গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| মঙ্গলবার , ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

গণমাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনের খবর পাই। পত্রিকার পৃষ্ঠা মেললে প্রায় দিনই আমরা দেখি গৃহকর্মীদের ওপর যৌন নিপীড়নের খবর। এই নির্যাতনের সিংহভাগ ক্ষেত্রে দায়ী থাকেন গৃহকর্তা বা তার কোনো আত্মীয়। এমনকি ছেলেশিশুরাও এদের বিকৃত লালসার হাত থেকে রেহাই পায় না। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যাপারে পরিবার থেকেও মদদ দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহপরিচারিকাদের ওপর নির্যাতন বেড়েই চলেছে। বিশেষত শিশু গৃহপরিচারিকাদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। যৌন হয়রানির শিকার হওয়া তো নারী গৃহপরিচারিকাদের একাংশের জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমনকি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা২০১৫ এর সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীগণ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্য মতে, সারা দেশে যত গৃহকর্মী আছেন তার ৯৫ ভাগের বেশি নারী। যারা ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের বয়স ১০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে।

তারা বলছে, এই তথ্য পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য। বাস্তব অবস্থা আরও ভয়াবহ। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) শুধু নারী গৃহকর্মীদের প্রতি সহিংসতার তথ্য সংরক্ষণ করে। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, কমপক্ষে তিন ভাগের এক ভাগ ঘটনায় কোনো মামলা হয় না। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা আরো কম। আসকের পর্যবেক্ষণ বলছে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের মামলার বাদী হন তাদের অভিভাবক। ফলে এক পর্যায়ে গিয়ে তারা অর্থ বা যে কোনো চাপের মুখে আপস করে ফেলেন। আর প্রাপ্তবয়স্ক হলেও বছরের পর বছর মামলা চালানোর পরিবর্তে তারা অর্থের বিনিময়ে মিটিয়ে ফেলেন। তাছাড়া গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা সাধারণত ঘরের মধ্যে হয়। তাই যারা নির্যাতনের শিকার হন তাদের পক্ষে তেমন কোনো সাক্ষী থাকে না। ফলে মামলাটি দুর্বল হয়ে যায়।

অভিযোগে প্রকাশ, যৌন নিপীড়ন বা শারীরিক নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হলে লোক দেখানো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে আপসের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যথা ধুঁকে ধুঁকে পচে মরার পর উৎকট গন্ধ বেরোলে আমরা নাগরিক সমাজ সোচ্চার হই। আইনআদালত যেন এসব শোষিতবঞ্চিত মানুষকে দেখে উপহাসের হাসি হাসেন। নিযার্তনকারীরা থেকে যায় বিচারের বাইরে। আইনের হাত তাদের নাগালও পায় না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিল্‌স)-এর এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের ৫০ শতাংশ গৃহকর্মীই নির্যাতিত হন সংশ্লিষ্ট গৃহকর্তার হাতে। তাদের মধ্যে আবার ৫০ শতাংশই শিশু। লিখিত চুক্তি ছাড়া গৃহশ্রমিকদের নিয়োগ, ন্যূনতম মজুরি না দেওয়া, অল্প মজুরিতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো, কথায় কথায় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, এমনকি হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রত্যেক গৃহকর্মীর কর্মঘণ্টা এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে, যাতে তিনি পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন ও প্রয়োজনীয় ছুটির সুযোগ পান। গৃহকর্মীর ঘুম ও বিশ্রামের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্থান নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর অনুমতি নিয়ে গৃহকর্মী সবেতনে ছুটি ভোগ করতে পারবেন। সন্তানসম্ভবা গৃহকর্মীকে তার প্রসূতিকালীন ছুটি হিসেবে মোট ১৬ সপ্তাহ সবেতনে মাতৃত্ব ছুটি দিতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সময় পর্যন্ত ভারী কাজ থেকে বিরত রাখা এবং মাতৃস্বাস্থ্যের পরিচর্যায় সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গৃহকর্তা সহায়তা করবেন।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কোনো ক্রমেই গৃহকর্মীর প্রতি কোনো ধরনের অশালীন আচরণ বা দৈহিক আঘাত অথবা মানসিক নির্যাতন করতে না পারে। নিয়োগকারী, তার পরিবারের সদস্য বা অতিথিদের দ্বারা কোনো গৃহকর্মী কোনো প্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যেমন অশ্লীল আচরণ, যৌন নিগ্রহ কিংবা শারীরিক আঘাত অথবা ভীতি প্রদর্শনের শিকার হলে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গৃহকর্মী তার কর্মরত পরিবারের সদস্য, বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ ও বৃদ্ধ বা অন্য কোনো সদস্যের প্রতি কোনো রূপ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বা পীড়াদায়ক আচরণ করতে পারবেন না। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে নিয়োগকারী তার নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন এবং তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে