ঘুষ এখন ডলারে, দুদক কী করে, প্রশ্ন হাই কোর্টের

| বুধবার , ৯ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

ঘুষ এখন কেবল টাকায় নয়, ‘ডলারে লেনদেন হচ্ছে’ বলে মন্তব্য এসেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে, এ বিষয়ে দুদক কী করছে, আদালত তা জানতে চেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এক রিট মামলার শুনানিতে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চে এমন মন্তব্য আসে। ‘চাকরি ফিরে পেতে চান কুলাউড়ার জহিরুল: জালিয়াতি করে কারারক্ষী পদে চাকরি ১৮ বছর পর তদন্তে প্রমাণিত! শিরোনামে একটি পত্রিকার প্রতিবেদন যুক্ত করে এই রিট আবেদন করা হয়। খবর বিডিনিউজের।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য ২০০৩ সালে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলেন কুলাউড়ার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম এশু। নিয়োগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয়েছিল। কিন্তু পরে আর যোগদানপত্র না পাওয়ায় চাকরির আশা ছেড়ে শহরে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছর পর তিনি জানতে পারেন, প্রতারণার মাধ্যমে তার নাম পরিচয় ব্যবহার করে ওই পদে চাকরি করছেন আরেকজন। পরে তদন্তে ওই জালিয়াতির সত্যতাও পাওয়া যায়। সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক কামাল হোসেনের নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেলার এজি মাহমুদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল সুপার ইকবাল হোসেনের তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে বলে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে জানানো হয়।

রিটে কারারক্ষী পদে আবেদনকারীর যোগদানপত্র গ্রহণে এবং আবেদনকারীর পদে চাকরি করা অন্য জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে পাঁচ বিবাদীকে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানতে রুল চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। স্বরাষ্ট্র সচিব, কারা মহাপরিদর্শক, কারা উপমহাপরিদর্শক, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার, কারারক্ষী হিসাবে চাকরিরত জহিরুল ইসলামকে সেখানে বিবাদী করা হয়েছে। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের শুনানিতে বলেন, কারাগারের মত স্পর্শকাতর জায়গায় যদি এরকম অনিয়ম হয়, তাহলে তা একটি ‘অশনি সংকেত’। এটা বড় ধরনের অভিযোগ। শুনানির এক পর্যায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, গণমাধ্যমে দেখা যায়, বস্তায় বস্তায় টাকা দিয়ে ঘুষ লেনদেন হয়।

তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, এখানে দুদকের আইনজীবী আছেন, তার সামনেই বলি, এখন আর টাকায় নয়, ঘুষ লেনদেন হয় ডলারে। এ সব বিষয়ে দুদক কী করে? আদালতে হাই কোর্টে শুনানি করেন মো. খুরশীদ আলম খান। সাথে ছিলেন মো. আবুল কালাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরে বাশার সাংবাদিকদের বলেন ‘দুইশ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের জাল-জালিয়াতি বা একজনের জায়গায় আরেকজন শারীরিকভাবে কাজ করছেন বলে গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আসে। এ বিষয়টা যখন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, উনারা গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন এবং এ বিষয়গুলো তদন্ত করেছেন। সেই তদন্তে ২০০ জনের মধ্যে ৮৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ৩ জন পাওয়া গেছে, তারা প্রকৃত ব্যক্তির পরিবর্তে কর্মরত। আবার অনেকে রয়েছেন তারা ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন, যেটা উনার প্রকৃত ঠিকানা নয়।

আইনজীবী বলেন, অনেকে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রে জাল-জালিয়াতি করেছেন। এগুলো ধরা পড়ার পরে ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে যারা এ ধরনের জালিয়াতি করেছেন, এটা কিন্তু ফৌজদারি অপরাধ। আজকে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনিক শিথিল যে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে এটা যথেষ্ট হবে না। কারণ যে ব্যক্তি অন্যের স্থলে চাকরি করছেন, তিনি তো চাকরিই পান নাই। উনাকে কীভাবে কর্মরত রাখেন। চাকরিচ্যুত তো বলা যাবে না, সে চাকরিতে যেন উনি থাকতে না পারেন সে ব্যবস্থা নিয়ে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা উচিত।

আবেদনকারীর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, একজনের পরিবর্তে আরেকজন চাকরি করছেন। আমি বললাম এটা আরেকটা জাহালম কাণ্ড। তখন রাষ্ট্রপক্ষ বলল যে, আপনি কাগজপত্র নিয়ে এসে আমাদের এগুলো বলেন। আজকে রাষ্ট্রপক্ষ বিশাল একটি প্রতিবেদন নিয়ে আসছে। আমরা যে সন্দেহটা করেছি, তার সত্যতা পাওয়া গেছে। ফলে হাই কোর্ট মনস্থির করেছেন রুল জারি করবেন যথাযথভাবে তদন্ত করার জন্য। এরে মধ্যে আমরা বললাম রিটের প্রেয়ারটা কারেকশন করে দিচ্ছি। কাল আদেশের জন্য থাকবে। আশা করি আমরা রুল পাব। আদালত এটা বলেই দিয়েছেন। একে প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ বলেন, আদালত বলেছে, প্রায় সব জায়গায় এ ধরনের করাপশন হচ্ছে। আদালত এখন এটাও মনে করছে, ঘুষ এখন টাকায় দিচ্ছে না, ডলারে দিচ্ছে। ঘুষের নৈরাজ্য চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধঅর্থ আত্মসাৎকারীদের গুলি করা উচিৎ : হাই কোর্ট