সাতকানিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ খালেদা বেগমও মারা গেছেন।
রাজধানী ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার (১৪ জুলাই) রাতে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার রাতে ড্রাইভার মো. হেলাল উদ্দিন ও সোমবার রাতে মো. দেলোয়ার হোসেন মারা যান।
একই ঘটনায় দগ্ধ খালেদা বেগমের পুত্র মো. শাহনেওয়াজের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাতে সাতকানিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের চরপাড়া জিন্নাত আলী সিকদার বাড়ির মৃত হামিদ আলীর পুত্র সৈয়দ আহমদের রান্না ঘরে গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে সৃষ্ট আগুনে খালেদা বেগম সহ ৫ জন দগ্ধ হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে মারা যাওয়া খালেদা বেগম চরপাড়ার জিন্নাত আলী সিকদার বাড়ির সৈয়দ আহমদের মেয়ে ও লোহাগাড়ার কিল্লার আন্দর এলাকার মো. শাহ আলমের স্ত্রী।
সাতকানিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল আলম সোহেল জানান, সৈয়দ আহমদ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনু ফকিরের দোকান এলাকা থেকে বাড়ির জন্য পদ্মা কোম্পানির একটি গ্যাস সিলিন্ডার নেন।
ওই দিন রাত সাড়ে দশটার দিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেড়াতে আসা তার মেয়ে খালেদা বেগম রান্না ঘরে গেলে গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হন।
এসময় খালেদার চিৎকার শুনে ঘরে থাকা তার স্বামী লোহাগাড়ার কিল্লার আন্দর এলাকার মো. শাহ আলম ও তাদের পুত্র মো. শাহনেওয়াজ দৌড়ে গিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। তখন তারা দুইজনও দগ্ধ হন।
এক পর্যায়ে দগ্ধ স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের আর্তচিৎকার শুনে প্রতিবেশী ড্রাইভার মো. হেলাল উদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন ছুটে গিয়ে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা চালান। এসময় হেলাল ও দেলোয়ারও দগ্ধ হন।
পরে খবর পেয়ে সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পানি নিক্ষেপ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর দগ্ধ হয়ে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দ্রুত তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরে ওইদিন রাতেই তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতাল থেকে ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন মো. হেলাল উদ্দিন, মো. দেলোয়ার হোসেন ও খালেদা বেগম মারা যান।
দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া খালেদা বেগমের ছোট ভাই এডভোকেট মো. শাহজাহান বলেন, “গতকাল রাত দশটার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার বোন মারা গেছেন। আমার ভাগিনা শাহনেওয়াজের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বোনের মরদেহ নিয়ে রাতেই ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “পদ্মা কোম্পানির একটি গ্যাস সিলিন্ডার আমাদের পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে কেড়ে নিয়েছে তিনটি তাজা প্রাণ। হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে আমার ভাগিনা।”
এডভোকেট মো. শাহজাহান আরো জানান, গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে সৃষ্ট আগুনে দগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যে তিনজনের মৃত্যু হলেও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা কোনো ধরনের খোঁজখবর রাখেননি। এটা খুবই দুঃখজনক।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল মজিদ ওসমানী বলেন, “গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে সৃষ্ট আগুনে মোট পাঁচজন দগ্ধ হয়েছিল। তাদের মধ্যে চারজনের শ্বাসনালীর খুব বেশি ক্ষতি হয়েছিল। আর আগুনে পোড়াদের মধ্যে শ্বাসনালীর ক্ষতিটা সবচেয়ে বিপজ্জনক। শ্বাসনালীর ক্ষতি হওয়াতে আমরা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করেছিলাম। শুনেছি পরে তাদের ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়।”