স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের ইচ্ছা আছে। কিন্তু এই অগ্রাধিকার কাজে লাগাতে হবে। এজন্য সবার অংশগ্রহণ লাগবে। আমি কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে হবে না। শুধু একজন মেয়র নির্বাচন করে তার ওপর সব বোঝা উঠিয়ে দিলে হবে না। সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। আর তা করতে হলে মেয়রকে এগিয়ে আসতে হবে। আবার চট্টগ্রামে যারা বিভিন্ন সেবা সংস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরও সহযোগিতা করতে হবে। নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো গেলে চট্টগ্রামের উন্নয়নে সেখানে টাকা দেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও টাকা দিতে সম্মত হবেন, আমারও উৎসাহ লাগবে, যদি সে টাকা আপনারা কাজে লাগান। বরাদ্দ পাওয়া টাকা কাজে লাগাতে আপনাদের নিজেদের মধ্যে এনগেজমেন্ট ও কমিটমেন্ট থাকতে হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে চট্টগ্রাম ওয়াসার পতেঙ্গা বুস্টিং পাম্প স্টেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গেটওয়ে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভাগ্যবান, চট্টগ্রাম বন্দর আছে। চট্টগ্রাম বন্দর থাকাতে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে, স্বপ্ন পূরণ করছে। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের গর্বের জায়গা। কিন্তু এলোমেলোভাবে বন্দরের জায়গা লিজ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন্দরের জায়গা ইজারা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি করে দখল করা হচ্ছে, যা কখনোই কাম্য নয়। এটি কোনো দস্যুর দেশ নয়। এ ধরনের কাজকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।
সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দায়িত্ব মেয়রকে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মেয়র যদি সবাইকে ‘এনগেজ’ করতে না পারেন তাহলে হবে না। ওনাকে এগোতে হবে আর আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়ার কথা রয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে, কিন্তু চট্টগ্রামের উন্নয়ন হবে না তা প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন না। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকার সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কিন্তু এই অগ্রাধিকারের সুযোগ আপনাদের কাজে লাগাতে হবে।
সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণ করে তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি আমার সম্মান সবসময়। তিনি যখন মেয়র হয়েছিলেন তখন এই শহরে হাঁটার একটি ফুটপাতও ছিল না। মহিউদ্দিন সাহেব যদি করতে পারেন আপনারা কেন পারবেন না?
বিরোধিতা না করে সমন্বিত উন্নয়নে সকলের এগিয়ে আসা উচিত মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক কাজে সকলের সহযোগিতা থাকতে হবে। এখন আপনি যদি একটি ভালো কাজ করতে যান সেখানে না জেনে না বুঝে যদি বিরোধিতা করেন, তাহলে উন্নয়ন কেমনে হবে? মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্কে ৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থা হবে। এই শিল্পজোনে পানি সরবরাহের জন্য আমরা উদ্যোগ নিলাম। সেখানে না জেনে না বুঝে কেউ কেউ বিরোধী করেছেন। ২০৪১ সালে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হবে তখন আমরা অনেকে থাকব না। সে জন্য আগামী প্রজন্মকে তৈরি করতে হবে। উন্নয়ন তো একদিনে হয় না। এজন্য সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী বলেন, আগে চট্টগ্রাম মহানগরীতে পানির যে সমস্যা ছিল এখন তা নিরসন হয়েছে। শুধু শহরে নয়, বর্তমান সরকারের আমলে এখন গ্রামে-গঞ্জে পর্যন্ত পৌরসভার মাধ্যমে মোটরের সাহায্যে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিটি মসজিদে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে পটিয়া, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, আনোয়ারায়ও পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি বলেন, আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রামকে শহরের পর্যায়ে নিয়ে আসছেন। গ্রামেও শহরের মতো সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমার নির্বাচনী এলাকা বোয়ালখালীর ভান্ডালজুরিতে পানি সরবরাহ প্রকল্প গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এটি একটি শুভ সংবাদ।
নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি বলেন, আগে পানির অভাবে মানুষ অজু করতে পারত না, গোসল তো দূরের কথা। বর্তমান সরকারের আমলে পানির সেই সংকট নেই। এটা সম্ভব হয়েছে বর্তমান জনবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এক সময় চট্টগ্রামে পানির জন্য হাহাকার ছিল। বিগত ১২ বছরে পানির সংকট নেই। এই চট্টগ্রামে পানির সংকট নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী একের পর এক প্রকল্প দিয়েছেন। শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রথম প্রকল্পের পর শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার দ্বিতীয় প্রকল্পেরও কাজ এখন শেষ হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় সরেজমিনে পরির্দশন করেছেন। যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এদিকে মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শেষে এখন প্রতিদিন ৯ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, পরামর্শে চট্টগ্রামকে একটি সুন্দর নগরী হিসেবে, মানবিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মন্ত্রী মহোদয় ও সচিব মহোদয় আমাদের প্রতি সদয় আছেন। যান কারণে আমরা অনেক কাজের সুফল পাই। এখন আগের মতো পানির সংকট নেই। তবে নগরীর কিছু এলাকায় ওয়াসার পাইপ লাইন নেই। পানির দুর্ভোগ আছে। আমি মনে করি শীঘ্রই এই সংকট কেটে যাবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী এমপি ও নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন।
উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইব্রাহিম, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী সাব্বির ইকবাল, ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম ও ওয়াসার বোর্ড মেম্বারগণ।
পতেঙ্গা বুস্টিং পাম্প স্টেশন উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে গতকাল থেকে মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্পের উৎপাদিত দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি লিটার পানি ইপিজেড, বন্দর, পতেঙ্গা এলাকায় সরবরাহ শুরু হয়েছে বলে জানান ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে এই এলাকার জনগণের দীর্ঘদিনের পানির হাহাকার ঘুচতে যাচ্ছে। এখন থেকে নিয়মিত পানি যাবে ইপিজেড, বন্দরসহ পতেঙ্গার সর্বশেষ প্রান্ত পর্যন্ত। এই এলাকায় এতদিন ওয়াসার পাইপ লাইন থাকলেও এলাকাবাসী নিয়মিত পানি পেত না। পানির জন্য সারা বছরই হাহাকার লেগে থাকত। এখন আর দুর্ভোগ থাকবে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রথম প্রকল্পের পর এখন শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি গুণগত মান পরীক্ষা (প্রকল্পের ট্রায়াল রান চলছে) করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা নগরীতে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারব।