দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোনসহ মীরসরাই এলাকায় একাধিক বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলেও গড়ে উঠেছে বহু নতুন নতুন ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। মীরসরাই অঞ্চল রয়ে গেছে গ্যাস নেটওয়ার্কের বাইরে। সীতাকুণ্ড অঞ্চলে হু হু করে বাড়ছে গ্যাসের ব্যবহার। দিনে দিনে গ্যাসের ব্যবহার এবং চাহিদা বাড়লেও ৩৩ বছরের পুরনো পাইপ লাইন দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এলএনজি আমদানির পর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের যোগান বাড়ানোর সক্ষমতা পেলেও শুধুমাত্র পাইপ লাইনের কারণে পারছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ২১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ফৌজদারহাট থেকে বারৈয়ারহাট পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারের একটি পাইপ লাইন নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা কেবলই বিলম্বিত হচ্ছে। সীতাকুণ্ড এবং মীরসরাই শিল্পাঞ্চলের গ্যাস সংকট ঘুচাতে নেয়া প্রকল্পটি মালামাল ক্রয়ের টেন্ডার হলেও অবকাঠামোগত নির্মাণের টেন্ডার এখনো হয়নি। এতে করে কবে নাগাদ মালামাল ক্রয় হবে কিংবা তা স্থাপিত হয়ে পাইপ লাইনে গ্যাস যাবে তা অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। তবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রকল্পটির কাজ শুরু হতে বছর দুয়েক লাগতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন।
সূত্র জানায়, মীরসরাই ইকোনমিক জোন দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে গড়ে উঠছে অসংখ্য ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই কমবেশি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু মীরসরাই অঞ্চলের শিল্প কারখানা এখনো গ্যাস নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। অপরদিকে শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডে অসংখ্য মাঝারী এবং ছোট শিল্প কারখানার পাশাপাশি বহু ভারী শিল্প কারখানাও রয়েছে। এ সব কারখানায় গ্যাসের সংযোগ থাকলেও যোগান দেয়া কঠিন হয়ে উঠছে। দিনে দিনে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যমান সড়ক দিয়ে চাহিদানুযায়ী গ্যাস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র বলেছে, সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলে ১৯৮৮ সালে প্রথম গ্যাস সরবরাহ দেয় বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড। ফৌজদারহাট থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত কোথাও ১০ ইঞ্চি এবং কোথাও ৮ ইঞ্চি একটি পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। গত ৩৩ বছর ধরে এই পাইপ লাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন দিয়ে বর্তমানে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড দৈনিক সর্বোচ্চ ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিতে পারে। কিন্তু দিনে দিনে শিল্প কারখানা, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন, রি রোলিং মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীতাকুণ্ডে বর্তমানে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। মীরসরাই অঞ্চলের কারখানাগুলো গ্যাস সরবরাহ নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হলে গ্যাসের চাহিদা আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বিদ্যমান গ্যাস পাইপ লাইন দিয়ে সীতাকুণ্ড এবং মীরসরাই এলাকার চাহিদা পূরণ মোটেই সম্ভব নয়।
এই অবস্থায় সীতাকুণ্ড এবং মীরসরাই এলাকার গ্যাসের
চাহিদা মেটাতে ফৌজদারহাট থেকে বারৈয়ারহাট পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারের একটি পাইপ লাইন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। ফৌজদারহাট-সীতাকুণ্ড-মীরসরাই এলাকার গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ২১৩ কোটি টাকা। ১৫০ পিএসআইজি চাপের ২০ ইঞ্চি ব্যাসের এই পাইপ লাইনটি দিয়ে সীতাকুণ্ড এবং মীরসরাই অঞ্চলের বর্তমানের ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের আরো অনেক বছরের জন্য নিশ্চিত থাকা যাবে। এই ধরনের পাইপ লাইন দিয়ে অনায়াসে ১০০
মিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশি গ্যাস সরবরাহ দেয়া সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির মালামাল ক্রয়ের টেন্ডার হয়েছে। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যায়ন করে কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে অবকাঠামোগত নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার এখনো আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। এটি কবে নাগাদ হবে তাও অনিশ্চিত। মালামাল ক্রয় করে তা স্থাপন করার মাধ্যমেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। তবে দুইটি টেন্ডার সম্পন্ন করে ঠিক কতদিনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। অবশ্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশিন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বছর দুয়েকের মধ্যে কাজটি হতে পারে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হলে মীরসরাই অঞ্চলকে গ্যাস নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সীতাকুণ্ড পর্যন্ত বিদ্যমান যে পাইপ লাইনটি রয়েছে তা বন্ধ করে দিতে হবে। এই লাইনের বহু অংশ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিচে চাপা পড়েছে। লাইনের বহু বাল্বই ব্যস্ত মহাসড়কের নিচে। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে এই লাইন মেরামত বা বন্ধ করা কঠিন। তাই এই লাইনটির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নতুন লাইনেই সীতাকুণ্ড এবং মীরসরাই অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ দিতে হবে। তাই প্রকল্পটি যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে ততই মঙ্গল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।