চট্টগ্রামে বিএনপির ২৪ নেতার পরীক্ষা

নিজ এলাকায় থাকার নির্দেশ কেন্দ্রের আজ থেকে শুরু নয়দিনের কর্মসূচি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২২ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

নয়দিনের কর্মসূচিকে ঘিরে কেন্দ্রের পরীক্ষার মুখে পড়েছেন বিএনপি’র চট্টগ্রামের ২৪ নেতা। যারা দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে আছেন। আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থাকার নির্দেশনা আছে। অথচ বিগত সময়ে স্থানীয়ভাবে আয়োজিত বিএনপি’র কর্মসূচিতে বেশিরভাগ কেন্দ্র্রীয় নেতার
উপস্থিত না থাকার অভিযোগ আছে। এমন কি নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার আয়োজনেও উপস্থিত ছিলেন না। তাই এবার কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ সংসদীয় এলাকার কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন কী না তা পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি’র হাই-কমান্ড। ফলে একধরনের পরীক্ষার মুখেই পড়লেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ আগস্ট ৫০২ সদস্য বিশিষ্ট বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে স্থান পান চট্টগ্রামের ২৯ নেতা। এর মধ্যে মারা গেছেন একজন, পদত্যাগ করেন একজন এবং একজন জেলে আছেন। এ ছাড়া ঘোষিত কর্মসূচির মনিটরিং টিমে আছেন দুইজন। ওই হিসেবে চট্টগ্রামের বাকি ২৪ নেতাকে কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে।
এ বিষয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে গঠিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় মনিটরিং টিমের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক আজাদীকে বলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রত্যেককে নিজ নিজ এলাকার কর্মসূচিতে অবশ্যই অংশ নিতে হবে। বিষয়টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করবে।
জানা গেছে, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মধ্যে সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে স্থান পাওয়া চট্টগ্রামের একমাত্র ব্যক্তি হচ্ছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন চারজন। তারা হচ্ছেন এম মোর্শেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। এর মধ্যে এম মোর্শেদ খান ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর রাতে পদত্যাগপত্র জমা দেন মোর্শেদ খান। আবদুল্লাহ আল নোমানকে চলমান কর্মসূচি মনিটরিংয়ে ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় মনিটরিং টিমের প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন মীর নাছির। একই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলে সদস্য পদে চট্টগ্রাম থেকে আছে পাঁচজন। তারা হচ্ছেন সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, গোলাম আকবর খোন্দকার, রোজি কবির, ডা. সুকোমল বড়ুয়া ও এস এম ফজলুল হক। এর মধ্যে ২০১৮ সালে মারা যান ওয়াহিদুল আলম।
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কানেকশনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ মে গ্রেপ্তার হন আসলাম চৌধুরী। গত ছয় বছরের অধিক সময় ধরে কারাগারে আছেন তিনি।
উপদেষ্টার মধ্যে উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক পদেও দায়িত্বপালনকারী গোলাম আকবর খোন্দকারকে মীরসরাই, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলায়, এস এম ফজলুল হককে হাটহাজারী এবং ডা. সুকোমল বড়ুয়াকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় কর্মসূচি পালনের জন্য গঠিত টিমে রাখা হয়েছে।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে আছেন চট্টগ্রামের ছয়জন। তারা হচ্ছেন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূর-এ-আরা সাফা, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এম নাজিম উদ্দিন, পরিবার কল্যাণ সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ, সহ-গবেষণা ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী এবং সহ-গ্রাম বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদ। এর মধ্যে বেলাল আহমেদকে মীরসরাই, কাদের গণিকে ফটিকছড়িতে কর্মসূচি পালনের জন্য গঠিত টিমে রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য পদে ১২ আটজন। তারা হচ্ছেন সরওয়ার জামাল নিজাম, গাজী শাহাজাহন জুয়েল, মোস্তফা কামাল পাশা, এম শামসুল আলম, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ চৌধুরী, আনোয়ার হোসাইন, সাথী উদয় কুমার বড়ুয়া, সুশীল বড়ুয়া, মীর হেলাল, হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও তরিকুল আলম তেনজিং।
সদস্যদের মধ্যে ফয়সল মাহমুদকে ফটিকছড়ি, উদয় কুসুমকে হাটহাজারী, সুশীল বড়ুয়াকে রাউজান, মীর হেলালকে হাটহাজারী, হুম্মাম কাদেরকে রাউজান ও তেনজিংকে সন্দ্বীপে কর্মসূচি পালনের জন্য গঠিত টিমে রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন মাহবুবের রহমান রহমান শামীম। তিনি চলমান কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, ‘জ্বালানি তেল, পরিবহন ভাড়াসহ সকল দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং ভোলায় পুলিশ কর্তৃক গুলি করে ছাত্রনেতা নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিম হত্যার প্রতিবাদেই কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আজ সোমবার থেকে শুরু হয়ে কর্মসূচি একটানা চলবে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত। মূলত এ সময়ে ‘গণমিছিল’ এবং মিছিলোত্তর ‘সমাবেশ’ করার পরিকল্পনা আছে দলটির। এ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সুশৃঙ্খল ও জনসম্পৃক্ততা।
কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। ওয়ার্ড ভিত্তিক শিডিউল করা হয়েছে। সংসদীয় এলাকার নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ থানা ও ওয়ার্ডে অংশ নিবেন।
দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান দৈনিক আজাদীকে বলেন, দক্ষিণ জেলার আওতাভুক্ত প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা ও ওয়ার্ডে কর্মসূচি পালিত হবে। প্রস্তুতি সভা করেছি। উপজেলাগুলোতে দায়িত্ব পালনে টিমও গঠন করা হয়েছে। তারিখও নির্ধারণ করা হয়েছে।
উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আওতাভুক্ত সাতটি উপজেলায় কর্মসূচি পালনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমন্বয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় কর্মসূচি সফল হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভরাট করা হলো ছয় রাস্তা কেটে করা গর্ত
পরবর্তী নিবন্ধডা. সেব্রিনা ফ্লোরা লাইফ সাপোর্টে