ত রোগীরা ভালো সেবা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, চমেক হাসপাতালে নির্মাণাধীন ১৮০ শয্যার বিশেষায়িত ক্যান্সার ইউনিটের কাজ হয়তো আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হবে। নতুন নতুন অনেক সরঞ্জাম যুক্ত হবে। একইসাথে রোগীদের আরো অত্যাধুনিক উপায়ে চিকিৎসা দিতে পারব।
এদিকে গত বছরের নভেম্বরে যাত্রা শুরু হয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের। ১০০ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতালটিতে ইতোমধ্যে চালু হয়েছে রেডিওথেরাপি সেবা। এছাড়া কেমোথেরাপি সেবা চালু হয়েছে ২০১৫ সালে।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ বলেন, আমাদের ক্যান্সার সেন্টারে রোগীরা উন্নত সেবা পাচ্ছে। আমরা প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগীকে রেডিওথেরাপি দিচ্ছি। এছাড়া ৩০ জন রোগীকে কেমোথেরাপি দিচ্ছি। ভবিষ্যতে এখানে ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিক সরঞ্জাম যুক্ত হবে।
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস : আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আসুন ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য দূর করি’। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্তরোগ বিভাগ আজ রোববার সকাল ১১টায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এছাড়া রক্তরোগ ও রেডিওথেরাপি বিভাগের উদ্যোগে র্যালি হবে।