চকরিয়ায় দিনভর বন্য হাতির তাণ্ডব, নিহত ১

ঘরবাড়ি, ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

চকরিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় খাবারের সন্ধানে এসে দলছুট হয়ে পড়া একটি বন্য হাতি ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে বিএমচর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের লোকালয়ে। দিক হারানো হাতিটি এ সময় মানুষের বাড়িঘরে আক্রমণ, সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দেওয়াসহ ফসলি জমিতেও ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও বনবিভাগের কর্মীরা হাতিটিকে বনে ফেরাতে অভিযানে নামে। কিন্তু দলছুট হাতিটির
সামনে পড়ে গেলে বনবিভাগের অভিযান দলে থাকা মো. রহমত আলী (৩৮) নামে এক ভিলেজারকে (বনজায়গীরদার) শুঁরে তুলে আঁছড়িয়ে হত্যা করে।
গতকাল সোমবার সকাল এগারটার দিকে চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ছোট ভেওলা নামক স্থানে দলছুট হাতির আক্রমণে ভিলেজার নিহতের ঘটনা ঘটে। পরে বনবিভাগের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মো. রহমত আলী উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের রিংভং ছগিরশাহকাটা গ্রামের ভিলেজার আবদুস সালামের পুত্র।
কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন বলেন, গতকাল ভোর থেকে ইউনিয়নের ছোট ভেওলার লোকজন দেখতে পায় একটি বন্য হাতি লোকালয়ে হানা দিয়েছে। দলছুট হাতিটি মানুষের বাড়িঘরে আক্রমণের পাশাপাশি ফসলি জমিতেও তাণ্ডব চালাচ্ছে। এই খবর বনবিভাগকে পৌঁছানো হলে হাতিটিকে বনে ফেরাতে তারা কাজ শুরু করে। কিন্তু অসতর্কাবস্থায় একজন হাতিটির সামনে পড়ে গেলে তাকে শুঁরে তুলে আঁছড়িয়ে হত্যা করে। তিনি আরো বলেন, হাতি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মাঝে। অনেকে হাতির আক্রমণের ভয়ে এলাকা ছেড়ে নিরাপদে চলে গেছে।
কৈয়ারবিলের সাথে লাগোয়া বিএমচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন দৈনিক আজাদীকে জানান, দলছুট হাতিটি কৈয়ারবিলের ছোট ভেওলা থেকে বিএমচর ইউনিয়নে ঢুকে পড়ে। এ সময় হাতিটি ইউনিয়নের পাহাড়িয়া পাড়ায় অবস্থান করে এবং একটি বাড়ির সীমানা দেওয়ালও গুঁড়িয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, খাবারের সন্ধানে এসে দলছুট হয়ে পড়া হাতিটি ইতোমধ্যে একজনকে হত্যা করেছে। দিনের বেলা বন্য হাতি কোথাও চলাচল করে না। যখনই মানুষ হাতিটিকে তাড়া করে তখনই সে রাগান্বিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়।
তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থলে বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে বনবিভাগ, পুলিশ ও সাফারি পার্কের কর্মীরা অবস্থান করেছেন। সেই দলে এলিফেন্ট রেসপন্স টিমও (ইআরটি) এবং পার্কের হাতির মাহুতও ছিলো। হাতিটিকে বনে পাঠাতে সকলে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলছুট হয়ে পড়া বন্য হাতিটিকে ফের বনে ফেরাতে যাওয়া ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, গতকাল ভোর থেকে হাতিটি প্রথমে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ছোট ভেওলা, খিলছাদক গ্রামের লোকালয়ে তাণ্ডব চালায়। এ সময় হাতিটিকে বনে ফেরাতে বনবিভাগের লোকজন অকুস্থলে গেলে অসতর্কাবশত অভিযানদলের এক সদস্য (বনজায়গীরদার) সামনে পড়ে গেলে তাকে আঁছড়িয়ে হত্যা করে।
তিনি আরো বলেন, এর পর হাতিটি নদী পার হয়ে চলে যায় পাশের বিএমচর ইউনিয়নের পাহাড়িয়া পাড়া এলাকায়। সেখানেও তাণ্ডব চালায় হাতিটি। বিকেলের দিকে হাতিটি ফের কৈয়ারবিল এলাকায় চলে যায়।
গতকাল রাত ১১ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাতিটিকে বনে পাঠানো সম্ভব হয়নি। হাতিটি পৌর সদররের ২ নং ওয়ার্ডে অবস্থান করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ২
পরবর্তী নিবন্ধজায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত আদালতে স্থগিত