গণ্ডগোল কেন হলো না, বিএনপি নেতাদের ওপর চটেছে তারেক

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩১ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, তারা সেটি আবার প্রমাণ করেছে। গত শুক্রবারের প্রোগ্রামে গণ্ডগোল কেন হলো না সেজন্য বিএনপি নেতাদের ওপর চটেছে তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গণ্ডগোল করার উদ্দেশ্যে পরদিন ঢাকা শহরের প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান ধর্মঘট অর্থাৎ অবরুদ্ধ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। তারেক জিয়া নিজে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতাদের ফোন করে নির্দেশ দিচ্ছে গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার জন্য এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করার জন্য। সেই প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। বিএনপি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মতো আবারো পেট্রোল বোমা বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে, অগ্নি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য শুরু করেছে। গতকাল বিকালে নগরীর দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি ও সহিংসতার প্রতিবাদে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, বিএনপি নেত্রী নিপুন রায়ের অডিও বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। আবার বলছেন, এটা একটু ভিডিও করে রাখেন, জায়গা মতো পাঠাতে হবে। অর্থাৎ তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠাতে হবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন গত শুক্রবার ঢাকায় বিএনপি সমাবেশ করেছে। একই সাথে আমাদের যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ যৌথভাবে বিশাল সমাবেশ করেছে। মাত্র সোয়া কিলোমিটার দূরত্বে দুটি বিশাল সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরে বিন্দুমাত্র গণ্ডগোল হয় নাই। কারণ আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এবং প্রশাসন সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল।

তিনি বলেন, গণ্ডগোল কেন হলো না সেজন্য বিএনপি নেতাদের ওপর বেজায় চটেছেন তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই রাজপথ মানুষের, ঢাকা শহরের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়ার অধিকার কোনো রাজনৈতিক দলের নাই। সবাই সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে, সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে পারে এবং করছেও তারা। সেখানে বাধা দেয়া হচ্ছে না, বরং সহযোগিতা করা হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত শুক্রবার তাদের সমাবেশের জন্য সমস্ত সহযোগিতা করা হয়েছে। তারা যেখানে চেয়েছে সেখানেই সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরের প্রবেশমুখ বন্ধ করে নগরবাসীকে নগর থেকে বের হওয়া আর নগরে ঢোকা বন্ধ করে দেয়ার অধিকার কাউকে সরকার দিতে পারে না। সে কারণে সেটি সরকার অনুমতি দেয় নাই। তিনি বলেন, যারা এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে জনগণের কষ্ট ঘটানের অপপ্রয়াস চালায় সেটি যাতে করতে না পারে জনগণের পাশে থাকা সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। কেউ যাতে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতি বিনষ্ট করতে না পারে সেজন্য আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ঢাকার প্রবেশমুখে সতর্ক পাহারায় ছিল। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর তারা আক্রমণ চালিয়েছে, পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ২০১৩১৪ ও ১৫ সালে যেভাবে আক্রমণ চালিয়েছে ঠিক একইভাবে তারা ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ, জনগণ ও বাসের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি শনিবার প্রথমার্ধে সাতটি বাস জ্বালিয়েছে। রাতের বেলা আরো গাড়িতে আগুন দিয়েছে। প্রত্যেকটি গাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধীন। অনেক কষ্টে গাড়িগুলো কিনেছে মানুষ। এই গাড়ি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে একটি পরিবারকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, একটি পরিবারের স্বপ্নকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তারা যে আগুন দিয়েছেন সেটি অস্বীকার করলেন। তার মতো জঘন্য মিথ্যাবাদী বাংলাদেশের কখনো জন্মগ্রহণ করে নাই। মিথ্যা বলায় যদি কেউ চ্যাম্পিয়ন হয় তাহলে তিনি হবেন। যারা গাড়িতে আগুন দিয়েছেন সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরকে গ্রেপ্তার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খোঁচা দিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জ্বলে ওঠে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা আঘাত করলে প্রতিঘাত করার জন্য একসাথে নেমে পড়ে। ওরা দেশের বেদিমূলে আঘাত হেনেছে, আবার জনগণের ওপর হামলা পরিচালনা করছে। ওদেরকে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় আমরা জানি। বিএনপির নেতারা ঘাপটি মেরে আছে, সেখান থেকে বের হয়ে এখন হামলা পরিচালনা করছে। সুতরাং এই হামলাকারীদের পাড়ায়মহল্লায়, গ্রামেগঞ্জে প্রতিহত করতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি বিদেশিদের কাছে গিয়ে হাতেপায়ে ধরে আমাদের দেশটাকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়। একাত্তরেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সমস্ত ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙে দিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে আমাদের পূর্বসূরী মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন। এখন যারা আমাদের দেশকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়, তাদের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করতে হবে।

নেতাকর্মীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েক মাস। আমরা আগামী নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে না আনা পর্যন্ত রাজপথে নেমেছি, রাজপথেই থাকব। আগুন সন্ত্রাসীদের এই দেশ থেকে বিতাড়িত করব। বিএনপি নির্বাচন চায় না, তারা চায় দেশে একটি গণ্ডগোল পাকাতে। ওরা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ভণ্ডুল করতে চায়। সেটি আমরা হতে দিতে পারি না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবদের এই অপরাজনীতি বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুত পাবার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানাই।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. আতাউর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, আবুল কাশেম চিশতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম তালুকদার, ইদ্রিচ আজগর, নাজিম উদ্দিন তালুকদার, আবু তালেব, এনায়েত হোসেন নয়ন, আ স ম ইয়াছিন মাহমুদ, শওকত আলম, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, ফোরকান উদ্দিন আহমেদ, মো. সেলিম উদ্দিন, আখতার হোসেন খান, সরোয়ার হাসান জামিল, গোলাম রব্বানী, মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, আবদুল হালিম, সাহেদ সরোয়ার শামীম, বখতেয়ার সাঈদ ইরান, হাসিবুন সুহাদ চৌধুরী সাকিব, উপজেলা চেয়ারম্যান মাঈনুদ্দিন মিশন, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম, দিলোয়ারা ইউসুফ, এড. মো. শামীম, শফিকুল ইসলাম, এড. বাসন্তী প্রভা পালিত, হারুন অর রশীদ, নাছির উদ্দিন দিদার, মো শাহজাহান, এরাদুল হক ভুট্টো, ফয়েজ আহমেদ বাদল, এড. জুবাঈদা সরোয়ার নিপা, শফিউল আলম, রূপক কান্তি দেব অপু, নাছির উদ্দিন রিয়াজ, তানভীর হোসেন তপু, রেজাউল করিম, সাবরিনা চৌধুরী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজধানীতে চট্টগ্রামের ২৮ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধএকাদশে ভর্তিতে আবেদন ১০ আগস্ট থেকে, ক্লাস শুরু ৮ অক্টোবর