গাড়ি সরবরাহ না করায় দিনভর বন্ধ ময়লা অপসারণ কার্যক্রম

চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা পুল সহকারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

নগরের ফইল্যাতলী এলাকার খাল থেকে অপসারণ করা ময়লা-আবর্জনা নিয়ে যেতে যান্ত্রিক বিভাগের পুল শাখার কাছে চারটি ডাম্প ট্রাক বরাদ্দ চান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী। কিন্তু ডাম্প ট্রাকগুলো পাঠানো হয়নি। এ বিষয়ে জানার জন্য চসিকের সাগরিকা স্টোরে গেলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন চালক-হেলপাররা। এছাড়া সাড়া শহরের বাসা-বাড়িসহ অন্যান্য স্থান থেকে সংগৃহীত ময়লা পরিবহন বন্ধ করে দেয় চালকরা।
চালক-হেলপারদের দাবি, সাগরিকা স্টোরে এসে মোরশেদুল আলম চৌধুরী পুল সহকারী নুরনবীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। নুরুল ইসলাম ও বাবুলসহ কয়েকজনকে মারধর করেছেন। তাই তাকে অপসারণ করতে হবে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। প্রায় চার ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর বিকেলে চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাহাড়তলী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মোরশেদুল আলম চৌধুরীকে টাইগারপাসস্থ চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে নিয়ে আসে। এর আগে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়, দুই পক্ষ নিজেদের অভিযোগ তুলে ধরে মেয়র বরাবর অভিযোগ দিবেন। এরপর তদন্ত করে মেয়র প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কাজে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল চালক-হেলপারদের।
তবে গত রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ময়লা পরিবহন কার্যক্রম শুরু হয়নি। চালকরা দাবি করেন, ময়লা আনতে গেলে পরিচ্ছন্নকর্মীরা একা পেয়ে চালকদের মারধর করবে। অবশ্য রাত ৯ টার দিকে যান্ত্রিক শাখা থেকে উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে জানানো হয়, চালকরা ময়লা পরিবহনে গাড়ি চালনা শুরু করবেন। জানা গেছে, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে ডোর টু ডোর প্রকল্পের আওতায় বাসা-বাড়ি থেকে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দুপুর ২ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে। একই সময়ে ময়লাগুলো চসিকের দুটো ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। ১০ টায় শিফট শেষ হলে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা চলে যান। ওই হিসেবে গতকাল ডোর টু ডোর ময়লা অপসারণ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে রাতে পে লোর্ডার, কন্টেনার মুভার ও ড্রাম্প ট্রাক দিয়ে কিছু কিছু ময়লা অপসারণ করা হয়।
এ বিষয়ে গত রাত সাড়ে ৭ টার দিকে চসিকের তত্ত্বাববধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. আকবর আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আলোচনা চলছে, সমাধানের চেষ্টা করছি। কিছু কিছু গাড়ি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। চালকদের দাবি কী জানতে চাইলে বলেন, তারা মোরশেদ সাহেবের অপসারণ চাচ্ছেন, দায়িত্ব থেকে অব্যহতি চাচ্ছেন। কিন্তু সেটা তো আমার দ্বারা সম্ভব না, যেহেতু তিনি অন্য বিভাগের।
ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, মোরশেদ সাহেব নাকি কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এটা তাদের অভিযোগ। তদন্ত ছাড়া তো বলতে পারবো না। প্রত্যেক কিছুর তো একটা সিস্টেম আছে। অভিযোগ করবেন, সেটার তদন্ত হবে। এরপর মেয়র সিদ্ধান্ত দিবেন কি করবেন। কিন্তু জিম্মি করা তো ঠিক না। সেটা তাদের বুঝিয়েছি।
চসিকের পুল সহকারী নুরনবী দৈনিক আজাদী বলেন, পাঁচটি ওয়ার্ডে খালের কাজ চলছে, সেখানে ১০ টি গাড়ির ডিমান্ড ছিলে সেটা সরবরাহ করেছি। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া করা গাড়ি দিয়ে কাজ চলছে। আজ গাড়িগুলো আসেনি। তাই মোরশেদ সাহেব ওয়াকিটকিতে গাড়ি চাইলেন। আমি বললাম, আগে তো ডিমান্ড দেননি, এ মুহূর্তে এ গাড়ি তো নাই। সাথে এটাও বলেছি, দুই-তিনটার কাজ চলছে, ঠিক হলে পাঠিয়ে দিব। তখন তিনি আমাকে গালাগালি শুরু করলেন। বললেন স্টোরে আসবেন। কিছুক্ষণ পর দেখি তিনি এসে উপস্থিত। আমার অফিসে এসে আবার গালাগালি শুরু করে দিলেন। এক পর্যায়ে আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেন। তখন নুরুল ইসলাম এসে উত্তেজিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাকেও মারধর করেন। তখনো আমরা চরম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছি। পরে ঊর্ধ্বতনরা আসেন, পুলিশও আসে।
উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে আটকে রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, আটকে রাখিনি। উনি অফিসে বসেছিলেন। কল করে করে তার লোকজনকে নিয়ে আসেন।
সকাল থেকে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনায় গাড়ি বন্ধ রাখার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, চালকরা ভয় পাচ্ছেন। কারণ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তো অনেক পরিচ্ছন্ন শ্রমিক। তারা যদি একা পেয়ে ড্রাইভারদের মারধর করে তাই ভয়ে গাড়ি বের করছে না। সবাই মোরশেদ সাহেবের অপসারণ চাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, খালে আমরা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ করছি। একটি লং বুম ও স্কেভেটর এবং দুইটি ডাম্প ট্রাক ভাড়া নিয়ে কাজ করছি। আরো চারটি সাগরিকা স্টোর থেকে দেয়ার কথা। সকালে আমি গিয়ে দেখি স্টোর থেকে একটি গাড়িও পাঠায়নি। তখন পুল সহকারী নুরনবীকে ওয়াকিটকিতে গাড়ি না দেয়ার কারণ জানতে চাইলাম। সে বলে, সব গাড়ি নাকি নষ্ট। আবার বলে কাজ চলছে। তাকে বললাম, এটা কেমন কথা। ৭০/৮০ টা গাড়ি তো ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাবে। সেখান থেকে হলেও চারটি গাড়ি ফেলে আমাদের কাজটা হয়ে যায়।
মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, পরে আমি সাগরিকা স্টোরে গেলাম। গিয়ে দেখি গাড়িগুলো স্বাভাবিকভাবে আছে, কোনো মেকানিক কাজ করছে না। সেখানে সচল গাড়ির তালিকায় দেখলাম ১৮৬ টি গাড়ি আছে। এরপরও তারা কর্পোরেশনের কাজে আমাকে কোনো কো-অপারেশন করলো না। তারা গাড়ি দেয়নি, অথচ গাড়ির নামে তেল বরাদ্দ দিয়েছে। গাড়িগুলো কাজে যায়নি তারপরও তেল বরাদ্দ দিল। এসব নিয়ে কথা বলায় তারা ক্ষেপে যায়।
এ কর্মকর্তা বলেন, আমি তাকে সাগরিকা আসবো বলেছিলাম। আর আমি আসার ফাঁকে ড্রাইভার এবং তার অন্য কর্মচারীদের এনে সেখানে জড়ো করে ফেলে। আমি যখন গাড়ি না দেয়া নিয়ে একটুু গরম করে বললাম তখন দেখি বাকি ড্রাইভাররাও কথা বলা শুরু করে। এভাবে কথা কাটাকাটি হয়। দেখি আরো ড্রাইভার জড়ো করে ফেলে। আমার সঙ্গে কেবল দুইজন ইন্সপেক্টর ছিল। সব ড্রাইভার জড়ো হয়ে আমাকে আসতে দিবে না, এই সেই নানা কথা বলা শুরু করে। তারা খুব বিশৃঙ্খলা করে। পরে আমাদের তত্ত্বাববধায়ক প্রকৌশলী যান, পুলিশও আসে ঘটনাস্থলে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা তাদের সমস্যা নিয়ে মেয়রকে দরখাস্ত দিবেন। আমিও একটা দিবো। এরপর মেয়র সিদ্ধান্ত দিবেন। কিন্তু ওখান থেকে চলে আসার পরও তারা গাড়ি বের করছে না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ময়লা পড়ে আছে তারা সেগুলো নিচ্ছে না।
গতরাত ১০ টায়ও ময়লা পরিবহনের জন্য গাড়ি না আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, লেবাররা তো ২ টা থেকে ছিল। শিফট শেষ হয়ে গেলে তারা চলে যাবে। কাল (আজ) ডোর টু ডোরের ময়লা অপসারণ করতে হবে। রাতে রাবিশসহ অন্যান্য ময়লা অপসারণের জন্য কন্টেনার মুভার, পে লোর্ডার চলবে। এ সময় কোথাও ডোর টু ডোরের ময়লার স্তূপ থাকলে অপসারণ করা হবে।
মারধর করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, আমি একা চার-পাঁচজনকে মারতে পারবো সেটা সম্ভব? তাছাড়া অতীতে কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মী চালকদের মেরেছে এমন ঘটনাও ঘটেনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পাহাড়তলী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, ড্রাইভারদের সাথে নাকি দুর্ব্যবহার করেছে সেজন্য তারা আন্দোলন করে। পরে সিটি কর্পোরেশনের এঙিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এসে উনাকে নিয়ে যায়। পাঁচজন প্রতিনিধিসহ বসছিলেন। মেয়র আসলে তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন সে আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। এরকম আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ওনারা আন্দোলন স্থগিত করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাদ্যদ্রব্যে অনিয়মে ৫ বছর জেল, আসছে নতুন আইন
পরবর্তী নিবন্ধমান বেড়েছে হালদার পানির