যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। বাড়ছে সাধারণ মানুষের কান্না। চালকের বেপরোয়া গতি নিভিয়ে দিচ্ছে একের পর এক জীবন প্রদীপ। প্রিয়তমা স্ত্রীর সামনে মুহূর্তে লাশ হয়ে যাচ্ছে স্বামী। মায়ের সামনে সন্তান হয়ে যাচ্ছে মাংসপিণ্ড। গত দুই মাসে নগরী ও জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৪ জন। এর মধ্যে নগরীতে ১১ জন এবং জেলায় নিহত হয়েছে ১৩ জন। কিন্তু প্রতিকারে নেই কোনো ব্যবস্থা। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা হয় অনেক, কার্যকর হয় গুটিকয়েক। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের ব্যাপারে পুলিশ যে তথ্য দিচ্ছে তার সাথে বিআরটিএ ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার পরিসংখ্যানের কোনো মিল নেই।
পুলিশ ও বিআরটিএ সূত্র জানায়, জনসচেতনতা, অসতর্কতা ও সড়কে অল্প দূরত্বে অনেক বিপজ্জনক বাঁক, যানবাহন চলাচলে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, কার আগে কে যাবে এ প্রতিযোগিতায় নেমে সামনের গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ, পেছন দিকে আঘাত করা এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে চালকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। নিয়ম ভেঙে সামনের গাড়িকে ওভারটেক করতে যাওয়া, অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি চালানোর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া, চালকের পরিবর্তে হেলপারের গাড়ি চালানো, গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা না করেই রাস্তায় গাড়ি নামানো, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় না আনা এবং ট্রাফিক আইন না মানার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।
অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্ব পালনে পুলিশের অবহেলা এবং হয়রানির কারণে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। সঠিক প্রতিবেদনের অভাব এবং ভুল ব্যাখ্যার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। দুর্ঘটনার পর পুলিশকে ৬৭ ধরনের প্রশ্ন সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। এই ঝামেলা এড়াতে অনেক সময় তারা অনেক দুর্ঘটনা রেকর্ডভুক্ত করে না। তবে এ অভিযোগের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (যানবাহন) শ্যামল কুমার নাথ আজাদীকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ পেলেই সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ সেখানে পৌঁছে আহতদের হাসপাতালে প্রেরণ, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এখানে গা বাঁচানোর কোনো সুযোগ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনার তথ্য সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ এবং যথার্থ গবেষণা হলে সড়ক পথে অনেক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। দুর্ঘটনা রোধে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সেলগুলো কার্যকর কিছুই করতে পারছে না। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে গবেষণাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন এভাবে মানুষ মরত না।