গতি কমেছে মশক নিধন কার্যক্রমে

চসিক ।। এডাল্টিসাইডের মজুদ শেষ ।। আজ থেকে শুরু হচ্ছে মশা জরিপ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সংগৃহীত পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ওষুধের (এডাল্টিসাইড) মজুদ শেষ হয়েছে। এতে গতি হারিয়েছে সংস্থাটির মশক নিধন কার্যক্রম। নগবাসীর দাবি, মশার উৎপাত বেড়েছে। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন তারা। অবশ্য মশার লার্ভা ধ্বংসকারী ‘লার্ভিসাইড’ পর্যাপ্ত মজুদ আছে দাবি করেছেন চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ‘মশক নিধন কার্যক্রম জোরালোভাবে চলছে।’ এ অবস্থায় মশার ঘনত্ব এবং কোন প্রজাতির মশার উপস্থিতি বেশি তা নির্ণয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে নগরে মশা জরিপ শুরু করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নগরের ৪১ ওয়ার্ডে পাঁচদিন ব্যাপী এ জরিপ চলবে আগামী ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন ৮টি ওয়ার্ডে জরিপ চালানো হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের ৩০টি বাড়ি থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ওই হিসেবে ৪১ ওয়ার্ডের এক হাজার ২৩০টি বাড়িতে চলবে জরিপ। এক্ষেত্রে বাড়িগুলোকে বহুতল, নির্মাণাধীন এবং টিনশেড- এ তিনভাগে ভাগ করা হবে। বস্তি এলাকায়ও চলবে জরিপ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জরিপ কার্যক্রম চালানোর জন্য ৩৫ সদস্য নিয়ে ১৬টি টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন কীটতত্ত্ববিদ, ১০ জন চুয়েট (চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রয়েছেন। বাকিরা কীটতত্ত্ব সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ান। প্রতিটি ওয়ার্ডে টিমের চারজন সদস্য জরিপ কাজ চালাবেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কীটতত্ত্ববিদ মফিজুল হক শাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডকে দুইভাগে ভাগ করা হবে। প্রতি ভাগে দুইজন করে সদস্য কাজ করবেন। চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস আজাদীকে বলেন, প্রতি ওয়ার্ডে চার সদস্যের টিম কাজ করবেন। ৮ ওয়ার্ডে দৈনিক ২৪০ টি বাড়িতে যাবেন টিমের সদস্যরা।
এদিকে আজ প্রথমদিন যে ৮ ওয়ার্ডে জরিপ চালানো হবে সেগুলো হচ্ছে ১৪ নং লালখান বাজার, ১৫ নং বাগমনিরাম, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার, ৩১ নং আলকরণ, ৩২ নং আন্দরকিল্লাহ, ৩৩ নং ফিরিঙ্গিবাজার, ৩৪ নং পাথরঘাটা এবং ৩৫ নং বক্সিরহাট ওয়ার্ড।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ১১ জুলাই নগরের লালখান বাজার এলাকায় মশা জরিপ করে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এতে ওই এলাকার ২০ শতাংশ বাসা-বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া যায়। এছাড়া একই বছরের ৩ আগস্ট প্রকাশিত চসিকের উদ্যোগে পরিচালিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ টি স্থান পরিদর্শন করে ৫৭টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৩৩ স্থানে এডিস, ৩৯ স্থানে এনোফিলিস ও ২২ স্থানে এডিস ও এনোফিলিস দুটোই পাওয়া গেছে। তবে ১৮ স্থানে এডিস ও ১২ স্থানে এনোফিলিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া ১৫ স্থানে শতভাগ এডিস ও দুই স্থানে শতভাগ এনোফিলিস পাওয়া গেছে।
এডাল্টিসাইডের মজুদ শেষ : ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে চসিক এক হাজার ৮৫০ লিটার কীটনাশক সংগ্রহ করে। সরবরাহে এর মধ্যে এক হাজার ৬০০ লিটার পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ নামে এডাল্টিসাইড এবং ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’ নামে ২৫০ লিটার লার্ভা ধ্বংসকারী লার্ভিসাইড ছিল।
চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এডাল্টিসাইডের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। লার্ভিসাইড এখনো অল্প পরিমাণ মজুদ আছে। এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে ছিটানোর জন্য ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গত বছরে ২৯ আগস্ট এক হাজার লিটার ‘ম্যালাথিয়ন ৫ পার্সেন্ট ফরমুলেশন’ (রেডি ফর ইউজ) নামে এডাল্টিসাইড সংগ্রহ করেছিল চসিক। একই মাসের শুরুতে ১০০ লিটার ‘মাসকুবার’ নামে এডাল্টিসাইড সংগ্রহ করে। নিয়মিত ব্যবহার করলে গত পাঁচ মাসে এসব কীটনাশক শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।
জানা গেছে, দরপত্রের মাধ্যমে ১৫ হাজার লিটার ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ এবং দুই হাজার লিটার ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’ সংগ্রহে সিটি মেয়রের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর প্রক্রিয়া করছে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ।
জানতে চাইলে চসিকের চসিকের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মো. মোবারক আলী আজাদীকে বলেন, ‘ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ এবং ‘টেমিফস ফিফটি পার্সেন্ট ইসি’ নামের কীটনাশক দুটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌ-বাহিনী ব্যবহার করে। তারপরও আমরা পরীক্ষামূলকভাবে ছিটানোর জন্য অল্প পরিমাণে সংগ্রহ করেছিলাম। সেটা ব্যবহার করে সাফল্যও আসে। তবু আমরা ওষুধগুলো পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) পাঠিয়েছি। সেখান থেকে পজেটিভ রির্পোট পাওয়া গেছে। এখন আমরা বেশি পরিমাণে কেনার জন্য মেয়রের নির্দেশনা চাইব।
চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, এডাল্টিসাইডের কিছুটা সংকট থাকলেও লার্ভিসাইড পর্যাপ্ত আছে। যেগুলো আছে তা দিয়ে আরো দুই-তিন মাস চলে যাবে। আমরা যে মাসকুবার কিনেছিলাম সেটাও আছে। প্রতিদিন ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
জনতে চাইলে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ওষুধ তো সবসময় কেনা হচ্ছে। না থাকলে ছিটানো হচ্ছে কীভাবে। তিনি বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সে আলোকে কিনছি। ৪০-৫০ লাখ টাকায় বেশি পরিমাণে একসঙ্গে কিনলে কিছু সমস্যা থাকে। তাই আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে পাঁচ-সাত লাখ টাকার মধ্যে কিনছি। বর্তমানে পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। নিয়মিত ছিটানো হচ্ছে। ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি খাল-নালাও পরিষ্কারে জোর দিচ্ছি। নিয়মিত খাল-নালা পরিষ্কার করা হচ্ছে। সেখানে লার্ভিসাইড এবং কালো তেল ছিটানো হচ্ছে। এতে লার্ভা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মশার উৎপাত আগের চেয়ে কমেছে বলেও মনে করেন মেয়র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় লবণ নীতিমালা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
পরবর্তী নিবন্ধমায়ের সামনেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল শিশু রামীম