চট্টগ্রামের উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম বন্দর একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে। ২৫ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের উন্নয়নে একসাথে কাজ করার বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। গত বুধবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর সুচারুভাবে চলার জন্য কর্ণফুলী নদীর পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। এজন্য চসিক কর্ণফুলীর জন্য ভয়াবহ হুমকিতে পরিণত হওয়া পলিথিন রোধে কঠোর অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বন্দরের পড়ে থাকা জমি চসিককে দিলে সে ভূমিতে সৌন্দর্যবর্ধন করে দেয়া হবে বলে জানান মেয়র। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, বন্দর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। চট্টগ্রামের অবকাঠামোখাতের ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় অচিরেই বন্দরের আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
বলা বাহুল্য, চট্টগ্রামে অনেকগুলো সেবা সংস্থা কাজ করে। নিজেরা নিজেদের মত প্রকল্প আনছে আর ডাকডোল পিটিয়ে বাস্তবায়ন করছে। কেউ রাস্তা তৈরি করছে আর আরেক সংস্থা এসে তা কাটছে। অভিযোগ, তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তাই উন্নয়নের সুফল আসছে না। আসলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যতটুকু জানি, ‘সমন্বয় সভাগুলোতে সেবাসংস্থার দায়িত্বশীল কেউ না এসে তাদের প্রতিনিধি পঠানো হয়। ফলে অগ্রগতিও হয় না।’ বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য মেয়রকে অভিভাবকত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়রকে সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতাও দিতে হবে। শহরটা যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের অধীনে, সেহেতু সিটি মেয়রকে এর দায়িত্ব দেওয়া শ্রেয়। নগরের ভেতরে যে কোনো উন্নয়ন কাজ করতে গেলে মেয়রকে অবহিত করতে হবে। সমন্বয় করতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করা হয়। বাস্তবে একাধিক সংস্থা কাজ করতে গিয়ে শহরে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করে থাকে। সমন্বয়হীনতার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ ও সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে যে সব দুর্ঘটনা ঘটে, তাতে কষ্ট পাওয়া ছাড়া গতি নেই। মেয়রের অভিভাবকত্ব থাকলে, জবাবদিহি করার সুযোগ থাকতো।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের মেয়রের কাজটা কী? নানা রকম উত্তর আসতে পারে। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, উত্তরটা খুব সহজ। তাঁর ভাষায়, নালা–নর্দমা পরিস্কার, ময়লা–আবর্জনা সরানো আর সড়ক বাতি লাগানো। সিটি করপোরেশনের কী কাজ তার চেয়ে বরং কোনটা তাদের কাজ নয় সেই তালিকাটাই অনেক দীর্ঘ। যেমন ধরেন বিদ্যুৎ। এটার দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের। পানি সরবরাহের দায়িত্ব ওয়াসার। নগর পরিকল্পনা, নতুন ভবন বা স্থাপনার নকশা অনুমোদন–এসবের দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। টেলিফোন সেবার দায়িত্ব টিএন্ডটির। আরও বিভিন্ন সেবা দেয় আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান। অথচ নগরবাসীর ধারণা এসব কাজের দায়িত্ব বুঝি সিটি করপোরেশনের। খুব চমৎকার কথা বলেছিলেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগ–সুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে।
জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানি–রফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।
দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রাম এখন মাইলফলক। সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী। তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তম বন্দর চট্টগ্রামে। এ কারণে চট্টগ্রামকে বলা হয় বন্দর নগরী। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। এই বন্দরকে বাঁচাতে হলে চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনও বিকল্প নেই। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে চট্টগ্রাম দ্রুত এগিয়ে যাবে। দেশেরও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রামকে অবহেলিত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়।