চট্টগ্রামে বিশ্বজয়ী হাফেজ তাকরিম : জান্নাতি সূরের মূর্ছনা

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি পৃথিবীর পবিত্র নগরী মক্কা শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১১টি দেশ ও ১৫৩ জন প্রতিযোগীকে হারিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সম্মান সমুন্নত করেছে ১৩ বছরের আশ্চর্য বালক হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম। ২৪ নভেম্বর নগরীর জুবলী রোডস্থ হোটেল টাওয়ার ইন্‌ ইন্টারন্যাশনাল মিলনায়তনে আল্লাহর কোরআনের অপূর্ব সূরের মোহনীয় মূর্ছনায় উপস্থিত সবাইকে নিয়ে গেছে অন্য জগতে-আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন সবাই। আল্লাহর কোরআন যে এত মধুর হতে পারে সেদিন জানান দিয়ে গেছে হাফেজ তাকরিম। তাকরিম যখন সূরা বনি ইসরাঈলের ৭৮ থেকে ৮১ নং আয়াত তেলওয়াত করছিল- তখন মিলনায়তনে ছিল অসংখ্য কোরআন প্রেমিক, নারী-পুরুষে ভরপুর। সবাই পিনপতন নীরবতায় তন্ময় হয়ে শুনছিলেন।

সূরা বনি ইসরাঈলের যে আয়াতগুলো তেলওয়াত করছিল তাকরিম তার সরল অনুবাদ হচ্ছে- ৭৮- ‘(হে নবী), সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত (সময়ের ভেতর) নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে এবং ফজরের নামাজ (ও তার কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি) যত্নবান হবে; অবশ্য ফজরের নামাজ (ও কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে ফেরেশতাদের) হাজিরা দেওয়ার সময়। ৭৯- রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ (নামাজ আদায় করো), এটা তোমার জন্য (ফরজ নামাজের) অতিরিক্ত, আশা করা যায় (এর দ্বারা) তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত মর্যাদায় পৌঁছে দিবেন। ৮০- তুমি বলো, হে আমার রব (যেখানে নিয়ে যাও), তুমি আমাকে সত্যের সাথে নিয়ে যাও এবং (যেখান থেকে বের করো) সত্যের সাথেই বের করো এবং তোমার কাছ থেকে আমার জন্যে একটি সাহায্যকারী (রাষ্ট্র) শক্তি প্রদান করো। ৮১- তুমি বলো, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে; অবশ্যই মিথ্যাকে বিলুপ্ত হতে হবে’।

হাফেজ তাকরিমের ওস্তাদ ঢাকা মিরপুরস্থ মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী-ঢাকা এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও গুলশান সোসাইটি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুর্তাজা হাসান ফয়েজি মাসুম এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে তাকরিমের এই অনন্য সফলতা। টাঙ্গাইলের এক অজপাড়াগাঁয়ের ছোট্ট ছেলেটি আজ সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে একজন সম্মানিত কোরআন প্রেমিক বিশ্বজয়ী হাফেজ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। তাকরিম যেমন বিশ্বকে আল কোরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দেখিয়ে দিয়েছে তেমনি এই পৃথিবীর জমিনে কোরআনের বিধানকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক মেহনত করা প্রত্যেক মোমিন নর-নারীর নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। রাউজানের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংগঠন রাউজান ক্লাবের এই আয়োজন যেন ছিল স্বপ্নের মতন।

দেড় মাসের কঠোর পরিশ্রমের ফলে বিশ্বজয়ী এই হাফেজকে চট্টগ্রামে আনা সম্ভব হয়েছে। মূলত হাটহাজারীর দ্বীনি প্রতিষ্ঠান আল-আমিন সংস্থার তিন দিনের ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে তাকরিমের আসার সিদ্ধান্তের সাথে রাউজান ক্লাবের এই কর্মসূচী একাকার হয়ে যায়। মহান রাব্বুল আ’লামিন যেন তাকরিমের এই কন্ঠকে আরো নিখুঁত ও পরিচ্ছন্ন করে দেন। এবং তার হায়াতকে আল্লাহ যেন দারাজ করে দেন।

বিশ্বজয়ী হাফেজ শুধু নয়, বিশ্বজয়ী ইসলামিক স্কলার হওয়ার অভীষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে কর্তৃপক্ষ কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকরিমের জন্যে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সীমিত রাখা তাদের অন্যতম পলিসি। যে পরামর্শটি বিদগ্ধ আলেমে দ্বীনগণের পক্ষ থেকে এসেছে। শুধুমাত্র মক্কায় নয়- ইরান, লিবিয়াতেও হাফেজ তাকরিম সারা বিশ্বের অনেকগুলো দেশকে টপকে প্রথম স্থানটি দখলে নিয়েছে। চট্টগ্রামবাসীর বড়ই সৌভাগ্য যে, বিশ্বজয়ের পর এই প্রথম চট্টগ্রামে কোনো ঘরোয়া প্রোগ্রামে অংশ নিল তাকরিম। আমরা আগামীতে তাকরিমকে একজন বিশ্ব ইসলামিক স্কলার হিসাবে দেখতে চাই।

শেষ আয়াতটি এত আবেগভরা কন্ঠে সে তেলাওয়াত করছিল- সবাইকে দেখা গেছে রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছতে। জানিনা আল্লাহর কোরআন এত সুন্দর- আল্লাহতায়ালা কতই না সুন্দর। শুধুমাত্র শেষটুকু বলতে চাই- ‘তোমরা তোমাদের মালিকের ক্ষমা পাওয়া কাজের প্রতিযোগিতা করো, আর সেই জান্নাতের জন্য (প্রতিযোগিতা করো), যার প্রশস্ততা আকাশসমূহ ও পৃথিবী সমান, এটি মুত্তাকিদের জন্যই প্রস্তুত রাখা হয়েছে’- সূরা আল-ইমরান- ১৩৩।

লেখক: সভাপতি-রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধপৃথিবীর সবচাইতে বড় শক্তি ভালোবাসা
পরবর্তী নিবন্ধরোকেয়ার দর্শন