গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও সংযোগ দিচ্ছে না কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল)। ২২ হাজার আবেদনকারীর ২৫ কোটি টাকা নেয়ার পর অর্ধ যুগ পার হয়েছে। কিন্তু গ্যাস সংযোগের সমাধান আসেনি। ওইসব গ্রাহকের প্রশ্ন, গ্যাস সংযোগের সমাধান কবে হবে?
এদিকে তিন শতাধিক আবেদনকারীর পুনঃসংযোগের জরিমানার অর্থ নিয়েও গ্রাহকদের ঝুলিয়ে রেখেছে কেজিডিসিএল। তিতাস ও জালালাবাদসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের গ্যাস কোম্পানিগুলো জরিমানা নিয়ে পুনঃসংযোগ দিলেও চট্টগ্রামের গ্রাহকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
জানা যায়, গ্যাস সংযোগের জন্য ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার ২২ হাজার গ্রাহক নিজেদের বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেন।
গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে ২২ হাজার গ্রাহকের কেউ ১ লাখ টাকা, কেউ ৫০ হাজার, কেউ ৩০ হাজার টাকা সংযোগ ফি জমা দিয়েছেন। মূল গ্যাস সরবরাহ লাইন থেকে সংযোগস্থলের দূরত্বের উপর টাকার অংক হেরফের হয়। গ্যাস লাইনের পাইপের অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়ার কারণে দূরত্ব ভেদে টাকা পরিশোধ করতে হয়। চট্টগ্রামের ২২ হাজার গ্রাহকের প্রায় ২৫ কোটি টাকা নেয়ার পর আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু যাদের কাছ থেকে আগে টাকা নেয়া হয়েছে, যাদের নামে আগে ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছে, তাদেরকে সংযোগ না দিয়ে দিনের পর দিন ঘোরানো হচ্ছে।
চট্টগ্রামের অনেক গ্রাহক বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধর্না দিয়েও সদুত্তর পাননি। এমনকি ডিমান্ড নোটের বিপরীতে দেওয়া টাকাও ফেরত পাননি। আবাসিক সংযোগসহ বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগের দাবিতে গ্রাহকেরা বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করেছে ঠিকাদার ও গ্রাহক ঐক্য পরিষদ। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রাম ও আবেদন-নিবেদনেও কর্ণফুলী গ্যাসের সাড়া মিলেনি।
এদিকে চট্টগ্রামে শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতের তিন শতাধিক পুনঃসংযোগের আবেদন বছরের পর বছর ঝুলে আছে। এসব গ্রাহকের কাছ থেকেও পুনঃসংযোগের জরিমানাসহ ডিমান্ড নোট আদায় করা হয়েছে। বিশেষ করে সময়মতো বিল পরিশোধ না করা, বাড়তি চুলা জ্বালানো, বাড়তি বার্নার জ্বালানোসহ নানা কারণে এদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের হাজার হাজার গ্রাহক বর্তমানে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় গ্যাস ব্যবহার করছে। একটি মিটারের আওতায় সংশ্লিষ্ট গ্রাহক যে পরিমাণ টাকার গ্যাস আগাম কিনে নেন শুধু ওই গ্যাসই তিনি জ্বালাতে পারেন। চুলা সিঙ্গেল নাকি ডাবল বার্নার তার ওপর কিছু নির্ভর করে না। অথচ মিটারের আওতাধীন সিঙ্গেল বার্নার চুলার স্থলে ডাবাল বার্নার পাওয়ায় অনেক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আবার কারো বাসায় ১২টি চুলার অনুমোদন রয়েছে। ওই গ্রাহক অন্যায়ভাবে একটি বাড়তি চুলা জ্বালালে সেখানেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে অবৈধ একটি চুলার জন্য বৈধ ১২টি চুলাও বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় শিল্প কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী এসব গ্রাহককে জরিমানা করে পুনঃসংযোগ দেয়ার বিধান রয়েছে।
কেজিডিসিএলের আওতাধীন এই ধরনের তিন শতাধিক গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে শিল্প, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক সংযোগ রয়েছে। এসব চুলার সংযোগ দিতে জরিমানা প্রদানের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকেরা ডিমান্ড নোটের বিপরীতে টাকা পরিশোধ করেও সংযোগ পাচ্ছেন না। তাদেরকে বছরের পর বছর ঘোরানো হচ্ছে। অন্যান্য কোম্পানিতে জরিমানা নিয়ে এই ধরনের পুনঃসংযোগ দেওয়া হলেও কর্ণফুলীতে আবেদনের স্তূপ বড় হয়েছে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন সংযোগের বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্টে রিট রয়েছে। তাই আমরা কোনো তথ্য বা মতামত দিতে পারব না। পুনঃসংযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, জরিমানা নিয়ে পুনঃসংযোগ দিতে হলে কোম্পানির বোর্ড সভার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার বোর্ড সভা হয়েছে। বিষয়টি এজেন্ডায়ও ছিল। কিন্তু অনুমোদন না পাওয়ায় পুনঃসংযোগের আবেদনগুলো ঝুলে আছে।