চট্টগ্রামের নেতারা কে কী বললেন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়াদকালে গত ১৪ বছরে চট্টগ্রামে ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। গতকাল পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় উন্নয়নের তথ্যটি তুলে এ উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের নেতারা। প্রকাশ করেছেন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সভায় চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃৃন্দ তাদের বক্তব্য বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যে উন্নয়ন করেছেন তার ঋণ শোধ করা যাবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী যা দিয়েছেন তার বিনিময়ে এবং ভবিষ্যতেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আগামী সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের সবগুলো আসন উপহার দেয়ার ঘোষণা দেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হয়ে আমাদের ধন্য করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের জন্য অনেক কাজ করেছেন। চট্টগ্রামে সেন্ট্রাল স্যুয়ারেজ সিস্টেম ছিল না, প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। সেটার ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। এ সময় তিনি কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল, আনোয়ারা ইকোনমিক জোন ও মীরসরাইয়ের শিল্প পার্কসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি চট্টগ্রামের জন্য অনেক করেছেন। এ ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারব না। কালুরঘাট সেতুর প্রসঙ্গে বলেন, আপনি (শেখ হাসিনা) মরহুম এমপি বাদল ভাইকে আমার সামনে কথা দিয়েছিলেন, সেতুটি করে দেবেন। আমরা জানি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডেডিকেটেড রেললাইন হচ্ছে। কালুরঘাটে রেলসেতুর সঙ্গে একটি ডেডিকেটেড সড়ক সেতুর ঘোষণা আপনার কাছ থেকে চট্টগ্রামবাসী শুনতে চায়।

ড. হাছান মাহমুদ : বিএনপি ও তার দোসরদের উন্নয়ন ভালো লাগে না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গত ১৪ বছরে লক্ষ কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এই চট্টগ্রামে হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরো লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন এই চট্টগ্রামে হবে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী : ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ২০১০ সালে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, চট্টগ্রামের দায়িত্ব তিনি নিজ হাতে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার ওয়াদা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। চট্টগ্রামে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তা বিগত সময়ে কেউ দেখেনি। আমরা প্রধানন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে মর্যাদাসম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নাই। তারা আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করেছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায়সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। দেশের কিছু কিছু জায়গায় সভা-সমাবেশ করছে। তারাই আবার এনালাইসিস করে বলছে, তাদের সভা-সমাবেশে নাকি সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে এ ধরনের কথা বলছেন জানি না। তাদের সভা-সমাবেশে যদি জনগণের সম্পৃক্ততা থাকে তাহলে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে ভয় পাচ্ছে কেন। নয়াপল্টন কেন তারা বেছে নিয়েছে। সুতরাং ভাঁওতাবজির দিন শেষ। বলতে চাই, আজকে থেকে আমরা থাকব মাঠে। তারা থাকবে ঘরে।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল : শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বাংলাদেশের বাজেটের বিশাল একটা অংশ ঢেলে দিয়ে চট্টগ্রামের প্রতিটি এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছেন। আজকে তাই আমরা এ বিশাল জনসমাবেশে এসেছি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে।

তিনি বলেন, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিগত ১৪ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, যার নেতৃত্বকে সারা বিশ্ব প্রশংসিত করেছে, সে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমরা মহান আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করব। তিনি যেন শতায়ু হন এবং আমাদের যেন আজীবন নেতৃত্ব দিয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশের মানুষের আমূল পরিবর্তন যেন তাঁর হাত ধরেই হয়।

রেজাউল করিম চৌধুরী : সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী, চট্টগ্রামবাসী আপনার কাছে ঋণী। আপনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম এগিয়ে গেছে। তাই আজ আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনি সম্পূর্ণ জিওবি ফান্ডে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন চট্টগ্রাম শহরের উন্নয়ন করার জন্য। ৫০ বছরের ইতিহাসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে এত বড় অনুদান কেউ দেয়নি। মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সিটি কর্পোরেশনকেও সাড়ে ১৩শ কোটি টাকার জলাবদ্ধতার প্রকল্প দিয়েছেন।

অন্যান্য : সভায় চট্টগ্রামের সংসদীয় আসনগুলোর সংসদ সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। তবে বিলম্বে আসায় বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বক্তব্য রাখতে পারেননি। অসুস্থ থাকায় হালিশহর-ডবলমুরিং আসনের এমপি আফছারুল আমীন সমাবেশে যোগ দিতে পারেননি।

সভায় হুইপ ও পটিয়ার এমপি শামসুল হক চৌধুরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে চট্টগ্রামবাসী টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও রাউজানের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা মানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মানে শেখ হাসিনা। উন্নয়নের ঠিকানা মানে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী দিনের সাংহাই এবং সিঙ্গাপুর হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম। শেখ হাসিনা যা দিয়েছেন তা শোধ করতে হবে সবগুলো আসন উপহার দিয়ে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, জননেত্রী চট্টগ্রামের জন্য যা করেছেন সেই হিসাব দিয়ে শেষ করা যাবে না। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে সারা দেশের উন্নয়ন। চট্টগ্রামে টানেল ও শিল্পাঞ্চলসহ অনেক উন্নয়ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যে উন্নয়ন করেছেন তা সারা বিশ্বের বিস্ময়। গ্রাম থেকে গ্রামে, শহর থেকে শহরে, জেলা থেকে জেলায়, বিভাগ থেকে বিভাগে সমানতালে উন্নয়ন করেছেন।

বন্দর-পতেঙ্গা আসনের এমপি এম এ লতিফ বলেন, জামায়াত-বিএনপি আগুন-সন্ত্রাসী খেলায় মেতেছে। প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামে তাদের ঠাঁই হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। চট্টগ্রামে যে উন্নয়ন হয়েছে তার সুফল সারা দেশের মানুষ ভোগ করবে। এসব উন্নয়ন হবে আগামীতে আমাদের শিল্পবিপ্লবের হাতিয়ার। শেখ হাসিনার যুগ স্বর্ণযুগ।

লোহাগাড়া-সাতকানিয়া (আংশিক) আসনের এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী বলেন, ৭১ সালে যারা স্বাধীনতার বিরোধী ছিল, যারা ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে কতল করেছে, যারা সিরিজ বোমা মেরেছে, যারা হ্যাঁ-না ভোট করে গণতন্ত্রকে কাফন-দাফন করেছে, বাংলাদেশের মানুষ তাদের কোনোদিন সমর্থন করবে না।

চান্দগাঁও-বোয়ালখারী আসনের এমপি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, কালুরঘাট সেতু স্বপ্ন নয়, বাস্তব। নতুন কালুরঘাট সেতুর ডিজাইন অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি, ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রীকে এনে সেতুর উদ্বোধন করব। চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপিরা মিলে কালুরঘাট সেতুর নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের নামে করার প্রস্তাব করছি।

সন্দ্বীপের এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, অবহেলিত সন্দ্বীপ উন্নয়নে পাল্টে গেছে। বিদ্যুৎসহ এমন কোনো উন্নয়ন নেই যা সন্দ্বীপে হয়নি।

চন্দনাইশ-সাতকানিয়ার (আংশিক) এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অবহেলিত জনপদ থেকে উন্নয়নের জনপদে পরিণত হয়েছে সাতকানিয়া-চন্দনাইশ। সারা চট্টগ্রামের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সীতাকুণ্ড আসনের এমপি দিদারুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামের সবগুলো আসন উপহার দেয়া হবে।

সংরক্ষিত আসনের এমপি খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে বিএনপির। তারা নাশকতায় বিশ্বাসী।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর হাতেই নিরাপদ।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চট্টগ্রামবাসী কৃতজ্ঞ।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আজকে জনসভা নিয়ে যে জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে তা সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশের মানুষ দেখেনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে দুই হাত ভরে দিয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে চট্টগ্রামে। এবার আমাদের দিতে হবে। ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে অনেক দিয়েছেন। এবার আমাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর পালা। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করতে হবে।

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি চট্টগ্রামে এসেছেন। আপনাকে কি দিয়ে বরণ করে নেব। উপহার দেয়ার সামর্থ্য আমাদের নাই। আপনার প্রতি আছে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেষ আটে ইংল্যান্ড
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখা হলো না তৃণমূল কর্মী জহিরুলের