চট্টগ্রামে দ্রুত নির্মিত হোক পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল

| মঙ্গলবার , ১৪ জুন, ২০২২ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে অনেক কিছু নেই। তম্মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যার অভাব সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়েছে, সেটি হলো পূর্ণাঙ্গ একটি বার্ন হাসপাতাল। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, অগ্নিঝুঁকি বেশি থাকলেও চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ একটি বার্ন হাসপাতাল নেই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬ শয্যার একটি বার্ন ইউনিট থাকলেও সেখানে প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা অনুপস্থিত। সব ধরনের ব্যবস্থা সেখানে নেই। জায়গা নির্ধারণে জটিলতা ও নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে স্বতন্ত্র একটি বার্ন হাসপাতাল করার চেষ্টা করা হলেও এখনো তা হয়নি। সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে দগ্ধদের অনেককেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিতে হয়েছে। তবে জানা গেছে যে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে যে, চট্টগ্রামে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট স্বতন্ত্র বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালের নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান ডা. সামন্ত লাল সেন এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। দৈনিক আজাদীতে ১২ জুন প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালের জন্য নতুন প্রস্তাবনার জায়গা দেখে গেলেন চীনের দুই প্রকৌশলী। গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এসে গোঁয়াছি বাগানে প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, চমেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত, গণপূর্ত বিভাগের (ইমারত) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাহেদুন নবী চৌধুরীসহ অন্যরা সাথে ছিলেন। হাসপাতালের আওতাভুক্ত চট্টেশ্বরী সড়কের পার্শ্ববর্তী গোঁয়াছি বাগান এলাকা এবং চট্টেশ্বরী সড়কের প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পাশে খালি জায়গা ঘুরে দেখানো হয় তাঁদের। পরিদর্শনকালীন প্রস্তাবিত জায়গার ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করেন দুই প্রকৌশলী। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, চীনের দুই প্রকৌশলী এসে জায়গা দেখে গেলেন। আমরা তাদের বিস্তারিত ব্রিফ করেছি। এই দুজনের পরিদর্শন একেবারেই প্রাথমিক ধাপে বলা যায়। তারা গিয়ে চীন দূতাবাসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন। পরবর্তীতে চীন সরকারের মূল একটি টিম আসতে পারে। একই কথা জানান সারা দেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল করার জন্য ১৫ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চট্টগ্রামে হাসপাতালের জায়গা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। এখন নতুন করে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বক্তারা বলেন, গত দেড় দশকেও চট্টগ্রামে একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। জায়গার অভাব, অর্থ সংকটসহ নানা অজুহাতে এ হাসপাতাল নির্মাণের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে অসংখ্য ছোটবড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের জনসংখ্যা বাড়ছে। সামপ্রতিক সময়ে অগ্নি দুর্ঘটনা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে বেগ পেতে হচ্ছে। ঢাকায় নেওয়ার পথে অনেকে মারা যান। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম এবং আশেপাশের সাধারণ মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা। বলা বাহুল্য, সীতাকুণ্ড ডিপোতে যারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন, তাদের অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের দূরত্বের কারণে কোনো রোগীকে যখন ঢাকায় পাঠানো হয়, তখন রোগীর আত্মীয়দের খুব বেগ পেতে হয়।

সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির কারণে পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল স্থাপনের দাবিটি জোরালো হয়েছে। বিস্ফোরণে হতাহতদের গগণবিদারি আহাজারি আমাদের প্রত্যেককে বেদনার্ত করেছে। দুর্ঘটনাটি সাম্প্রতিক ইতিহাসের বিশাল অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ। আমরা চট্টগ্রামে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ বার্ন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রত্যেক বিভাগীয় শহরেই একটি করে বার্ন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি তুলছি। এটা সমস্ত নাগরিকের জন্য প্রয়োজন। অগ্নিদগ্ধ মানুষের বেঁচে থাকার আরেক অবলম্বন হতে পারে বার্ন হাসপাতাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে