গৃহকর নিয়ে অস্থিরতা : চসিককে নতুন করে ভাবতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

গৃহকর নিয়ে চট্টগ্রামে অস্থিরতা চলছে। এই কর কীভাবে কমানো যায়, তার দেন-দরবার চলছে সমানে। আজাদীতে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে নানা অভিযোগ নিয়ে। গত ২৫ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব শাখার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত পৌরকর (গৃহকর ও রেইট) আপিলে কমানোর নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমনকি বিনামূল্যের আপিল ফরমও বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যদিও তা বার বার অস্বীকার করে আসছিল সংশ্লিষ্টরা। তবে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এক ডজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে যারা করদাতাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়িত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই ১২ কর্মকর্তার নামের তালিকা ইতোমধ্যে চসিকে প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ডে কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অভিযুক্তদের মধ্যে অস্থায়ীভাবে কর্মরত দুইজনকে চাকরিচ্যুত এবং ১০ জনকে শোকজ করার জন্য গত সোমবার চূড়ান্ত অনুমোদনও দিয়েছেন মেয়র। বিষয়টি নিশ্চিত করে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। যাদের শোকজ করা হবে তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে তাদেরও চাকুরিচ্যুত করা হবে। কোনো ধরনের অনিয়ম আমরা প্রশ্রয় দিব না। যারা যারা অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি হোল্ডিং ট্যাক্সের আপিল নিয়ে কারো সঙ্গে অনৈতিক লেনদেন না করার জন্য নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
নগর বিশ্লেষকরা বলেন, দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে হাতেগোনা যে-কয়টি নগরবাসীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ পৌরকর নিয়ে থাকে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন; যার করের পরিমাণ ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স, ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন এবং ৭ শতাংশ আবর্জনা অপসারণের জন্য আদায় করা হয়। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ১২ শতাংশ হারে পৌরকর আদায় করে। সেই হিসাব অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের চেয়েও ৫ শতাংশ বেশি পৌরকর দিচ্ছেন বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দারা। কিন্তু এতদিন যাবত বাড়তি কর দিয়েও প্রয়োজনীয় সেবার অনেক কিছুই পাচ্ছেন না বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ নগরবাসীর। তাঁরা অভিযোগ করেন, ৭ শতাংশ কর আবর্জনা অপসারণের জন্য আদায় করা হলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়ম-ভোগান্তি, বাড়তি টাকা দিয়ে বর্জ্য অপসারণ, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখার মতো বিস্তর অভিযোগ চসিকের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়নের জন্য আদায় করা হলেও প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়া বাকি প্রায় সব আবাসিক এলাকায় সড়কবাতির অধিকাংশ বেশিরভাগ সময় নষ্ট থাকা, বছরের অর্ধেক সময় চট্টগ্রামের অর্ধেক পানির নিচে ডুবে থাকা, পয়ঃনিষ্কাশনের বেহাল দশাসহ নানা ভোগান্তির অভিযোগ নগরবাসীর।
এভাবে চট্টগ্রামে নাগরিক সুবিধা বাড়াতে না পারলেও ইতোমধ্যে গৃহকর বাড়ানোর তোড়জোর শুরু করেছে চসিক। ফলে বাড়তি করের বোঝায় অতিষ্ঠ হয়ে মাঠে নেমেছেন নগরবাসী। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ।
এখাানে উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে করা পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম আন্দোলনের মুখে স্থগিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ তুলে নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এখন সে গৃহকর আদায় কার্যক্রম শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পর ভবনমালিকদের ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছে গৃহকর পরিশোধের নোটিশ। এতে বিপাকে পড়েছেন নগরের অনেক ভবনমালিক।
আসলে বর্ধিত গৃহকরের বোঝা ভাড়াটিয়াদের ওপর চাপানো হচ্ছে এমন আশঙ্কায় আছেন ওরা। গৃহকর বৃদ্ধির খবরে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নগরের ভাড়াটিয়ারা। বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স যখন পুনর্মূল্যায়ন করেছিল, তখনই অনেক বাড়ির মালিক ভাড়া বাড়িয়েছেন। নতুন এই অজুহাতে আরেক দফা ভাড়া বাড়াবে।নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে কিন্তু বেতন বাড়েনি। নির্ধারিত বেতনে যেখানে জীবন-জীবিকা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে এটা মড়ার উপর খাড়ার ঘা হবে বলে দাবি তাদের। তারা মনে করেন, চসিকের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা জরুরি। নগরবাসী অবিলম্বে ভাড়ার ওপর কর নির্ধারণ বাতিল করে গৃহ পরিমাপের ভিত্তিতে কর নির্ধারণের জোর দাবি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধতুর্কমেনস্তানের স্বাধীনতা দিবস ও বিশ্বসমুদ্র দিবস