এক প্রকল্প নিয়ে আগ্রহী দুই দেশ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দ্বিধায় চসিক, মতামত চেয়েছে মন্ত্রানালয়

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ২৩ মে, ২০২৩ at ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া দুই দেশই নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কাছে পৃথক প্রস্তাবও দিয়েছে দেশ দুটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন দুই প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে চসিক। তবে মন্ত্রণালয় উল্টো চসিকের কাছে মতামত চেয়েছে। এতে ‘দ্বিধায়’ পড়ে সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করা প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে জাপানের ‘জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ‘দ্যা কোরিয়া এনভারনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি ইনিস্টিটিউট’ (কেইআইটিআই)। বিশ্ব ব্যাংকও ‘কেইআইটিআই’ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। এর মধ্যে প্রকল্পের ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ (সম্ভাব্যতা যাচাই) করতে ‘জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ এর সঙ্গে ‘এলওআই বা লেটার অব ইন্টেন্ট’ করার জন্য চসিককে কিছুদিন আগে অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এদিকে কেইআইটিআই ‘প্রিফিজিবিলিটি স্টাডি’ (প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই) করতে চায়। যা মন্ত্রণালয়কে জানায় চসিক।

এ অবস্থায় গত সপ্তাহে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে চসিকের কাছে সুস্পষ্ট মতামত চাওয়া হয়েছে। এছাড়া কেইআইটিআই এবং বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ কৌশলগত সহযোগিতায় প্রিফিজিবিলিট স্টাডির প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। মনে হয় এ সপ্তাহ লাগতে পারে।

কি করতে চায় ‘জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ : ‘জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘ইন্টিগ্রেটেড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট’ (কম্পোস্ট প্লা্যান্ট, ল্যান্ড ফিল সাইট) প্রকল্পের আগ্রহ দেখায়। এর পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের মার্চ মাসে প্রস্তাব দেয় চসিককে। এ বিষয়ে দুই দফা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেয়ার পর গত ২৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে চসিককে এলওআই অনুমোদন ও জেএফই’র সঙ্গে স্বাক্ষরের অনুমতি দেয়। এরই মধ্যে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একটি সমীক্ষায় চালায় ‘জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’। তাদের সঙ্গে ছিল দেশটির ‘ইয়চিও ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানও। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, নগরে দৈনিক উৎপাদিত বর্জ্য থেকে মাত্র এক হাজার টন ব্যবহার করে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এতে বলা হয়, নগরের দুটি বর্জ্যাগার বা ল্যান্ডফিল ব্যবহার অনুপযোগী হচ্ছে। এর মধ্যে হালিশহর বর্জ্যাগার ১৪ মাস এবং আরেফিন নগর বর্জ্যাগারে আর পাঁচ মাস বর্জ্য ফেলা যাবে। তাই নতুন ল্যান্ডফিলকে ঘিরে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে নগরে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ, এর ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল গঠন, বর্জ্যে ক্যালোরিফিকের পরিমাণ (দহন মাত্রা), সংগ্রহ ও অপসারণের পরিমাণ এবং সর্বোপরি বর্জ্য ট্রিটমেন্টের যথাযথ টেকনোলজি নির্ধারণে প্রস্তাব করে। তাছাড়া চসিক এলাকায় ক্রমশ বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ল্যান্ডফিলের স্থান স্বল্পতা প্রভৃতি সমস্যা সমাধানে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উপর জোর দেয়া হয়। এছাড়া উৎসস্থল থেকেই বর্জ্য পৃথকীকরণের উপর জোর দেয়া হয়।

যা করতে আগ্রহী কেইআইটিআই :

প্রকল্প বাস্তবায়নে কেইআইটিআই চসিককে প্রথম ধাপে ১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিবে। দ্বিতীয় ধাপে অনুদানের পাঁচ থেকে ১০ গুণ ঋণ সহায়তা করবে। অনুদান প্রকল্পে চারটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত। প্রথমত প্রকল্পের আওতায় সৃষ্টি হবে এমআরএফ (ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি) সুবিধা। এ সুবিধার মাধ্যমে সংগৃহীত প্লাস্টিক, পিচবোর্ড, কাগজ (সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, অফিসের কাগজ, মিশ্র কাগজ), কাঁচের বোতল এবং জার, অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টিলের ক্যানসহ ধাতব পাত্র মেশিনের মাধ্যমে পৃথক করা হবে। এরপর সেগুলো ‘ম্যাটেরিয়াল রিকভারি কারখানা’য় কম্প্যক্ট করে প্রয়োজন অনুসারে কাজে লাগানো হবে। এছাড়া ছোট আকৃতির বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করা হবে। এছাড়া জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা এবং পরিচ্ছন্নকর্মীদের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, সচেতনভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করা, ডোর টু ডোর সংগ্রহের জন্য আধুনিক উপকরণ সরবরাহ করা হবে অনুদান প্রকল্পে।

ঋণ সহায়তার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে আরেফিন নগরে স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের উন্নয়ন প্রকল্প, একটি আবর্জনাগার বন্ধ করা, ফিকেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ফুড ওয়েস্ট প্ল্যান্ট, এমআরএফ প্ল্যান্ট এবং বড় আকারের বায়ু গ্যাস প্ল্যান্ট করা হবে। আধুনিকায়ন করা হবে বর্জ্য পরিবহন। এর অংশ হিসেবে বর্জ্য পরিবহনে কম্পেক্টর ( বিশেষ যান) সরবরাহ করবে। সংগ্রহ পদ্ধতিও উন্নত করা হবে। এছাড়া ফুড ওয়েস্ট প্ল্যান্টে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সংগৃহীত সবজি (উচ্ছিস্ট) এবং খাদ্য বর্জ্যকে দুইভাবে কাজে লাগানো হবে। এর মধ্যে একটি অংশ দিয়ে সার এবং অপর অংশ দিয়ে তৈরি করা হবে বায়ু গ্যাস।

জানা গেছে, এ প্রকল্প ঘিরে গত ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের একজন। ওইসময় চসিককে একটি প্রজেক্ট কন্সেপ্ট প্রপোজল (পিসিপি) এর ড্রাফট হস্তান্তর করে। অনুদান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকাস্থ কোরিয়ান দূতাবাসে প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয়ার শর্ত ছিল। যা গত ২৫ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে জানায় চসিক। তবে গতকাল পর্যন্ত মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়নি। উল্টো মতামত চেয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগার্মেন্টসে অর্ডার কমে গেছে গড়ে এক চতুর্থাংশ
পরবর্তী নিবন্ধভালো ফলাফলের ‘পাগলামো’ নিয়ে শিক্ষার দুই মন্ত্রীর উদ্বেগ