গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে তদারকি দরকার

| মঙ্গলবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

গণপরিবহনে যাত্রী চলাচল নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে দেশে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা আসে যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ঠেকাতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করা হবে। পরে অবশ্য মালিক-শ্রমিকদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে তা থেকে সরে এসে যত সিট তত যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে- সে নির্দেশনাও রয়ে যায় শুধু কাগজে কলমে। কোনো গণপরিবহনে তা মানা হচ্ছে না। যত আসন তত যাত্রীর বদলে যত খুশি তত যাত্রী নিয়েই চলাচল করছে গণপরিবহনগুলো। দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রে কী নিয়ম পরিচালিত হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি অবকাশ থাকতে পারে না। যদিও রেলে ইতোমধ্যে অর্ধেক যাত্রী পরিবহণের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। সড়ক ও নৌপথে যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রে কেন সরকারি নির্দেশনা মানা হবে না- তা নিয়ে চলছে নানা কথা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয় যে, ‘গণপরিবহনগুলোতে কোন রকমের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। এমনকি যত সিট তত যাত্রী নিয়মও পালন করছে না বাসের চালক ও হেলপাররা। গতকাল বেশিরভাগ লোকাল বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ যাত্রীর মুখে ছিল না মাস্ক। চালক থেকে শুরু করে হেলপারদের মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও দেখা যায়নি কোনও গণপরিবহনে। চালকের সহকারীরা যাত্রী টেনে টেনে বাসে তুলছেন পুরনো অভ্যাসেই। বিধিনিষেধ মানাতে সড়কে নেই কোনো ধরনের তদারকিও। অধিকাংশ বাসে অফিসগামী যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে উঠানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতি মানছেন না যাত্রীদের অনেকে। মাস্ক থাকলেও তা কারও হাতে, কারও পকেটে। অধিকাংশ হেলপার ও চালকের মাস্ক ঠাঁই পেয়েছে থুতনিতে। সব সিটে যাত্রী নেয়ার পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নেয়া হচ্ছে। যাত্রী ওঠানো এবং নামানোর ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।’
অন্যদিকে ওমিক্রনের সংক্রমণ মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলাচল করছে রেল। মোট আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলছে আন্তঃনগর রেল। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বেশ সচেষ্ট দেখা গেছে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। শুধু ট্রেনেই না, স্টেশন চত্বরেও বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে কঠোরভাবে। যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে গত ১২ জানুয়ারি থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে মোট আসন সংখ্যার অর্ধেক টিকিট বিক্রি শুরু হয়। হ্রাসকৃত টিকিটের ৫০ শতাংশ মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইনে এবং বাকিটা কাউন্টার থেকে কেনা যাবে বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ।
তবে এ কথা সত্যি যে, মন্ত্রিপরিষদ থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ জারির বিষয়টি নানাভাবে ব্যাখ্যা হচ্ছে এদিক ওদিক। পরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ যে ঘোষণা দেয়, তাকেই মানতে হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সিদ্ধান্তে তারা অটল থাকতে পারছে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত থেকে হয়, তা থেকে সরে এসে মালিকপক্ষের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ফলে বাসে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নয়, বরং যতো সিট ততজন যাত্রী নিয়ে চলতে পারবে বলে নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বা দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। এক্ষেত্রে যাত্রীরা আগের ভাড়াই পরিশোধ করবেন. অর্থাৎ বাড়তি কোন ভাড়া গুনতে হবে না। অতীতেও দেখা গেছে, সরকার তাদের সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারে নি। গণপরিবহণ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলো সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণেই এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে শনাক্তের হার। যদিও মাঝখানে কিছুদিন দেশে করোনাজনিত মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল এবং মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর দৃশ্যপট পালটে গেছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নিজে ওমিক্রন নিয়ে উচ্চমাত্রার সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আমাদের বাজার-ঘাট, পর্যটন, কলকারখানা-সবকিছু খোলা রাখতে হচ্ছে। তাই সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে