গণমানুষের নেতা শেখ হাসিনা নেতৃত্বে ও সরকারে যাঁর তুলনা নেই

ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী | রবিবার , ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

মামাটিমানুষের প্রতিবিম্ব জননেত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নশান্তিঅগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতীকও শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা মানেই গণমানুষের কণ্ঠস্বর, দলিতনিপীড়িত মানুষের প্রতিচ্ছবি। তথ্যউপাত্তের আলোকে বলা যায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার শাসনামলেই মানুষ ভালো থেকেছে, ভালো পরেছে, ভালো জীবন যাপন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বে একটি ইতিবাচক দেশের ভাবমূর্তি অর্জন করেছে। শেখ হাসিনা মানুষের কল্যাণেই নিজেকে উৎসর্গ করছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবনের জয়গান গেয়ে মানুষকে প্রাণিত করতে পারেন তিনি। মানুষকে নিয়ে যেতে পারেন কল্যাণ ও অগ্রগতির পথে। পঁচাত্তর পরবর্তী বেপথুবেদিশা আওয়ামী রাজনীতির তরঙ্গবিক্ষুদ্ধ অস্থির সময়ে যোগ্যতম কাণ্ডারি হয়ে হাল ধরেছেন শেখ হাসিনা।

১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর নিরলস সংগ্রামী জীবনই বঙ্গবন্ধুকন্যার নিয়তি হয়ে যায়। তাঁরই সুযোগ্য নেতৃত্বে স্বৈরাচারের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য বাংলার জনগণের আন্দোলনসংগ্রাম তীব্রতর হয়। গণতন্ত্রের মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বারবার কারাভোগ করেছেন। গৃহবন্দিত্বও বরণ করেছেন হাসিমুখে। সংগ্রামী ও দুঃসাহসিক নেতৃত্ব প্রদানের এই কণ্টকাকীর্ণ পথে জননেত্রীর জীবনের ওপর ঝুঁকি এসছে বারবার। তাঁর শান্তিপূর্ণ মিছিলে, জনসভায় গ্রেনেডও নিক্ষেপ করেছে গণতন্ত্রের শত্রুরা। সব বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতারূপে রাজনীতিতে পরিপক্ক হয়েছেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এতে প্রসারিত হয় অগ্রযাত্রা।

২০০৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা ভূমিধস বিজয় অর্জন করে ক্ষমতায় আসার পর পর্বতসম সমস্যার চ্যালেঞ্জসমূহ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে মেকাবেলা করেন। গভীর বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয়ের গতি সচল রাখতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনাও অভ্যন্তরীণ চাহিদা পরিস্তিতি জোরালো রাখতে কৃষি, এসএমই আর উৎসাহী কর্মকাণ্ডে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান, অভ্যন্তরীণ উচ্চ মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎজ্বালানি সংকটের জরুরি সমাধান, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি ও শিল্পখাতের উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, বঞ্চিত গরীবদুঃখী মানুষসহ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তর্ভুক্তকরণ, বাড়তি জনসংখ্যার জন্য কর্মসংস্থানসহ (পরিবারপ্রতি একজনের চাকরি কর্মসূচি), দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যার ত্বরিত ও বিচক্ষণ সমাধানে সময়োপযোগী উদ্যোগ নেন তিনি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের মধ্যে জাতিকে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি মধ্য আয়ের আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন (ডিজিটাল বাংলাদেশ) দেশ উপহার দিয়েছেন তিনি। এছাড়া মুদ্রাস্ফিতি, রাজস্বনীতি, তথ্যপ্রযুক্তিনীতিতে যুগান্তকারী সব পরিবর্তনের পরশ এরই মধ্যে জনগণ পেতে শুরু করেছে।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের মূল স্তম্ভ ছিল জতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আর জাতির পিতার রাষ্ট্রীয় নীতিমালার মূলভিত্তিও ছিল তাইই। কিন্তু ৭৫’র রক্তাক্ত ট্র্যাজেডির পর অনির্বাচিত, স্বৈরাচারী ও একনায়কতান্ত্রিক সামরিক সরকারের আমলে ধুলোয় ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায় গণতন্ত্র। পক্ষান্তরে শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক আদর্শের অভিষেক। বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্রের মানে ছিল ‘শোষিতের গণতন্ত্র’। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর ওই রাজনৈতিক বীক্ষণ বাস্তবায়নের সুযোগ পাননি। অপশক্তির কালো হাত তা স্তব্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তনয়া জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে বাংলাদেশকে তথাকথিক তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ থেকে খাদ্যউদ্বৃত্তের দেশএ রূপান্তরিত করেছেন। তাঁর যুগান্তকারী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র ছিল বৈষম্যহীন একটি সাম্যের সমাজব্যবস্থা। জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারিদ্রকে জয় করেছে মঙ্গা বা আকাল এখন ইতিহাসের বিষয়। বাংলাদেশে এখন একজন মানুষও না খেয়ে মরে না। দেশের পুষ্টি চাহিদার উত্তরণ হয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার আশাতীত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মাতৃমৃত্যুশিশু মৃত্যুর হারও পূর্বের তুলনায় অনেক কম। জনগণের মাথাপিছু আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি গড় বয়সও বেড়েছে। বাংলাদেশের জিডিপিও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি। পৃথিবীখ্যাত অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। আর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাকিস্তানকে বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত অনুসণের পরামর্র্শ দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মনেপ্রাণে আপদমস্তক একজন বাঙালি। তাঁকে ‘বাঙালি’ জাতীয়তাবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী বলা যায় নিঃসন্দেহে। পঁচাত্তর পরবর্তীতে বাংলাদেশে ‘বাংলাদেশি’ জাতীয়তাবাদ আরোপ করে বাঙালি সত্তার ওপর ‘স্টিমরোলার’ চালানো হয়েছিল। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিঐতিহ্যসভ্যতা থেকে বিভক্তবিচ্ছিন্নকরণের এই ঘৃণ্য অপচেষ্টা রুখে দিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। রূপান্তরিত ‘রেডিও বাংলাদেশ’ আবার ‘বাংলাদেশ বেতার’ নামে অভিষিক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করে শেখ হাসিনার কল্যাণে। এমনকি তিনি জাতিসংঘেও বঙ্গবন্ধুর মতো বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন।

শেখ হাসিনার শাসন মানেই বাংলার সুবর্ণযুগ। শেখ হাসিনা মানেই অগ্রগতি, উন্নয়ন। নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের মর্যাদা বিশ্ববাসীর কাছে বাড়িয়ে দিয়েছেন। কর্ণফূলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একমাত্র টানেল। এছাড়া শনৈঃ শনৈঃ গতিতে উন্নয়নের যে জোয়ার বয়ে চলেছে তার ফিরিস্তি দিলে স্বতন্ত্র এক লেখা হয়ে যায়। তবুও বিশেষ করে বলতে হয় পায়রা সমুদ্রবন্দর, ঢাকাচট্টগ্রাম ছয় লেন সড়ক যোগাযোগ, কক্সবাজার রেলস্টেশন, চট্টগ্রাম থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন, এসব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সমাপ্তির পথে।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ক্ষুধাদারিদ্রমুক্ত উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান। তাঁর ‘রূপকল্প২০৪১’ বা ‘ভিশন৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ওই স্বপ্নের কাছে পৌঁছাতে পারি। তাই, বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।

২০৪১ উন্নত বাংলাদেশ রূপকল্প ছাড়াও শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের আহবান জানান। ১৪ বছরের ধারাবাহিক সরকার পরিচালনায় চৌকষ হিসেবে কোভিড ও রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা সফলভাবে মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন। ‘মানবতার মা’ হিসেবে অভিহিত হওয়া শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন তা তুলনারহিত। একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার জোরালো ভূমিকা অতুলনীয়।

৪১ বছর রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে আসীন থাকাটা নজিরবিহীন। সফলতার সাথে কেবল সরকার পরিচালনা নয়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেও শেখ হাসিনার প্রয়োজন অনিবার্য। আসছে ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন। নিশ্চয়ই জননেত্রী শেখ হাসিনা আবারও আওয়ামী লীগের সভাপতির আসনে অভিষিক্ত হবেন।

লেখক : সাবেক ডিন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ,

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাবন্ধিক ও গবেষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবক নূর আহমদ চেয়ারম্যান
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের মতবিনিময় সভা