চট্টগ্রামকে রাজনীতির তীর্থস্থান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহন। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করি, যারা জিয়ার সৈনিক, বিএনপি করি, একজন বিএনপি কর্মী হিসেবে আমাদের রাজনীতির তীর্থস্থান হচ্ছে এই চট্টগ্রাম। এখান থেকেই জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দান থেকে জনসভার মাধ্যমে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। জিয়াউর রহমান লড়াই করে ব্যর্থ হন নি। আমরাও হবো না। আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো বেগম খালেদা জিয়া লড়াই করে তা পুনরুদ্ধার করেছেন। তারেক রহমান দূরে থাকলেও তার সাথে আমাদের অবস্থান দুই ফুট দূরত্বে।
তার নেতৃত্বেই শেখ হাসিনার পতন হবে। গতকাল নগরের সিআরবিতে অনুষ্ঠিত বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। কেন্দ্র ঘোষিত এ গণ-অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয় সকাল ১১ টায়। চলে একটানা বিকেল ৩টা ৫ পর্যন্ত। তবে সকাল ১১টার আগেই চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে তাদের। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, কঙবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর থেকে বিএনপি ও ১৪টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন কর্মসূচিতে। বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, পথে কোথাও বাধার সম্মুখীন হননি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিভাগীয় দলনেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি, গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। সঞ্চালনা করেন নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ‘নোয়াখালীর কালাইয়া’ সম্বোধন করে বলেন, নোয়াখালীর কালাইয়া ওবায়দুল কাদের বলেছেন- ভারতকে নাকি তার অনেক ভালো লাগে। তাদের দলের জন্মই হয়েছে ভারত থেকে। তারা ভারতকে পছন্দ না করে বাংলাদেশকে পছন্দ করতে পারে না। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন- আমার এক ইঞ্চি জায়গা কেউ নিতে পারবে না। সেই জিয়াকে হত্যা করে বাংলাদেশকে মুঠোয় আনতে তাদের দাদারা অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেব না।
তিনি বলেন, আমাদের দাদারা কেউ বাইরে নাই। আমাদের দাদা হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশ আমাদের পবিত্র জন্মভূমি। এই জন্মভূমি রক্ষায় বিএনপির কর্মীরা যথেষ্ট।
আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দাবি একটাই, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমান এবং আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পরিবারের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। বিএনপি এখন মামলা হামলাকে ভয় পায় না।
জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগের পায়ের নিচে মাটি নেই। জনগণ তাদের চায় না। তারা এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের জেলে আটকে রেখে মনে করেছে আন্দোলন দমানো যাবে। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যত সহযোদ্ধাকে কারাগারে রাখুন না কেন, আমাদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না, ততদিন এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
এস এম ফজলুল হক বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তারা দেশের ভোটার অধিকার চিনিয়ে নিয়েছে। এই সরকার থাকলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, চট্টগ্রামে আমরা লক্ষ লক্ষ জনতার সমাবেশ করেছি। এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে তারা শেখ হাসিনাকে আর চায় না। এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। এই গণঅবস্থান কর্মসূচিকে গণ অভ্যুত্থানে পরিণত করতে হবে। জনগণ অতীতের মতো আর কোনো একতরফা নির্বাচন চায় না। এই ধরনের নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে আমরা কোনো টাকা ও বিরিয়ানি প্যাকেট দিতে পারিনি। আর আওয়ামী লীগের সমাবেশে একমাস আগে থেকে প্রচার চালায়। দুর্নীতির টাকা দিয়ে ব্যানার পেস্টুন করে। গার্মেন্টস মালিকদের জোর গার্মেন্টসকর্মীদের সমাবেশে নিয়ে আসে। এটা কোনো জনগণের সমাবেশ ছিল না।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, আওয়ামী লীগ দেশে সংকট তৈরি করেছে তা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের এখন মেরামতের প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে মেরামত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্র মেরামতের রুপরেখা ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রয়ী বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, উপজাতি সম্পাদক ম্যা মা চিং, কঙবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, সহ-সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, সহ-গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়া, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কাজী মুফিজ, মশিউর রহমান বিপ্লব, সাচিং প্রু জেরী, মামুনুর রশীদ মামুন, ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দিপেন তালুকদার, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আব্দুর রহমান, উত্তর জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, বান্দরবন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন, কঙবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না, মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ।