গ্যাস সংকটে বাড়বে সার আমদানি

হাসান আকবর

| রবিবার , ১১ জুন, ২০২৩ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

গ্যাস সংকটে উৎপাদনে ধস নামায় বিপুল পরিমাণ সার আমদানি করতে হবে। প্রতিবছর হু হু করে চাহিদা বাড়লেও দেশে সারের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বাড়ছে আমদানি। আসন্ন কৃষি মৌসুমকে সামনে রেখে ৫০ লাখ টনেরও বেশি রাসায়নিক সার আমদানি করতে হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের কৃষি খাতে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে রাসায়নিক সার। ধানসহ প্রতিটি ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এ সার। এরমধ্যে বেশিরভাগই ইউরিয়া। ইউরিয়া উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। ইউরিয়া সার কারখানায় প্রাকৃতিক গ্যাস শুধু জ্বালানিই নয়, গ্যাস থেকেই উৎপাদিত হয় সার। কিন্তু গত বছর জুড়ে গ্যাসের হাহাকারের ফলে দেশে ইউরিয়া সার উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে সিইউএফএলএর মতো বড় সার কারখানা প্রায় পুরো বছর বন্ধ ছিল। এর বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানের বাকি ৬টি ইউরিয়া কারখানাও গ্যাস সংকটে ভুগেছে। ফলে ইউরিয়া সার উৎপাদন নানাভাবে ব্যাহত হয়েছে। অন্যান্য রাসায়নিক সারের উৎপাদনও স্বাভাবিক গতিতে ছিল না। গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সার আমদানি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) দেশের সারের ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করে। বিসিআইসির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, দেশে সার উৎপাদন কমেছে। আগেও প্রচুর সার আমদানি করতে হয়। দেশের প্রয়োজনীয় ৮০ শতাংশ রাসায়নিক সারই আমদানি হয়ে থাকে। গ্যাসের যোগান কমায় এবার তা আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দেশে বর্তমানে প্রায় ৭০ লাখ টন সার আমদানি করতে হয় বলে উল্লেখ করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার আমদানি করা হয়। চীন, সৌদি আরব, কাতার, মরক্কো, রাশিয়া ও তিউনেশিয়া থেকে দেশে টিএসপি ও ডিএপি আমদানি করা হয়। রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে আমদানি করা হয় দেশের প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ এমওপি সার। কানাডা থেকেও আমদানি করা হয় প্রয়োজনীয় এমওপি সারের ৪০ শতাংশের বেশি।

তিনি দেশে ৮ লাখ টনের মতো ইউরিয়া উৎপাদিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, এর বাইরে আরো ১৬ লাখ টনের মতো সার আমদানির মাধ্যমে দেশের চাহিদা মোকাবেলা করা হচ্ছে। দেশে টিএসপি সার উৎপাদিত হয়েছে ৭০ হাজার টনের মতো। এর বাইরে অন্তত ৭ লাখ টন টিএসপি সরকারিবেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা হচ্ছে। ডিএপি সার উৎপাদন করা হয়েছে ১ লাখ টনের মতো। আমদানি করা হচ্ছে প্রায় ১৭ লাখ টন সার। এমওপি সার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাহিদার প্রায় ৯ লাখ টন সারের পুরোটাই আমদানি করা হচ্ছে।

এই বিপুল পরিমাণ সার আমদানিতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, গ্যাসের অভাবে সার আমদানিতে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তবে গ্যাস সংকটের মুখেও দেশে সারের কোনো অভাব নেই বলে মন্তব্য করে ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার খুবই দক্ষতার সাথে সারের ব্যাপারটি হ্যান্ডলিং করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা নিয়ে মোংলায় চীনা জাহাজ
পরবর্তী নিবন্ধষষ্ঠবারের মতো সভাপতি হলেন খলিলুর রহমান