গার্মেন্টসে অর্ডার কমে গেছে গড়ে এক চতুর্থাংশ

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ মন্দা চট্টগ্রামের কারখানাগুলোয় নতুন করে সংকট

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ২৩ মে, ২০২৩ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক মন্দায় দেশের তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। অর্ডার কমে গেছে গড়ে এক চতুর্থাংশ। আগামী সেপ্টেম্বরের পরে অর্ডার আরো কমে যাওয়ারও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, দেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলো। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ওসব দেশে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা লেগেছে পৃথিবীর প্রায় সবগুলো দেশে। করোনা মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগে নতুন এই সংকট দুনিয়াব্যাপী ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করে। বিশ্বের নানা দেশে বহু কোম্পানি দেউলিয়া হয়েছে, বহু কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়েছে। অনেকগুলো কোম্পানি লোকবল ছাঁটাই করে কোনোরকমে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। বৈশ্বিক সংকটে হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছে। সবকিছু মিলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।

আগে মানুষ যেখানে দুইটি শার্ট বা দুইটি প্যান্ট কিনতেন এখন সেখানে একটি দিয়ে সারিয়ে নিচ্ছেন। ফলে ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় সুপার মলগুলোতে কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতা কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের গার্মেন্টস খাতে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস খাতের অবস্থা একটু বেশিই নাজুক। বিজিএমইএ সূত্র জানায়, গার্মেন্টস শিল্পের সূচনা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে। বন্দর সুবিধাসহ বহুমুখী সুবিধার কারণে এই শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটে চট্টগ্রামে। বছর দশেক আগেও চট্টগ্রামে গার্মেন্টসের সংখ্যা ছিল সাতশ’র বেশি। যেখানে কর্মরত ছিলেন অন্তত বিশ লাখ শ্রমিক। যাদের অধিকাংশই নারী। দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত অংশীদারিত্ব ছিল চট্টগ্রামে। কিন্তু নানামুখী সংকটে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস শিল্পের সেই সুদিন আর নেই। নানা প্রতিবন্ধকতা এবং প্রতিকূলতায় কমতে কমতে বর্তমানে চট্টগ্রামে গার্মেন্টস কারখানার সংখ্যা নেমে এসেছে তিনশ’রও নিচে। শ্রমিকের সংখ্যা নেমে আসে ৮ লাখের মতো। দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনরাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকট চট্টগ্রামের কারখানাগুলোকে নতুন করে সংকটে পড়েছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কারখানাগুলো আবারো ধুঁকতে শুরু করেছে।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের অবস্থা খুবই নাজুক। অর্ডার এক চতুর্থাংশ কমে গেছে। আগামী সেপ্টেম্বরের দিকে অর্ডার আরো কমে যেতে পারে বলেও তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের অবস্থা একটু বেশিই খারাপ। অবকাঠামোগত নানা অসুবিধার কারণে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস কারখানাগুলো এমনিতেই পিছিয়ে রয়েছে। নয়া এই সংকট ঠিকঠাকভাবে সামাল দিতে না পারলে আমরা খাদের কিনারে চলে যাবো। তিনি চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুতের সরবরাহসহ গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির পঞ্চাশতম বছর আজ
পরবর্তী নিবন্ধএক প্রকল্প নিয়ে আগ্রহী দুই দেশ