গরিব খুঁজে খুঁজে যাকাত বণ্টন করুন

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | বুধবার , ১২ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সচ্ছল সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর হিসেব করে যাকাত প্রদান করা ফরজ। মাহে রমজানে যাকাত আদায় করতে হবে এমন সুনির্দিষ্ট তাগাদা ইসলামে না থাকলেও এ মাসে অধিক পুণ্যের ও ফজিলতের আশায় সামর্থ্যবান রোজাদাররা রোজার দিনে যাকাত আদায়ে সচেষ্ট হন। এ মাসে একটি ভাল কাজের সওয়াব বা প্রতিদান যেহেতু সত্তর গুণ থেকে সাতশত পর্যন্ত বর্ধিত হয়ে আল্লাহ্‌র করুণাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়তাই রমজান মাসে যাকাত প্রদানের প্রচলিত নিয়মটি অবশ্যই যৌক্তিক ও ইতিবাচক। পবিত্র কোরআনে নানা প্রসঙ্গে বিভিন্নভাবে নামাজের সাথে সাথে যাকাত প্রদানের জোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ‘আক্বীমুস সালাত ওয়াতুজ জাকাত’তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো। নামাজের মতোই যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক ফরজ ইবাদতরূপে সাব্যস্ত করা হয়েছে। নামাজ যেভাবে নিজ উদ্যোগে নিজের উপকারের জন্য আল্লাহর নির্দেশ হিসেবে ফরজজ্ঞানরূপে মানুষ আদায় করে ঠিক অনুরূপভাবে যাকাত যার ওপর ফরজ হয়েছে সে নিজ তাগিদে স্বউদ্যোগী হয়েই কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হবে এই তো ইসলামের দিক নির্দেশনা। গরিবের দিকে চেয়ে রমজানে যাকাত বিতরণ যথার্থ ও প্রাসঙ্গিক। যেহেতু গরিব দুস্থ মানুষেরাও এ মাসে রোজাঈদ উদযাপনে শামিল হতে চায়। যদিও এদের আর্থিক সঙ্গতি ও স্বছলতা নেই। তাই গরিবরা যাতে রোজার মাসটি নিশ্চিন্তে শান্তিতে স্বচ্ছলতার সাথে খেয়ে পরে পার করতে পারেহিসাব করে আগেভাগে ধনীদের যাকাত প্রদানে মনোনিবেশ করতে হবে। যাকাত সঠিকভাবে প্রদান ধনীদের ওপর ধর্মীয় ফরজ কর্তব্য হলেও এদিকে অনেক ধনীর দৃষ্টিপাত নেই। ঠিকভাবে যাকাত বিতরণে আগ্রহ ও সহানুভূতি যতটা থাকা দরকার ততটা চোখে পড়ে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ঐশী দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা প্রদর্শন দুঃখজনক। ধনীদের মধ্যে জাকাত বিতরণের নিষ্ঠুর পদ্ধতি দেখতে দেখতে বিরক্ত গরিবরা। মাহে রমজান এলে যাকাত পাওয়ার আনন্দের মাঝেও গরিবদের অনেকেই ভয়ে শংকায় থাকেন। না জানি যাকাত নিতে গিয়ে প্রাণটুকু বিসর্জন দিতে হয়এজন্যই যত শংকা। যাকাত গ্রহণের যুদ্ধে নেমে প্রতি বছর বহু লোকের প্রাণহানি ও হতাহতের খবর রমজানের শেষ দিনগুলোতে সংবাদপত্রে অহরহ চোখে পড়ে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে ঢাকঢোল পিটিয়ে যাকাত প্রদানের প্রচলিত পদ্ধতি থেকে সরে আসতে হবে ধনী যাকাতদাতাদেরকে।

মহানবী () বলেছেন, ‘আযজাকাতু কিনতারাতুল ইসলাম’ যাকাত ইসলামের সেতুবন্ধন। জাকাত আদায়ের দ্বারা বিত্তবানরা নিঃস্ব মানুষের কাছাকাছি অবস্থান তৈরি করে। পরস্পর ভালবাসা ও সমপ্রীতি জাগ্রত হয় যাকাতের মাধ্যমে। অথচ আমরা চারপাশে যা দেখছি তা হাদিসের শিক্ষার সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কোরআন মজিদের সূরা তাওবার ১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে– ‘ওয়াতুজ্‌ যাকাত ফাইখ্‌ওয়ানুকুম ফিদ্‌দ্বীন’ওরা যাকাত দেয়ার নীতি গ্রহণ করলে ওরা তোমাদের দ্বীনি ভাই হয়ে যাবে। এখানে বলা হয়েছে যাকাত আদায় ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীগরিবের দূরত্ব ঘুচে গিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। প্রতি লাখে আড়াই হাজার, বা এক কোটি টাকার বিপরীতে আড়াই লাখ টাকা জাকাত দেয়াই ইসলামের নির্দেশনা। প্রদর্শনীর চিন্তা বাদ দিয়ে যথাযথভাবে যাকাত আদায়ে ধনীদের সচেষ্ট হতে হবে। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দুনিয়ার কাউকে সন্তুষ্ট করবে বা প্রশংসিত হবে এই প্রবণতা নামাজের ক্ষেত্রে না থাকলেও নামাজের মতোই আরেকটি ফরজ ইবাদত যাকাত আদায় করতে গিয়ে আত্মম্ভরিতা বা লৌকিকতা প্রদর্শন মোটেই ইসলামের শিক্ষা নয়। নামাজের আজান শুনে নামাজি নিজ উদ্যোগেই মসজিদে ছুটে যায় নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে। অথচ যার ওপর যাকাত দেওয়া ফরজ হলো সে যাকাত আদায়ে মোটেই তৎপর নয়, উদ্যোগী নয়তাতো আল্লাহর আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, জঘন্য পাপ। গরিব দুস্থ মানুষের সেবার মাধ্যমে প্রকারান্তরে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জিত হতে পারে। তাই, পুণ্যময় রোজার মাসে সকলেই দানের হাত প্রসারিত করুন। গরিবের কষ্ট ও অসহায়ত্বের বোঝা কিছুটা হলেও হালকা করতে এগিয়ে আসুন। গরিব খুঁজে খুঁজে যাকাত বণ্টন করে দায়মুক্ত হবার পাশাপাশি অশেষ পুণ্যের ভাগিদার হোন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন রাষ্ট্রপতির শপথ ২৪ এপ্রিল
পরবর্তী নিবন্ধচসিক কাউন্সিলর ও ৩ প্রকৌশলীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা