চট্টগ্রামের উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে

| মঙ্গলবার , ২ মার্চ, ২০২১ at ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবার অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেছেন। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের ইচ্ছা আছে। কিন্তু এই অগ্রাধিকার কাজে লাগাতে হবে। এজন্য সবার অংশগ্রহণ লাগবে। আমি কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে হবে না। শুধু একজন মেয়র নির্বাচন করে তার ওপর সব বোঝা উঠিয়ে দিলে হবে না। সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। আর তা করতে হলে মেয়রকে এগিয়ে আসতে হবে। আবার চট্টগ্রামে যারা বিভিন্ন সেবা সংস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরও সহযোগিতা করতে হবে। নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো গেলে চট্টগ্রামের উন্নয়নে সেখানে টাকা দেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও টাকা দিতে সম্মত হবেন, আমারও উৎসাহ লাগবে, যদি সে টাকা আপনারা কাজে লাগান। বরাদ্দ পাওয়া টাকা কাজে লাগাতে আপনাদের নিজেদের মধ্যে এনগেজমেন্ট ও কমিটমেন্ট থাকতে হবে। গত শনিবার নগরীর পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে চট্টগ্রাম ওয়াসার পতেঙ্গা বুস্টিং পাম্প স্টেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামকে বলা হয় বাংলাদেশের প্রাণভোমরা। তাই দেশের স্বার্থেই চট্টগ্রামের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করা দরকার এবং পরিকল্পিত ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কাজ করতে হবে। ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামকে বলা হতো রেলওয়ে সিটি। পাকিস্তান আমলে বলা হতো পোর্ট সিটি। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার এক দফা ছিল নৌবাহিনীর সদর দপ্তর হবে চট্টগ্রামে। অথচ সবই এখন ঢাকামুখী। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকার আমলাতন্ত্রের কাছে চট্টগ্রাম উপেক্ষিত। যদিও গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। চট্টগ্রামেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। তবে আমাদের মনে হয় এখানে পরিকল্পিত উন্নয়ন কম হয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি করা দরকার। প্রত্যাশার চট্টগ্রাম গড়তে নিজের মতামত নিয়ে সব দল-মতের মানুষ একত্র হলেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। যে যেভাবে পারছেন নিজেদের মতো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে নাগরিকদের। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে সেবাধর্মী সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশন সমন্বয়ের কাজটি যাতে ভালোভাবে করতে পারে সেজন্য আইনগতভাবে ক্ষমতা দিতে হবে। বর্তমানে মেয়র সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করলেও কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তা না মানলে সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা আইনে বলা নেই। সিটি করপোরেশন ও মেয়রের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’-এর মতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করছেন। কিন্তু এ টাকায় যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সবার আগে জানতে হবে- চট্টগ্রামে কী ধরনের উন্নয়ন প্রয়োজন, কী ধরনের উন্নয়ন করা হলে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হবে। সেটা না জেনে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তা কাঙ্ক্ষিত উপকারে আসবে না।
নগরীর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে বিগত সময়ে মেয়র প্রচুর পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম নগরীকে বিলবোর্ডমুক্ত করেছিলেন। তবে কাজটি এত সহজ ছিল না। তাছাড়া, ডোর টু ডোর বর্জ্য অপসারণও ছিল সিটি করপোরেশনের যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। এ কাজে আমরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সফল হয়েছি। কিন্তু সেই সফলতা ধরে রাখা যায় নি।
আমরা বাস্তবায়নবিহীন মাস্টারপ্ল্যান চাই না। আমরা পরিকল্পিত একটি চট্টগ্রাম চাই। পরিকল্পিতভাবে কাজ করা না হলে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে যাবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে, কিন্তু চট্টগ্রামের উন্নয়ন হবে না তা প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন না। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকার সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কিন্তু এই অগ্রাধিকারের সুযোগ আপনাদের কাজে লাগাতে হবে।
আসলে, চট্টগ্রামের উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক নেতা ও গণমাধ্যম কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমস্যার কথা বলা সহজ; কিন্তু বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। এ জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনিশ্চিত গন্তব্য, চোখে-মুখে হতাশা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬