ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে সর্বস্তরেই ভোগান্তি দেখা দেবে

| বৃহস্পতিবার , ২ মার্চ, ২০২৩ at ৫:২২ পূর্বাহ্ণ

এ দেশের জনসাধারণ অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলো, বিদ্যুতের দাম সর্বশেষ ৪৭ দিনে বাড়ানো হলো তিন দফা। গতকাল আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়মিত মূল্য সমন্বয়ের অংশ হিসেবে আরেক দফা বাড়ল বিদ্যুতের দাম; খুচরায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে মার্চ মাসের জন্য বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এর ফলে খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে দাঁড়াবে ৮ টাকা ২৪ পয়সা, যা ফেব্রুয়ারিতে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা ছিল। আর জানুয়ারিতে ছিল ৭ টাকা ৪৮ পয়সা। এ বছর ১২ জানুয়ারি থেকে (সর্বশেষ ৪৭ দিনে) তিন দফা বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের খুচরা মূল্য গড়ে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকের জন্য তা বিভিন্ন হারে কার্যকর হবে। মার্চ মাসের বিদ্যুৎবিলের ক্ষেত্রে নতুন এই মূল্যহার কার্যকর হবে বলে মঙ্গলবার বিদ্যুৎবিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। খুচরায় বাড়লেও পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি মার্চ মাসে। ফেব্রুয়ারিতে গড়ে পাইকারি বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়।

দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, আমরা আগেই বলেছি, ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দাম বাড়াতে হবে। আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রয়োজনে মাসে মাসে গ্যাসবিদ্যুতের দাম সমন্বয় করবে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও কমবে।

চলমান সংকটকালে কোনো ধরনের পরামর্শের তোয়াক্কা না করে সব মহলের আপত্তি সত্ত্বেও বিদ্যুতের দাম বাড়ালো সরকার। বিদ্যুতের এমন ঘন ঘন মূল্যবৃদ্ধির খবরে দেশের জনসাধারণ, বিশেষ করে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। কারণ বিদ্যুতের দাম বাড়লে খরচ বাড়বে কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতে। ফলে আরেক দফা বাড়বে দ্রব্যমূল্য। ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি খাত। করোনা মহামারির পর রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে দেশের শিল্প খাত। এ অবস্থায় পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির পর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে সংকটে পড়বে এ খাত। চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অর্থনৈতিক সংকট এখন প্রকট। সেক্ষেত্রে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা উচিত ছিল বলে মনে করি আমরা।

ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে ভোগান্তি দেখা দেবে সর্বস্তরেই। এতে বেড়ে যাবে উৎপাদন খরচ, ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়তে হবে আন্তর্জাতিক বাজারে। তাই বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তাঁরা বলেন, ‘গ্যাসবিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। অন্তত এ বছর বিদ্যুতে সহনীয় পর্যায়ে ভর্তুকির ব্যবস্থা করে দেয়া যায় কিনা তা যদি সরকার ভেবে দেখে তাহলে আমরা টিকে থাকতে পারবো। ইন্ডাস্ট্রি লেভেলে বিদ্যুতের দাম বাড়লে তা সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলবে। চলতি বছর বিদ্যুতের দাম আর না বাড়ালে তা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সহায়ক হবে।’ তাঁরা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক সংকটময় মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো মোটেই ঠিক হয়নি। এতে পোশাকশিল্পসহ শিল্প খাতের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে ব্যাহত হবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

নতুন করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে তা ‘নজিরবিহীন এবং দুঃখজনক’ বলে মনে করে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ। পাশাপাশি ‘লাইফ লাইনের ক্রমাগত ধাপে ধাপে মূল্যবৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত বা প্রক্রিয়া তাতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ভিক্ষুকের ঝুলির দিকে নজর দিচ্ছে’ বলেও মনে করেন সংগঠনটির নেতারা। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের মূল্যও বৃদ্ধি করা হয়েছে জানুয়ারিতে। জ্বালানির ঘন ঘন মূল্যবৃদ্ধি জনসাধারণের জন্য নতুন করে বিষফোঁড়ার মতো।’ তাই বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার ক্ষেত্রে সরকার নতুন করে ভাববেসেটাই আমরা প্রত্যাশা করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে