গতি পাচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিদর্শনে আসছে প্রতিনিধিদল

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

মাতারবাড়ি গভীর সুমদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রমে নতুন গতি পাচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার আগ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ১৩ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসছে। দেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব ঘুচাতে নেয়া এই প্রকল্পের কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরনের বাধা বা সংকট তৈরি না হয় সেজন্য উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি পরিদর্শনে আসছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। প্রতিনিধিদলের সফরকে সফল করতে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ‘কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ (সিপিজিসিবিএল) ৬শ’ মেগাওয়াট করে মোট ১২শ’ মেগাওয়াটের দুইটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকালে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বিষয়টি সামনে উঠে আসে। পরবর্তীতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্পটিতে সায় দেয়া হয়। ২০১৪ সালে নেয়া ওই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১০ মার্চ মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প একনেকের অনুমোদন লাভ করে। এই বন্দরে অনায়াসে ১৬ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে। আর এটিই দেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব ঘুচাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। মাতারবাড়ি এবং ধলঘাট মৌজার ১০৮০ একর ভূমিতে বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। এই বন্দর নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাইকা। বাকি ২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ও ২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা অন্যান্য সংস্থা থেকে সংস্থান করা হচ্ছে। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জাপানের নিপ্পন কোয়ে এবং দেশীয় ডিডিসি নামের একটি যৌথ কোম্পানিকে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ পাওয়ার পর গত বছরের নভেম্বর থেকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকল্পের যাবতীয় ডিজাইন, ব্যয় নির্ধারণ, টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরির কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। আগামী নভেম্বরে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। প্রকল্পটি দুইটি পেজে সম্পন্ন করা হবে। প্রথম পর্বে ড্রেজিং, ব্রেকওয়াটার নির্মাণ, জেটি নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে। দ্বিতীয় পেজে গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রয়োজনীয় ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে। আগামী নভেম্বরে টেন্ডার আহ্বান করে মার্চ এপ্রিলের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হলে মাতারবাড়ি বন্দরের টার্মিনালে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। প্রাথমিকভাবে বছরে ৮ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ের লক্ষ্য ডিজাইন করা হচ্ছে। পরে জেটি বাড়লে সক্ষমতা আরো বাড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সূত্রগুলো বলেছে, দেশের চাহিদার যোগান দিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার প্রায় পুরোটাই ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। ২০৪৩ সালে দেশের চাহিদা ১ কোটি ৪০ লাখ টিইইউএস কন্টেনারে উন্নীত হবে। সেই বিশাল চাহিদা মেটানো চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে অসম্ভব। দেশের ভবিষ্যত চাহিদা মেটানোর জন্যই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর দ্রুত গড়ে তোলা জরুরি।
এই জরুরি প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি পরিদর্শনের জন্য আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ১৩ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে মাতারবাড়ি আসছেন। প্রতিনিধিদলটি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে মাতারবাড়ি যাওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিনিধিদলে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল চিফ অফিসার, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব, পুলিশের আইজি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহকারী নৌবাহিনী প্রধান, ডিজিএফআইর মহাপরিচালক, এনএসআইর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক এবং পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক থাকবেন।
উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিনিধিদলের সফরকে সফল করতে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে এক প্রস্তুতি সভা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বন্দর বোর্ডরুমে অনুষ্ঠিত ওই প্রস্তুতি সভায় বন্দরের বোর্ড সদস্য এবং বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিথিল হচ্ছে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বিধিনিষেধ
পরবর্তী নিবন্ধকোভিড একসময় সাধারণ ঠাণ্ডা-জ্বরে পরিণত হবে : সারাহ গিলবার্ট