গরমে কাহিল নগরবাসী

স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৯ মে, ২০২২ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

আবহাওয়া অধিদপ্তরের জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, ৮ মে নগরের স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রেকর্ড করা হয়। আবার মে মাসে গড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই হিসেবেও গতকাল রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। শুধু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নয়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেড়েছে নগরে। যেমন ৮ মে নগরে স্বাভাবিক সবনিম্ন তাপমাত্রা থাকার কথা ২৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আবার মে মাসে গড়ে সবনিম্ন তাপমাত্রা থাকার কথা ২৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই হিসেবেও গতকাল রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

অবশ্য গত বছর অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কানাডার ক্যালগভরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের গবেষকদের সম্পৃক্ততায় পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে চট্টগ্রামে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে আসে। ভূ-উপগ্রহ থেকে দিনের ও রাতের তাপমাত্রার ধরন বিশ্লেষণ করে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী ২০ বছরে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা ১ দশমিক ৯২ ডিগ্রি বেড়েছে।

ওই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের রাতের তাপমাত্রা রাতের ঢাকার তাপমাত্রার চেয়েও বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বঙ্গোপসাগর থেকে রাতের বেলায় যে বায়ু চট্টগ্রামের শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যায় সেটি ক্রমশ উষ্ণ হচ্ছে। তাছাড়া এখানে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এবং পাহাড় কাটায় আগের মতো বৃষ্টিপাত না হওয়াকেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ বলা হয়।

গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী : আবহায়াবিদগণ বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে নগরে গরম অনুভূত হচ্ছে। এ দিকে তীব্র গরমে গতকাল অতিষ্ঠ ছিল নগরবাসী। বিশেষ করে জীবিকা এবং অন্যান্য প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া মানুষের অবস্থা ছিল কাহিল। নগরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখের তাপদাহে ক্লান্ত লোকজন ছুটছেন ছায়ার খোঁজে।

দুপুরে সিআরবি এলাকায় দেখা গেছে, এক পাশে রিকশা রেখে গাছের ছায়ায় শুয়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ চালক মফিজ। জানতে চাইলে দৈনিক আজাদীকে তিনি বলেন, এমনিতেই রিকশা চালানো অনেক পরিশ্রম ও কষ্টের। যা গরম পড়ছে তাতে কষ্ট আরো বেশি হচ্ছে। তাই বিশ্রাম নিচ্ছি। তিনি বলেন, গরমের মধ্যে সকাল ১০ টার আগে এবং বিকেলের পর রিকশা চালিয়ে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। কিন্তু শুধু দুই বেলা রিকশা চালিয়ে সংসার চলে না। তাই গরমের মধ্যেও সারাদিন রিকশা চালাতে বাধ্য হচ্ছি। মাঝখানে ক্লান্তি লাগলে বিশ্রাম নিই।

একটি নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিক (রাজমিস্ত্রী) সোলায়মান আজাদীকে বলেন, মোটামুটি ছায়ার মধ্যে কাজ করছি। কিন্তু গরম থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে গরমে প্রাণটাই চলে যাবে।

সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপেও বেড়েছে : নগরের বাইরে উপজেলাগুলোতেও তীব্র তাপদাহে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নগরের বাইরে সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলারও তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস। এতে দেখা গেছে, ওসব এলাকার তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, গতকাল সন্দ্বীপে সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সীতাকুণ্ডে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এছাড়া সন্দ্বীপে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৬ এবং সীতাকুণ্ডে ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অথচ জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে সন্দ্বীপে ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সীতাকুণ্ডে ৩২ ডিগ্রি স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা। এছাড়া সন্দ্বীপে ২৫ দশমিক ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সীতাকুণ্ডে ২৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকার কথা।

আজকের তাপমাত্রা : পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম আজাদীকে জানান, আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থেকে প্রধানত শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। সেই সাথে অস্থায়ীভাবে দুয়েক জায়গায় প্রবল বিদ্যুৎ চমকানোসহ বৃষ্টি অথবা বজ্র-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৮ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে, যা অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ায় ২৫-৩৫ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত : রাজধানীর আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি ঘণীভূত ও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে প্রথমে গভীর নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’- এ পরিণত হয়ে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬ টায় দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কঙবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ১১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত (পুনঃ), ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে অশনি, অভিমুখ ভারতের দিকে
পরবর্তী নিবন্ধকিছু শ্রমিক নেতা বিদেশিদের কাছে নালিশ করতে পছন্দ করেন : প্রধানমন্ত্রী