চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নতুন প্রস্তাবিত গোঁয়াছি বাগান এলাকার জায়গাটিতে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপন করা সম্ভব বলে মতামত দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। তবে প্রস্তাবিত এ জায়গাটির নতুন করে সীমানা স্পষ্টকরণ এবং সেখানে থাকা বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা স্থানান্তর বা সরানোর বিষয়ে আরো তথ্য চেয়েছে তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) প্রদত্ত এক চিঠিতে চীনা কর্তৃপক্ষ দ্রুত এসব তথ্য জানানোর পরামর্শ দিয়েছে। ঢাকাস্থ চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে চায়না কিউওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে গত ৪ জুলাই এ চিঠি দেয়া হয়। চাইনিজদের পক্ষ থেকে ইআরডি-তে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন সারাদেশে বার্ন চিকিৎসা সমপ্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল সেন। আর দাফতরিক ভাবে হাতে না পেলেও এ সংক্রান্ত চিঠির বিষয়ে অবগত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, আমরা ৪/৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হাসপাতালের উপ-পরিচালককে আহ্বায়ক এবং বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধানকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি করা হবে। ওই কমিটি প্রস্তাবিত জায়গাটির নতুন করে সীমানা স্পষ্টকরণ (ম্যাপসহ) এবং স্থাপনা সরানোর বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে, কাজ করবে।
এদিকে, প্রস্তাবিত জায়গায় বৈধ কোনো স্থাপনা নেই বলে জানিয়েছে চমেক হাসপাতাল প্রশাসন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য-ওই জায়গায় হাসপাতালের কয়েকটি স্টাফ কোয়ার্টার ছিল। তবে সেগুলো বেশ কয়বছর আগে থেকেই পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে।
এর বাইরে হাসপাতালের বৈধ কোনো স্থাপনা সেখানে নেই। যদিও সেখানে শতাধিক অবৈধ বসতি/স্থাপনা গড়ে উঠেছে জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, আমরা যে কোনো মুহূর্তে অবৈধ এসব বসতি/স্থাপনা সরানোর ব্যবস্থা নেব।
এর আগে গত ১১ জুন চীনের দুই প্রকৌশলী এসে গোঁয়াছি বাগান এলাকায় নতুন প্রস্তাবিত জায়গাটি পরিদর্শন করেন। এ সময় চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ, হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত, গণপূর্ত বিভাগের (ইমারত-১) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাহেদুন নবী চৌধুরীসহ অন্যান্যরা সাথে ছিলেন। হাসপাতালের আওতাভুক্ত চট্টেশ্বরী সড়কের পার্শ্ববর্তী গোঁয়াছি বাগান এলাকা এবং চট্টেশ্বরী সড়কের প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পার্শ্বে খালি জায়গা ঘুরে দেখানো হয় তাদের। পরিদর্শনকালীন প্রস্তাবিত জায়গার ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণ করেন চীনের দুই প্রকৌশলী। তারও আগে (৬ জুন) ডা. সামন্ত লাল সেনও সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে প্রস্তাবিত এ জায়গা পরিদর্শন করেন।
প্রসঙ্গত, বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে অতি সমপ্রতি নতুন চারটি সাইট নির্ধারণ করে প্রস্তাবনা পাঠায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সব সাইটের মধ্যে রয়েছে- হাসপাতালের আওতাভুক্ত চট্টেশ্বরী সড়কের পার্শ্ববর্তী গোঁয়াছি বাগান এলাকা, চট্টেশ্বরী সড়কের প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পার্শ্বে খালি জায়গা, হাসপাতালের পিছন দিকে অঙিজেন প্লান্ট সংলগ্ন খালি জায়গা ও হাসপাতালের এনসিলিয়ারি ভবনের পশ্চিম পার্শ্বের (ডা. মিজান হোস্টেলের উত্তর দিকে) খালি জায়গা। তবে প্রথম দুটি সাইট (গোঁয়াছি বাগান ও প্রধান ছাত্রাবাসের পার্শ্ববর্তী) হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল সংলগ্ন দুটি সাইটে জায়গার পরিমাণ পর্যাপ্ত নয় বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় শেষের দুটি প্রস্তাবনা (হাসপাতাল কম্পাউন্ডে) ভাবনা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। আর গোঁয়াছি বাগান টার্গেট রেখেই এ প্রস্তাবনা এগিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে ১১ জুন চাইনিজ টিমের দুই প্রকৌশলীকে গোঁয়াছি বাগানে প্রস্তাবিত জায়গা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী- প্রস্তাবিত ২ নম্বর সাইটে প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পার্শ্বে বা পিছনের জায়গাটিতে (গোঁয়াছি বাগান এলাকার) বিশেষায়িত এই বার্ন ইউনিট স্থাপন করা সম্ভব বলে মতামত দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। ইউনিটটি স্থাপনে মোট সাড়ে তিন হাজার বর্গ মিটার জায়গার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
ইআরডি-কে প্রদত্ত চিঠিতে চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- তাদের বিশেষজ্ঞ দল প্রস্তাবিত চারটি সাইটেরই সম্ভাব্যতা পর্যালোচনা করেছে। এর মধ্যে জায়গা স্বল্পতার কারণে তিনটি সাইট (১, ৩ ও ৪ নম্বর) বার্ন ইউনিট স্থাপনে উপযুক্ত নয়। প্রস্তাবিত ২ নম্বর সাইটটিতে বার্ন ইউনিট স্থাপন করা সম্ভব। তবে সাইটটির সীমানা ম্যাপসহ পুনরায় স্পষ্টকরণের পাশাপাশি সেখানে থাকা বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা স্থানান্তর বা সরানোর বিষয়ে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে চিঠিতে। চাহিত তথ্য পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ দলের সমন্বয়ে পরবর্তী অগ্রবর্তীমূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও চিঠিতে জানিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালে বাতিল হওয়া ১শ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপন প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা আগের জায়গাতেই (হাসপাতালের পিছনের অংশে) বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতাল স্থাপনে পুনরায় প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল। তবে একই জায়গাতে দেয়া সে-ই প্রস্তাবনাও বাতিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবনা বাতিলের বিষয়টি অবহিত করে প্রকল্পটির জন্য অন্যত্র জায়গা নির্ধারণে ফের নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গত ২৭ এপ্রিল এ সংক্রান্ত চিঠি চমেক হাসপাতাল পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) ডা. আফরিনা মাহমুদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিকল্প সাইট (ভূমি) নির্ধারণ পূর্বক পুনরায় প্রস্তাব প্রেরণের জন্য বলা হয়। চিঠি পাওয়ার পরপরই (২৮ এপ্রিল) বিকল্প সাইট (ভূমি) নির্ধারণসহ নতুন প্রস্তাবনা প্রস্তুতে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. অংসুই প্রু মারমাকে আহ্বায়ক এবং বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমদকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়। এ ছাড়া হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজিব পালিত, গণপূর্ত বিভাগের (ইমারত-১) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাহেদুন নবী চৌধুরী, হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (জেনারেল) ডা. মঈন উদ্দিন মাহমুদ ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামকে কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়। প্রস্তাবিত বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে চারটি বিকল্প সাইট নির্ধারণ করে এ কমিটি। কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত চারটি সাইটের প্রস্তাবনা চূড়ান্তের পর সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠায় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরই চীনের দুই প্রকৌশলী এসে প্রস্তাবিত সাইটগুলো পরিদর্শন করেন।