চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে তিনি ‘গ্রিন মামা’ নামে পরিচিত। সবাই জানে তিনি গণপরিবহনের লাইনম্যান। কিন্তু এ পেশার আড়ালে তিনি যে ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতা হিসেবে কাজ করেন, তা ধরা পড়ার আগে অনেকেই জানতেন না। মূলত ছিনতাইকারী তথা অপরাধীরা কাজে যাওয়ার আগে তার গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকে বলেই তাদের কাছে তিনি গ্রিন মামা নামে পরিচিত। তার প্রকৃত নাম জাহাঙ্গীর। তাকে ধরতে ছদ্মবেশে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ।
নগরীর চৌমুহনী মোড়ে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা আধ ঘণ্টা নজরদারির পর আটক করেন গণপরিবহনের লাইনম্যান জাহাঙ্গীরকে। ভোরে নির্জন সড়কে বা আশপাশে পুলিশ নেই, সেই গ্রিন সিগন্যাল দিতেন তিনি ছিনতাইকারীদের। সড়কে পুলিশ আছে কি নেই, ছিনতাইকারীদের সেই সিগন্যাল দেন তিনি ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে।
সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (বন্দর জোন) আরিফুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীরের মূলত কোনো কাজ নেই। সারাদিন চায়ের দোকানে বসে থাকে আর রাস্তায় পুলিশ আছে কিনা সেই তথ্য সরবরাহ করে ছিনতাইকারীদের। আটকের আধ ঘণ্টা আগেও যথারীতি গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছিল জাহাঙ্গীর। সে অনুযায়ী ছিনতাইকারীরা লোকাল বাসে উঠে ৮টি মোবাইল ফোনও হাতিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলেন, ৮–১০ জন নিজেরা হট্টগোল করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেয়। এরপর তাকেই চোর সাব্যস্ত করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয় বা সেই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
এদিকে, ‘গ্রিন মামা’কে নিয়ে অভিযানের একপর্যায়ে ১১ সদস্যের তুষার গ্রুপের সন্ধান পায় পুলিশের অভিযান দলটি। রিকশা নিয়ে টার্গেট খুঁজছিল চক্রটি। হঠাৎ পুলিশের নজরদারি আঁচ করতে পেরে পালিয়ে যায় তুষারসহ ৮ ছিনতাইকারী। তাদের মধ্যে থেকে ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। চক্রটির টার্গেট মূলত লোকাল বাসের যাত্রীরা। ছিনতাইয়ের নতুন নতুন সব কৌশল বের করে তারা।
সহকারী পুলিশ কমিশনার (বন্দর জোন) আরিফুল ইসলাম বলেন, সকালে যখন মানুষ অফিসে যায়, তখন গ্রুপটি ঠেলাঠেলি করে বাসে ওঠে। এ সময়ের মধ্যে কখন তারা মানুষের মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনতাই করে নেয় তা কেউ টের পায় না। চট্টগ্রামে সক্রিয় ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে আরও একজন গ্রিন মামার সন্ধান পেয়েছিল র্যাব–৭। র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার বলেন, গত বছর ১৭ অক্টোবর আব্দুল মালেক নামে সেই গ্রিন মামাকে গেপ্তার করেছিল র্যাব। তিনি পতেঙ্গা সৈকতে নাইটগার্ডের কাজ করতেন। নাইটগার্ডের আড়ালে গড়ে তুলেছিলেন ইয়াবা সাম্রাজ্য। তার সংকেত পেলেই পতেঙ্গায় লোড–আনলোড হয় ইয়াবার চালান। মালেক দীর্ঘদিন ধরে মাদকের কাজে জড়িত ছিলেন। তার ইশারায় স্পিড বোট ইয়াবা নিয়ে সৈকতে আসত। পরে ইয়াবাগুলো তিনি বিক্রি করতেন। তার সহযোগী নিজাম উদ্দিন ছিলেন মূলত স্পিড বোটের চালক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় থাকার পর গার্মেন্টসে চাকরি নেন। তবে ছুটির দিনে অবৈধ মাদক পাচারে ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করতেন।