চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

| বুধবার , ২৩ জুন, ২০২১ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

পাহাড় রক্ষার দাবিতে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে সম্প্রতি চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পাহাড় ও নদী রক্ষায় একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন। পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পিপলস ভয়েস’ ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, যারা পাহাড় দখল করেছেন তাদের তালিকা পাহাড় রক্ষা কমিটি করেছিল। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে আজো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাহাড়ের বসতিতে নাগরিক সুবিধা পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। একদিকে সব সুবিধা রাখবেন আর অন্যদিকে পাহাড় রক্ষার কথা বলবেন তা হয় না। যে হারে পাহাড় কাটা হচ্ছে এক দশক পর কোনো পাহাড় থাকবে না। পাহাড়বিহীন চট্টগ্রাম হবে। পাহাড় সমুদ্র নদীর যে নান্দনিক চট্টগ্রাম তা থাকবে না। জনমত পাহাড় রক্ষার পক্ষে। চট্টগ্রামের মানুষ বাধ্য হলে যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে। পাহাড় রক্ষায় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু তহবিলের কোটি টাকা খরচ হয় পাহাড় রক্ষায় একটি টাকাও খরচ হয় না।
যে হারে পাহাড় কাটা হচ্ছে, কয়েক বছর পর পাহাড়ের চিহ্ন থাকার কথা নয়। আজাদীতে খবর বেরোলো ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশেই কাটা হচ্ছে পাহাড়!’ গত ২১ জুন প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশেই চলছে পাহাড় কাটা! নগরীর খুলশী এলাকায় বেশ কয়েকটি পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। মূলত নতুন করে গড়ে উঠা স্থাপনার পাশে লোকচক্ষুকে আড়াল করে বিলীন করে দেয়া হচ্ছে সবুজ পাহাড়। সরেজমিন দেখা গেছে, খুলশী ইউএসটিসির ছাত্রী হোস্টেলের পেছনে কতিপয় প্রভাবশালী পাহাড় ও টিলা কেটে সাবাড় করছে। এখানে পাহাড় কেটে তৈরি করা হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে একটি পাহাড়কে আস্তে আস্তে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, এখানকার পাহাড়গুলোতে প্রথমে ছোট স্থাপনা তৈরি করা হয়। এরপর আস্তে আস্তে পাহাড়গুলো কেটে মাটি বিক্রি করে দেয়া হয়। আবার পাহাড়ের উপরে কেটে আশেপাশে ভরাট করে সমতল করা হয়। মাসের পর মাস কাটা হয় এসব পাহাড়। আশপাশে উঁচু দালান থাকার কারণে মূল সড়ক থেকে পাহাড় কাটার দৃশ্য চোখে পড়ে না। ফলে অধরা রয়ে যায় পাহাড় কাটার সাথে জড়িতরা। খুলশী পিজিসিবিএলের পাশে কবরস্থানের লাগোয়া ও ইউএসটিসির ছাত্রী হোস্টেলের পেছনে একই কায়দায় পাহাড়গুলোকে নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে। অথচ মাত্র ১০০ মিটার দূরেই পরিবেশ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক ও মহানগর কার্যালয়।’
আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এভাবেই যে যেভাবে পারছে ম্যানেজ করে নিচ্ছে। পরিবেশবাদী সংগঠন নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেসব ঘটনা গণমাধ্যমে আসে, সেগুলোতেই অভিযান চালানো হয়। এর বাইরে আরো অনেক জায়গায় পাহাড় কাটা চলছে। জরিমানা করেই তারা দায়িত্ব শেষ করে। এরপর পাহাড়কে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ থাকে না। ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয় সেটা অপূরণীয়। তাঁদের আরো অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তর দায়িত্ব শেষ করে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে। পরিবেশ আদালতেও মামলা করা হচ্ছে। দেখা গেছে, একই স্থানে পাহাড় কাটার কারণে কয়েকবার জরিমানা করা হয়েছে। যাঁরা পাহাড় কাটছেন, তাঁরা জরিমানা দিয়ে আবারও পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন। একসময় পুরো পাহাড়টি সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, জরিমানা করে কখনো পাহাড় কিংবা বনাঞ্চল রক্ষা করা যাবে না। এর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জরিমানা দিয়ে এ অপরাধীরা মনে করে তারা বৈধতা পেয়ে গেছে। পাহাড়কে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে ভূমিকা নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে