গ্যাসের দাম বৃদ্ধি : ভোক্তার ওপর আরও চাপ তৈরি হবে

| শনিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

সরকারের নির্বাহী আদেশে এবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলো। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এ দফা শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রতি ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৯ টাকা পর্যন্ত। নতুন দাম ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তবে গৃহস্থালীতে রান্নার গ্যাস এবং গাড়ি চালাতে ব্যবহৃত সিএনজির দাম বাড়ানো হয়নি।

সার উৎপাদন ও চা শিল্পও এ যাত্রা রেহাই পেয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, বৃহৎ শিল্প খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে প্রায় তিন গুণ বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। মাঝারি শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।

শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা। হোটেল ও রেস্তোরাঁর মত বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম আগে ছিল ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা। এখন তা বেড়ে হল ৩০ টাকা ৫০ পয়সা। সার কারখানায় প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম আগের মতই ১৬ টাকা এবং চা শিল্পে ১১ টাকা ৯৩ পয়সা থাকছে।

এছাড়া রান্নার গ্যাসের জন্য আগের মতই দুই চুলায় (ডাবল বার্নার) মাসিক ১০৮০ টাকা এবং এক চুলায় ৯৯০ টাকা বিল দিতে হবে গ্রাহকদের। সিএনজি স্টেশনেও গ্যাসের দাম আগের মত প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা থাকছে। গণশুনানির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গতবছর ৪ জুন সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনবিইআরসি। সে সময় প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পাইকারি দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়েছিল। সেই মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে খুচরা পর্যায়ে যানবাহনে ব্যবহারের সিএনজি বাদে সব পর্যায়েই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়।

বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এখন বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বাড়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে বাজারে পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতিকে এটি আরও উসকে দিতে পারে। গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধির চাপও আদতে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপরই।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পর এবার গ্যাসের মূল্য প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধিসরকারের গণবিরোধী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করে চরম দুর্ভোগে থাকা জনগণকে সরকার সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সরকার নির্বাচিত নয় বলে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। মানুষের পকেট কাটতে এবং একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে অবৈধ সরকার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম পত্রিকান্তরে বলেন, মূল্যবৃদ্ধি নয়, দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমেই টেকসই সমাধান রয়েছে। এখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। এতে ভোক্তার ওপর আরও চাপ তৈরি হবে। দাম সমন্বয় মানে ভোক্তার ওপর বাড়তি দামের দায় চাপানো নয়। সরকারের নীতি সংশোধন না করে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অনৈতিক।

আগে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে গ্যাসের দাম আলাদা ছিল। এবার সবার জন্য একই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি শিল্পে নিজস্ব বিদ্যুতের জন্যও একই করা হয়েছে গ্যাসের দাম। এতে এ চার শ্রেণির গ্রাহকের জন্য নতুন দাম করা হয়েছে ইউনিটপ্রতি ৩০ টাকা।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, আগে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে গ্যাসের দাম আলাদা ছিল।

এবার সবার জন্য একই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি শিল্পে নিজস্ব বিদ্যুতের জন্যও একই করা হয়েছে গ্যাসের দাম। এতে এ চার শ্রেণির গ্রাহকের জন্য নতুন দাম করা হয়েছে ইউনিটপ্রতি ৩০ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গ্রাহকদের। এরপর মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। গত আগস্টে জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির (সাড়ে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ) পর বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এখন বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বাড়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের খরচ বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে