চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের হার ছাড়াল ১১ শতাংশ

জাগাচ্ছে ফের শঙ্কা, মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ জুন, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

সারাদেশের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ বাড়ছে চট্টগ্রামেও। বিশেষ করে গত ৮/১০ দিন ধরে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। এর আগে কয়েক মাস করোনা শনাক্তের হার শূন্যের কোটায় থাকলেও চলতি মাসের ১০ তারিখের পর থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে সংক্রমণ যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কদিন আগেও চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ছিল শূন্যের কোটায়। কিন্তু দুই-এক শতাংশের ঘর থেকে শনাক্তের হার এক লাফে ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় গত ১৬ জুন। ৩ দিন পার না হতেই দ্বিগুণ বেড়ে শনাক্তের হার ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে রোববার।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার ২৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। এর ৩০ জনই মহানগরের বাসিন্দা। শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১১.৫৬ শতাংশ। অথচ আগের দুই দিন (১৭ ও ১৮ জুন) শনাক্তের হার ছিল ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে (শনাক্ত ১২ জন)। যদিও এর আগের দিন (১৬ জুন) শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ওই দিন (১৬ জুন) ৪৫৭টি নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৫.৬৮ শতাংশ। সাম্প্রতিক কয়েক মাসের মধ্যে শনাক্তের ওই হার (৫.৬৮ শতাংশ) ছিল চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ। তবে এর ৩ দিনের ব্যবধানে শনাক্তের হার দ্বিগুণ বেড়ে এখন ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, গত ৩০ মে ২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ১ জুন ১ জন, ২ জুন ২ জন ও ৩ জুন ২ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। মাঝখানে বেশ কয়দিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল শূন্যের কোটায়। ১১ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে ১২ জুন ৫ জন, ১৩ জুন ৪ জন এবং ১৪ জুনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এতদিন ২/১ জনের করোনা ধরা পড়লেও শনাক্তের হার ছিল ৩ শতাংশের নিচে। তবে ১৬ জুনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। যা রোববার ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে শনাক্তের হার এখন ১১ শতাংশের বেশি। এটি সারাদেশে শনাক্তের গড় হারের তুলনায়ও বেশি। করোনা সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফের সঙ্কটময় পরিস্থিতির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সংক্রমণ বাড়লে কি করতে হবে, সেটা কিন্তু এখন সবাই জানেন। কিন্তু কেউ মানেন না। এটা দুঃখজনক। স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনে সবচেয়ে সহজ কাজটি হল মাস্ক পরা। কিন্তু তাও (মাস্ক) মানুষ পরে না। টিকা নেয়ায় মানুষের যেন সাহস বেড়ে গেছে। এরকম অবস্থা হলে সংক্রমণ অল্প কদিনেই আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। আর যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আগের মতো পরিস্থিতিও নেমে আসতে পারে।

সংক্রমণ পরিস্থিতি পুনরায় শঙ্কা তৈরি করছে জানিয়ে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামে অল্প কয়দিনেই শনাক্তের হার ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বলতে গেলে শনাক্তের হার হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো আগ্রহ নেই। বেশির ভাগ মানুষ মাস্কও পরছেন না। এতে করে শঙ্কাটা আরো বাড়ছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে, নিজেকে নিরাপদ রাখতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে। এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, মাস্ক পরার পাশাপাশি অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

এদিকে, বেশ কিছু দিন ধরে চট্টগ্রামের অধিকাংশ ঘরে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তের খবর মিলছে। যদিও এটি ভাইরাল (সিজনাল) ফ্লু’র কারণেও হতে পারে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে মানুষ এই ভাইরাল ফ্লু-তে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কিছু সতর্কতা মেনে চললে এই ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। এই সময়ে কখনো অতিরিক্ত গরম। আবার কখনো হঠাৎ করে ঝড়-বৃষ্টি। অতিরিক্ত গরম আর ঠাণ্ডার মিশ্রণে মানুষ ভাইরাল জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। অবশ্য, জ্বর-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিলে করোনা টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, জ্বর-সর্দি-কাশি ভাইরাল ফ্লু’র কারণেও হতে পারে। তবে কোনো লক্ষণ/উপসর্গ দেখা দিলে করোনা টেস্ট করাটা উচিত।

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, টিকা নিলেও সকলকে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সচেতন হতে হবে। জ্বর-কাশি থাকলেও অনেকে করোনা টেস্টের বিষয়ে আগ্রহী নন জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশি। কিন্তু সেভাবে মানুষকে নমুনা দিতে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অথচ এখন র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ মিনিটেই ফল জানা যায়। আগে নমুনা দিতেও মানুষের অনেক কষ্ট হতো। ফল পেতে সময় লাগতো। কিন্তু এখন সে কষ্টটাও নেই। এরপরও মানুষ কোভিড টেস্ট করতে আসছে না। অথচ উপজেলা হাসপাতালসহ সরকারি সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে র‌্যাপিড এন্টিজেন কিট মজুদ রয়েছে। লক্ষণ দেখা দিলে যে কেউ হাসপাতালে গিয়ে মাত্র একশ টাকায় এই র‌্যাপিড টেস্ট করাতে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত (১৯ জুন) মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৭০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৯২ হাজার ২২৬ জন। আর ৩৪ হাজার ৫৪৪ জন উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা। আক্রান্তদের মাঝে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৭৩৪ জন এবং ৬২৮ জন উপজেলা পর্যায়ের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদে বাসের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু ২৪ জুন
পরবর্তী নিবন্ধ২০ দিন পর আবার মৃত্যুর খবর