গতির প্রতিযোগিতায় জীবনবাজি

দুর্ঘটনায় চিকিৎসা নিতে আসা ৪২ শতাংশ মোটরসাইকেল আরোহী, মৃত্যুও বেশি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১১ মে, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ থাকলেও সড়ক ভয়ংকর হয়ে ওঠার জন্য মূল দায়ী মনে করা হচ্ছে মোটরসাইকেলকে। সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানেও আছে সে কথার প্রতিধ্বনি। সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার শীর্ষ কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মোটরসাইকেল। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুসারে গত মার্চে সারা দেশে ৫৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৭৯ জন। এর মধ্যে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২২১ জন। এসব কিছুর পেছনে আছে মূলত গতির প্রতিযোগিতা। কে কত দ্রুতবেগে চালাতে পারে, কার চেয়ে কে বেশি গতি ওঠাতে পারে; গতির এই অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা মৃত্যুকে ডেকে আনছে সড়কে।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ আজাদীকে বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার দিনের পর দিন বাড়ছে। সচরাচর মোটরসাইকেল চালকদের বড় অংশ কিশোর ও তরুণ। এরা যেমন বেপরোয়া তেমনি এদের অনেকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। ফলে তারা নিজেরা যেমন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে, তেমনি অন্যরাও পরিণত হচ্ছে তাদের শিকারে। তিনি বলেন, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতার পাশাপাশি বাস, ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ দ্রুত গতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতাও এজন্য দায়ী। এর সাথে রয়েছে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি অতি উচ্চ গতির মোটরসাইকেল ক্রয় এবং ব্যবহারে সহজলভ্যতা ও বাধাহীন সংস্কৃতি।

দেখা গেছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই ১৪ থেকে ৪০ বছর বয়সী। ঢাকা-চট্টগ্রাম কিংবা চট্টগ্রাম-কঙবাজারের মতো মহাসড়কেও এখন অবাধে মোটরসাইকেল চলছে। অথচ অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় এটি অন্তত ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সব মিলিয়ে মোটরসাইকেলে ঝুঁকির মাত্রা সবসময়ই বেশি।
গত মার্চে সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যে যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্রে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২১ জন (৩৭.৫২%), বাস যাত্রী ৩৯ জন (৬.৬২%), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৩৪ জন (৫.৭৭%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার যাত্রী ১৭ জন (২.৮৮%), থ্রি হুইলার আরোহী (ইজিবাইক সিএনজি টেঙি টেম্পো জিপ পাওয়ার টিলার) ৮১ জন (১৩.৭৫%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন চাঁদের গাড়ি মাহিন্দ্র টমটম) ২৪ জন (৪.০৭%) এবং প্যাডেল রিকশা রিকশাভ্যান বাইসাইকেল আরোহী ১১ জন (১.৮৬%) নিহত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় ৪২ শতাংশই মোটরসাইকেলের। অনেকের হাত-পা কেটে ফেলতে হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুসারে, দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখের বেশি, যা মোট যানবাহনের ৭০ শতাংশ। দেশে বছরে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ নতুন মোটরসাইকেল বিক্রি হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ১৩টি সুপারিশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এগুলোর অন্যতম কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া; মাত্রাতিরিক্ত গতি সম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা; মহাসড়কে মোটরসাইকেলের আলাদা লেন তৈরি, গণপরিবহন উন্নত ও সহজলভ্য করে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা। এছাড়া দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, গণপরিবহনের চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কের সার্ভিস রোড নির্মাণ করা, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করার পরামর্শ দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমনসুরাবাদে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল বাইক আরোহীর
পরবর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রপতির সাজেক সফর স্থগিত