তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে যদি সম্পৃক্ত করা না হতো, তবে আজকে দেশ এভাবে এগিয়ে যেতে পারতো না। দেশ এগিয়ে যাবার পেছনে আমাদের নারীরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন নারী। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর আমবাগান শহীদ শাহজাহান মাঠে চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত মাসব্যাপী সিএমএসএমই বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, সমপ্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার ঘোষণা দিয়েছেন, এটা আপনারা সবাই জানেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্য মেলার ভেন্যু নির্ধারণ করে দিবেন। সেটি আপনারা খুব সহসা জানতে পারবেন। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। আমি জানি চট্টগ্রামবাসীর দাবি আছে এবং উইম্যান চেম্বারের দাবি আছে, যাতে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্য মেলার একটি ভেন্যু হয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, সামপ্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী যখন ভারত সফরে গিয়েছিলেন, তখন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে যখন দেখা হয়, তখন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরে বলেন আপনি আমার জীবনের জন্য একটি প্রেরণা। দেশ এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে নারীরা অনেক ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া আজ থেকে ১০ বছর আগে কখনও কেউ ভাবেনি একজন নারী ডিসি, এসপি, ইউএনও হতে পারবেন। এখন নারী রাষ্ট্রদূত, হাই কোর্টে এফিলিয়েট ডিভিশনের বিচারপতি, নারীরাই সচিব হচ্ছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রাইমারি স্কুলের ৭০ শতাংশই নারী শিক্ষিক দায়িত্ব পালন করছেন। পৃথিবীর ৭০ শতাংশ কাজ করেন নারীরা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভিত্তি হচ্ছে জনগণ, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সবসময় জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশের স্বাধীনতা এসেছে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশের সব অর্জন অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজকে মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছেন। আওয়ামী লীগ কখনো ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, কখনো সরকারি শক্তির ওপর বিশ্বাস করে না। বরং বিএনপি অস্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। অস্ত্রের ওপর ভর করে ও লাশের ওপর পা দিয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছিল, টিকেও ছিল লাশের ওপর পা দিয়ে। বেগম খালেদা জিয়াও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়েছিলেন এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকেছিলেন। আওয়ামী লীগ সেটাতে বিশ্বাস করে না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই বিএনপি টানেলের ভেতর থেকে আলো দেখছে। শুধু আলো দেখা নয় আমি আশা করব তারা টানেল থেকেই বের হতে পারবে এবং বিএনপি সত্যিকার অর্থে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের গণতন্ত্রকে সংহত করার জন্য ভূমিকা রাখতে পারবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নারীরা এখন সবক্ষেত্রে এগিয়ে গেছেন। শিক্ষা দীক্ষাসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের অবদান রয়েছে। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব সরকার। এক সময় নারীরা ঘরের ভিতর বন্দি ছিল। এখন সেই অবস্থা অতিক্রম করেছে। নারীরা দেখছে, পড়াশুনা করলে তার জন্য সব দুয়ার খোলা। তাই তারা এখন পড়াশুনায়ও মনযোগী হচ্ছে।
চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান, নারী উদ্যোক্তা নুরান ফাতিমা, প্রিজম বাংলাদেশের সাবেক টিম লিডার আলী সাবেত এবং সিএমএসএমই মেলা কমিটির চেয়ারপার্সন ও উইম্যান চেম্বারের সহ-সভাপতি রেখা আলম চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন উইম্যান চেম্বারের প্রথম সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা, দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মুনাল মাহবুব, সহ-সভাপতি নিশাত ইমরান, সুলতানা, নুরজাহান রোজীসহ পরিচালক, সদস্য এবং চট্টগ্রাম-সহ দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আগত উদ্যোক্তাবৃন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলার ঐহিত্য দেশীয় নৃত্য, ‘শাড়িতে নারী আমরাও পারি’ থিমের ওপর দেশীয় শাড়িতে চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ফ্যাশন-শো অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রতিবাদী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সম্মানে ও স্মরণে ‘প্রীতিলতা চ্যালেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ এ রাজনীতিতে সাবেক সংসদ সদস্য সাবিহা নাহার বেগম, সংস্কৃতিতে শারমীন হুসাইন, ব্যবসায় লতিফা হক লুসি, সমাজসেবায় সেরিনা তাহের এবং ক্রীড়া ও স্বাস্থ্যসেবায় কামরুন নেসা বেগমকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। পরে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ মেলা প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
