গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত না

| বৃহস্পতিবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি কমিটি পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এক মাসের মধ্যে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ইউনিট প্রতি ভারিত গড়ে এক টাকা ১০ পয়সা বা ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, কারিগরি কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ভারিত গড়ে বিদ্যমান খুচরা মূল্য ৭ টাকা ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৩ পয়সা করা যেতে পারে। গত রোববার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সঞ্চালন সংস্থা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গণ শুনানি শেষে এ তথ্য জানানো হয়।

এক্ষেত্রে এনার্জি রেট বৃদ্ধির পাশাপাশি বিতরণ ব্যয় বৃদ্ধির হিসাব বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলছে বিইআরসি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের দাম সব পর্যায়ে বাড়ানো হয়। তখন পাইকারিতে দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বেড়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা হয়। বাড়তি ওই ১ টাকা ৩ পয়সা থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এনার্জি চার্জ বাবদ আট হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় করবে বিদ্যুতের একক বিক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- পিডিবি। এই বাড়তি ব্যয়ের চাপ কমানোর পাশাপাশি বিতরণ ব্যয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো।

নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামের প্রভাবে অসহনীয় মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোকে মড়ার ওপর খাড়ার ঘা বলে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসিতে রোববার অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভুল নীতি থেকে বেরিয়ে আসার ওপর জোর দিয়েছেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, ডিসেম্বর থেকে পাইকারি বিদ্যুতের দাম প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর পরই গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রশ্নে যে অনমনীয়- তা স্পষ্ট হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সামপ্রতিক কয়েকটি বক্তব্যে। হঠাৎ বিইআরসি আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়ানো বা কথিত সমন্বয়ের ক্ষমতা সরকারের এখতিয়ারে নেওয়ার মধ্যেও সরকারের এহেন বেপরোয়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে যে আট হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়েছে, তা সাধারণ ভোক্তাদের ওপর চাপানোর পরিস্থিতি নেই। কারণ বৈশ্বিক মন্দার কারণে ইতোমধ্যে জনগণ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন আয়-ব্যয়ের খাতকে ওঠানামা করিয়েও এই বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করা সম্ভব। কমিশন চাইলে তিনি কোম্পানিভিত্তিক হিসাব করে দেখিয়ে দিতে পারেন।

বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে অর্থনৈতিক সংকট এখন প্রকট। সে ক্ষেত্রে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে তাঁরা বলছেন, গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি যদি এক বছর পরে করা হয়, তা হলে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে। অন্যথায় বাজারের যে সার্বিক অবস্থা, গ্রাহক পর্যায়ে এখন দাম বাড়ালে ভোক্তাদের ওপর দ্বিগুণ চাপ পড়বে। এখন এমনিতেই সবকিছুর দাম বেশি।

এ সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোই উচিত হবে। মূলত বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এ খাতের সিস্টেম লস দূর করার বিষয়ে মনোনিবেশ করা উচিত সরকারের। তা হলে এ খাতের অপচয় দূর হবে। বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর দায় চাপছে গ্রাহকদের ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে আক্ষরিক অর্থেই সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে আমাদের। একদিকে করোনার ক্ষত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদিতে নাকাল হয়ে আছে মানুষের জীবন। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কোনোক্রমেই বাড়ানো উচিত হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে