চট্টগ্রামে আসছে গরু

এবার ১৩টি বাজার বসানোর উদ্যোগ চসিকের কোরবানি দেয়া হবে ৮ লাখ পশু

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৪ জুন, ২০২২ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে গরু আসতে শুরু করেছে। স্থায়ী হাটের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে গড়ে ওঠা খামারগুলোতেও গরুর যোগান বাড়তে শুরু করেছে। চট্টগ্রামে এবার তিনটি স্থায়ী গরুছাগলের বাজারের পাশাপাশি আরো অন্তত ১০টি অস্থায়ী বাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। জেলায় এবার ৮ লাখের মতো গবাদি পশু কোরবানি দেয়া হবে।

শুরুতে গরুর দাম বেশ বাড়তির দিকে দেখা যাচ্ছে। তবে চাহিদা এবং যোগানের সমন্বয়ে শেষতক বাজার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকে তা সময়ই বলে দেবে বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।

সরেজমিনে কয়েকটি খামার এবং গরুর বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, দেশের নানা অঞ্চল থেকে প্রচুর গরু আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। ভারত, নেপাল এবং মায়ানমারের কিছু গরুও ঠাঁই পেয়েছে কয়েকটি খামারে। ইতোমধ্যে বেচাকেনাও শুরু হয়েছে। তবে এখনো বাজার জমে উঠেনি। এবারও অনলাইন বাজার বেশ বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গরু ছাগলের বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজ করে শত শত গরু ছাগল বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত দুই বছর ধরে চলে আসা অনলাইন বাজারের ধারণা স্থায়ী অস্থায়ী গরু ছাগলের বাজারে প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রামে এবার ৮ লাখেরও বেশি পশু কোরবানি দেয়া হবে। চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ১৫টি উপজেলায় এই পশু কোরবানি দেয়া হবে। ইতোমধ্যে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার গৃহস্থ, খামারি এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এই বিপুল সংখ্যক গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর কোন সংকট হবে না বলেও জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এবার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮০৩টি গরু, ৬৬ হাজার ২৩৭টি মহিষ, ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২টি ছাগল ও ভেড়া এবং অন্যান্য ৯৯টি পশু কোরবানি দেয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতবছর সরকারি হিসেবে ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি পশু জবাই করা হয়েছিল। গতবছর ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি পশু স্থানীয়ভাবে যোগান দেয়া হয়। এর আগের বছর (২০২০ সালে) কোরবানি দেয়া হয়েছিল ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬টি পশু। ওই বছর ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২২টি পশু স্থানীয়ভাবে যোগান দেয়া হয়েছিল।

জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এবার মীরসরাই উপজেলায় ৫৭ হাজার ৬৮০টি, সীতাকুণ্ডে ৪৪ হাজার ২৪৮টি, সন্দ্বীপে ৬৯ হাজার ২২৩টি, ফটিকছড়িতে ৫১ হাজার ২৩৫টি, রাউজানে ৩৮ হাজার ৬৩৫টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৪৫ হাজার ৮১৮টি, হাটহাজারীতে ৪৪ হাজার ৬৪৬টি, বোয়ালখালীতে ৪৮ হাজার ১৩৩টি, পটিয়ায় ৭২ হাজার ৩১৭টি, চন্দনাইশে ৪০ হাজার ৮৫৪টি, আনোয়ারায় ৬৩ হাজার ৬৬৬টি, সাতকানিয়ায় ৪২ হাজার ১৬৯টি, লোহাগাড়ায় ৪৩ হাজার ৯৭৮টি, বাঁশখালীতে ৪১ হাজার ৭৮৩টি, কর্ণফুলীতে ৫৪ হাজার ৯৭৯টি, কোতোয়ালীতে চার হাজার ৭০২টি, ডবলমুরিংয়ে ৯ হাজার ১৬৭টি, পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ১৮ হাজার ২৫০টি কোরবানির বিক্রিযোগ্য পশু রয়েছে।

সরকারি উপরোক্ত হিসেব উল্লেখ করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর কোন সংকট হবে না। প্রচুর পশু রয়েছে। এর বাইরে দেশের নানা অঞ্চল থেকে পশু আসতে শুরু করেছে। বেচাবিক্রিও হচ্ছে।

কোরবানির পশু কেনাবেচায় নগরবাসীর সুবিধার কথা মাথায় রেখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবারও স্থায়ী তিনটি বাজারের পাশাপাশি আরো বাজার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে অস্থায়ী হাট বসানোর জন্য সিটি কর্পোরেশন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেছে। জেলা প্রশাসন সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত হাটের ব্যাপারে নগর পুলিশের মতামত চেয়েছে। সিটি কর্পোরেশন এবারও ১০টি অস্থায়ী হাট বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে রাজস্ব শাখার একজন কর্মকর্তা। প্রস্তাবিত অস্থায়ী হাটগুলো বসানোর অনুমতি পেলে এবার মোট ১৩টি হাটে কোরবানি পশু বিকিকিনি হবে।

প্রতি বছর ১ থেকে ১০ জিলহজ্ব পবিত্র কোরবানির পশুর হাট বসে নগরে। চাঁদ দেখা স্বাপেক্ষে আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই জুলাই পর্যন্ত এবার হাট বসতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলীকদম পাহাড়ি সীমান্তে সক্রিয় গরু চোরাচালান চক্র
পরবর্তী নিবন্ধ১৫৫ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়লেন নাজমুন নাহার