ঘুষ!

এমরান হোসাইন | সোমবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীর অনলাইন পত্রিকায় গত কদিন আগে দেখলাম – ঘুষ না নেয়ায় এক রেলওয়ে কর্মচারীকে তাঁর উর্ধ্বতন অফিসার চর-থাপপর মারার অভিযোগ। এরপর প্রথম আলো পত্রিকার শিরোনাম- কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজারের ৪৫হাজার টাকাসহ ম্যানিব্যাগ চুরি! এ দু’ঘটনা দেখে রেলওয়ে কর্তাব্যক্তিদের উদ্বৃত্ত টাকা রাখার হাল-হাকিকত টের পেতে তদন্ত কর্মকর্তাদের বেগ পেতে হবে না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ঘুষ দেয়া -নেয়া দুটো অগ্রহণযোগ্য।

তবে সারা দুনিয়ায় -এ ঘুষ এখন ওপেন সিক্রেট। দেশ ভেদে এর আদান-প্রদান, আইন এর প্রয়োগ তারতম্য রয়েছে। আমেরিকায় এসব দেখভাল করার জন্য ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অফ জাটিস রয়েছে। ধরা পড়লে জান-মান দুটো শেষ। অনেক নামী-দামী প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তি কাটগড়ায় দাঁড়িয়ে শ্রীঘরে যেতে দেখা গেছে। যাক বাংলাদেশ সহ তৃতীয় বিশ্বের নানা দেশের চিত্র ভিন্ন। এখানে ঘুষ কে নানা নামে ডাকা হয় -স্পিড মানি, বখশিস, চা-নাস্তা জন্য কিছু, খুশি করার মাধ্যম, ফাইল চালাচালি, ঈদ-পূজা -পার্বনে এ অনৈতিক কাজ আরও বেড়ে যায়। এটি দুর্নীতি বা ক্রিমিনাল অফেনস।

থানা পর্যন্ত গেলে এর গতি আরও বেড়ে যায়। স্যার আপনি খেলেন তো আমাদের কিছু দেন- এ আওয়াজে যার যত দৌরাত্ম্য (স্পিড মানি) বাড়বে তার সাজা মওকুফ হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশী থাকে। ঘুষ এক সময় টেবিলের নিচে দেয়া হতো। এখন ডিজিটাল জমানা-নানা মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয়। তার মানে এ ঘুষ ঠেকানোর কারো বাবার সাধ্য নেই। এক্ষেত্রে নৈতিকমানের প্রশ্ন জড়িত। আপাতত দৃষ্টিতে (অভিযোগের ভিত্ততে) -বাংলাদেশ রেলওয়ে সিওপিএস পূর্ব দপ্তরের এডিশনাল সিওপিএস-এর দেয়া এ অনৈতিক প্যাকেট (ঘুষ) একই দপ্তরের অফিস সহকারী না নেয়ার বিষয়টি নৈতিক মানোত্তীর্ণ। ঘুষ নেয়া না নেয়া- ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রশ্নও বটে। এ জন্য তাঁকে মারার জন্য উদ্ধত হওয়া ক্রিমিনাল অফেনসসহ ঘুষ দেয়ার চাপ প্রয়োগে দুই অপরাধে অপরাধী অফিসারের সাজা আইনের চোখে দৃশ্যত সমান অপরাধী।

এ চিত্র দেখে কবিগুরুর অক্ষমতা কবিতার কয়টি চরণ মনে পড়লো -এ যেন রে অভিশপ্ত প্রেতের পিপাসা, সলিল রয়েছে পড়ে শুধু দেহ নাই। এ কেবল হৃদয়ের দুর্বল -দূরাশা। কেবল পথের পাণে চেয়ে বসে থাকা। ঘুষ বিহীন সমাজের প্রত্যাশায়। জয় হোক বাংলাদেশের।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে বাস চাই
পরবর্তী নিবন্ধজীবন এমন