গতি পাচ্ছে বে টার্মিনাল

৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বৈঠক

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সিদ্ধান্তহীনতায় থমকে যাওয়া চট্টগ্রামের বে টার্মিনাল প্রকল্প অবশেষে গতি পাচ্ছে। প্রকল্পটি নিয়ে আগামী ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দফতরেই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বসছে। এই টার্মিনাল বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বৈঠকে বে টার্মিনাল কারা বাস্তবায়ন করবে, কিভাবে করবে, কোন কোন দেশ আগ্রহী এবং কারা কিভাবে করতে আগ্রহী এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। একই সাথে দেশের আগামীর একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে গড়ে উঠতে যাওয়া এই টার্মিনালেকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত করার বিষয়টিও আলোচনা করা হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হালিশহর উপকূলে জেগে উঠা চরের সুবাদে সৃষ্ট চ্যানেল ব্যবহার করে বে টার্মিনাল বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই টার্মিনালই দেশের আগামী একশ’ বছরের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের চাহিদা পূরণ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। হালিশহর সমুদ্র উপকূলের ৯৩৯ একর সরকারি-বেসরকারি ভূমির পাশাপাশি সাগর ভরাট করে প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমিতে গড়ে তোলা হবে বে টার্মিনাল। কৃত্রিম চ্যানেলটির গভীরতা বাড়ানোর জন্য পরিচালিত ড্রেজিং থেকে পাওয়া মাটি ও বালি দিয়ে ভরাট করা হবে সাগর। একই সাথে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করে ঠেকানো হবে সাগরের জলোচ্ছ্বাস। এই টার্মিনালেই দেশের সবচেয়ে বড় রিক্লেইম ও ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করা হবে। কিন্তু সবকিছুর আগে প্রকল্পটি কারা কিভাবে বাস্তবায়ন করবে তা নিশ্চিত করতে হবে।
বে টার্মিনাল প্রকল্পের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ইতঃপূর্বে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, প্রকল্পটি পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) এবং জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে কেবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার (সিসিইএ) কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। বে টার্মিনালের ব্যাপারে এই কমিটির অনুমোদন সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের দেয়া নির্দেশনার আলোকে এই টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রস্তাবনাও পাওয়া গেছে। বন্দর নির্মাণ ও পরিচালনায় অভিজ্ঞ বিশ্বের নানা দেশের অন্তত নয়টি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি তাদের প্রস্তাবনা প্রদান করেছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি (পিএসএ), সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড (ডিপি ওয়ার্ল্ড), ভারতের আদানি পোর্ট, সাংহাই পোর্টসহ শহরের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান চায়না মার্চেন্টস স্পোর্ট হোল্ডিং কম্পানি লিমিটেড এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই গ্রুপ বে টার্মিনাল নির্মাণের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। এছাড়া ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে এই বন্দরের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে সৌদি আরব থেকেও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসারও কথা রয়েছে। তাদের রেড সী গেটওয়ে টার্মিনাল লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তাও ঘুরে গেছেন। বে টার্মিনালের ব্যাপারে তার বেশ আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে।
বিভিন্ন কোম্পানির দেয়া প্রস্তাবনার ব্যাপারে বলতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি কোনো ধরনের নির্মাণ কাজ করতে আগ্রহী নয়। তারা শুধু বন্দর পরিচালনা করার প্রস্তাব করেছে। তারা নিজেরা কোনো বিনিয়োগ করবে না। তবে নির্মাণ ব্যয়ের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দেবে বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড বন্দর নির্মাণ করবে বলে প্রস্তাব করেছে। তবে ব্রেক ওয়াটারের অংশ তারা করবে না। এটি চট্টগ্রাম বন্দরকে করে দিতে হবে। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই গ্রুপ প্রস্তাব দিয়েছে, তারা ব্রেক ওয়াটার করবে, পোর্টও করবে। ভূমিও তারা রিক্লেইম করবে। তবে নির্মাণ ব্যয়ে ঋণের হিসেবে তারা দশমিক ৯৩ শতাংশ হারে সুদের উল্লেখ করেছে। ৩০ বছর পর তারা চলে যাবে। এছাড়া আরো কয়েকটি কোম্পানির প্রস্তাবনাও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা রয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সব প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়েছে বেশ আগে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বে টার্মিনালের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, এই প্রকল্পে বাংলাদেশ যাতে উইন উইন অবস্থায় একটি চুক্তি করতে পারে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। একই সাথে কূটনৈতিক বিষয়টিও বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন অনেকটা চাপা পড়ে থাকলেও আগামী ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বে টার্মিনালের ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে বিভিন্ন দেশের প্রস্তাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বৈঠকের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কার্যক্রমে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা নিশ্চিত করে বলেন, বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। কারা কিভাবে এই বন্দর নির্মাণ বা পরিচালনা করবে তার পাশাপাশি রেলওয়ে কানেক্টিভিটি নিয়েও কথা হবে বৈঠকে।
উল্লেখ্য, বে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৬৮ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি হুকুম দখল করা হয়েছে। এর সাথে ৮৭১ একর সরকারি খাস জমিও কিনে নেয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এর বাইরে ১৬শ’ একর ভূমি সাগর ভরাট করে তুলে আনা হবে। সবকিছু মিলে বে টার্মিনাল বাস্তবায়িত হবে আড়াই হাজার একর ভূমিতে। বিদ্যমান চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলে সাড়ে চারশ’ একর ভূমিতে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি বিস্তৃত এলাকায় বে টার্মিনালের কার্যক্রম চলবে উল্লেখ করে সূত্র বলছে, বিদ্যমান বন্দরের চেয়ে বহু বড়ই কেবল নয়; একই সাথে অনেক বড় বড় জাহাজও অনায়াসে নোঙর ফেলতে পারবে এই টার্মিনালে। এমনকি ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজও অনায়াসে ভিড়তে পারবে এখানে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাস্টমসে নিলামে উঠছে আরো ৭১ লট পণ্য
পরবর্তী নিবন্ধএই আনন্দ ম্লান হওয়ার নয়