চট্টগ্রামে এক বছরে নতুন শনাক্ত ৩৯

বিশ্ব এইডস দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

প্রাণঘাতী এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৪১১ জন এইডস রোগী বর্তমানে চিকিৎসার আওতায় রয়েছেন। আর গত এক বছরে (২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত) নতুন ৩৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। আক্রান্তদের মাঝে রয়েছে শিশুরাও। এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অ্যান্টি রেট্রো ভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টার সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আক্রান্তদের অধিকাংশই বিদেশ ফেরত ও তাদের স্বজন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে বিদেশ ফেরতের পাশাপাশি জাহাজের নাবিক ও বেসরকারি চাকরিজীবীও রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- প্রবাসে অবস্থানরতদের ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্ক বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান না থাকা এবং বিদেশে যাওয়ার আগে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং না হওয়ায় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। বিদেশে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরা ব্যক্তিদের মাধ্যমে তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
এআরটি সেন্টারের তথ্য মতে- এক বছরে চট্টগ্রামে ৪৮২ জনের এইডস পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩৯ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। নতুন শনাক্তদের ২২ জন পুরুষ, ১৩ জন নারী, ১ জন শিশু ও ৩ জন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া)। এই সময়ে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এআরটি সেন্টার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- নতুন শনাক্তদের মাঝে ৬ মাস বয়সী একজন শিশু রয়েছে। শিশুটির বাবা-মা দুজনেই এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত। বাবা বেসরকারি চাকরিজীবী আর মা গৃহিনী। কিছুদিন আগে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। আর মা ও শিশুটি বর্তমানে চিকিৎসার আওতায় রয়েছে। বাবা-মায়ের মাধ্যমে শিশুটি আক্রান্ত বলে জানান এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ডা. রেজাউল করিম।
এদিকে, সবমিলিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৪১১ জন এইচআইভি আক্রান্ত রোগী বর্তমানে চমেক হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার আওতায় রয়েছেন। চিকিৎসার আওতায় থাকা রোগীদের ৬০ ভাগ পুরুষ বাকি ৪০ ভাগ নারী বলে জানান এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ডা. রেজাউল করিম।
এআরটি সেন্টারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়- এবছর নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কমলেও বেড়েছে চিকিৎসার আওতায় থাকা এইডস রোগীর সংখ্যা। গত বছর নতুন করে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭১ জন। এর মধ্যে ৪৪ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী এবং নয়টি শিশু। মৃত্যু হয় ১০ জনের। তাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, চারজন নারী ও একটি শিশু। আর বৃহত্তর চট্টগ্রামে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৪২১ জন। যার মধ্যে চিকিৎসার আওতায় ছিলেন ৩২৬ জন। ২০১৮ সালে ৪৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে।
বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী- দেশে বর্তমানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এসব রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় এসেছেন মাত্র ৬ হাজার ৬০৬ জন। এদিকে, ‘সারা বিশ্বের ঐক্য, এইডস প্রতিরোধে সবাই নিব দায়িত্ব’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে চট্টগ্রামেও আজ (১ ডিসেম্বর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবসটি পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবার। ১৯৮৮ সাল থেকে এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
চমেক হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলছেন, চট্টগ্রামের এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্তদের একটি বড় অংশ প্রবাসী। অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক বা অন্যান্য কারণে তারা এ ভাইরাসের জীবাণু বহন করে আনছেন, এদের মাধ্যমেই ভাইরাসটি তাদের স্ত্রীর মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে। আর স্ত্রী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সন্তানের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার আগে এইচআইভি ভাইরাস ও এইডস নিয়ে কাউন্সেলিং করা গেলে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনাকালেও আশাতীত সাড়া করদাতাদের
পরবর্তী নিবন্ধশহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের ১২০তম জন্মবার্ষিকী আজ