চট্টগ্রামে এক মাসে রপ্তানি কমেছে ২৪.৪৪ শতাংশ

লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয়, সংকট কাটাতে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ৫ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ

তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে। এক মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রপ্তানি কমেছে ২৪.৪৪ শতাংশ। ঢাকা অঞ্চলে কমেছে ১১.৮০ শতাংশ। চলতি মাসেও আগের গতি আসবে বলে মনে করছেন না সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত যাতে সংকটে না পড়ে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের নানা দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। তবে এর মধ্যে আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে বাংলাদেশের সিংহভাগ পোশাক রপ্তানি হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১৫.৮৬ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। ইংল্যান্ডে গত ৮ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। কানাডায় চলতি বছরের ৮ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১.০১ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, কোরিয়া, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মেঙিকো, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, চিলি ও ব্রাজিলে সীমিত পরিমাণে রপ্তানি হয়। এগুলোকে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাসে ঢাকা অঞ্চলের কারখানাগুলোতে উৎপাদিত মোট ২২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬১ দশমিক ৪৪ ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু এক মাসের ব্যবধানে সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা অঞ্চলের কারখানাগুলো থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২০১ কোটি ৯৭ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮৭ দশমিক ৮২ ডলারের পণ্য। এক মাসের ব্যবধানে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৭ কোটি ২০ লাখ ৮ হাজার ৭৪ ডলার বা প্রায় ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা টাকার অংকে ৩ হাজার কোটির বেশি।

একইভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারখানাগুলো আগস্ট মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ২৮ হাজার ২২৭ দশমিক ৫৭ ডলার। এক মাসের ব্যবধানে সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারখানাগুলোর তৈরি পোশাক রপ্তানি নেমে আসে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৮ হাজার ৯১০ দশমিক ২৭ ডলারে; যা আগের মাসের তুলনায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৩১৭ ডলার বা ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। টাকার অংকে যার পরিমাণ প্রায় ৩৭৫ কোটি টাকা কম।

তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি চিন্তিত। চলতি মাসেও রপ্তানি আগের গতিতে ফিরে আসার কোনো লক্ষণ নেই জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা, বাংলাদেশের বড় বড় বাজারগুলো থেকে অর্ডার কমেছে। এতে করে চলতি বছরের রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা তা বছর শেষে অর্জিত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

বিজিএমইএর একাধিক নেতা বলেছেন, তৈরি পোশাক খাতে অর্ডার কমেছে। এই ধারা কাটিয়ে ওঠা না গেলে সংকট হবে। সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেছেন, ইউরোপআমেরিকায় তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অর্ডার কম হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইউরোপআমেরিকার মানুষেরা বিলাস সামগ্রীর ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। আগের তুলনায় পোশাক কেনা কমিয়ে দেওয়ায় বড় বড় বায়ারদের কাছে পোশাকের স্টক রয়ে গেছে। তাই তারা নতুন অর্ডার করছেন না।

তিনি বলেন, ইউরোপআমেরিকায় ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে সর্বোচ্চ সাড়ে চার শতাংশ সুদ ছিল, গত কিছুদিনের মধ্যে তা ছয় শতাংশে উন্নীত হয়েছে। লোনের ইন্টারেস্ট বেড়ে যাওয়া সাধারণ মানুষের বায়িং ক্যাপাসিটির ওপর প্রভাব ফেলেছে। ফলে জরুরি না হলে তারা পোশাক কিনছেন না। এটিও রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কাস্টমসের কাঁধে ২৯ হাজার মামলার বোঝা
পরবর্তী নিবন্ধরাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী ও গাড়ি রেখে যানজট সৃষ্টি