গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্খলন

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বায়নের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রায় প্রতিটি জাতিরাষ্ট্রই গণতন্ত্রকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক হিসেবে গ্রহণ করেছে। অধুনা উন্নয়নশীল দেশসমূহে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রায় প্রতিটি দলেরই আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ব্যক্তি মানুষের স্বাধীনতা এবং সৃজনশীলতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রতিটি রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রের মৌলিক বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এর প্রতিফলন কতটুকু প্রায়োগিক প্রাসঙ্গিকতায় গ্রহণযোগ্য, তা বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। বিংশ শতাব্দীর সংঘটিত নানা ঘটনা প্রবাহের পর্যালোচনায় দেখা যায়; মুক্তসমাজ প্রতিষ্ঠার বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক শিখরের গভীরে প্রোথিত ছিল মানবজাতির আইনের শাসন, সীমিত সরকার ও ক্ষমতার ভারসাম্যের চিন্তা-চেতনা-ধারণার সমন্বিত প্রয়াস। এরই ভিত্তিতে বিভিন্ন স্বৈরতন্ত্রের ঘৃণ্য নীতিমালাকে পর্যদুস্ত করে গণমানুষের ইচ্ছাশক্তি, ঋজুতা ও সৃষ্টিশীলতার অবারিত ক্ষেত্র মানবতাবাদের বিজয়কে নিশ্চিত করেছে। এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, মানবিক মর্যাদা- পরমতসহিষ্ণুতা, পরশ্রীকাতরতা- প্রতিহিংসাপরায়ণতা সংহার করে পর্যাপ্ত আলোচনা- আপোষ- সমঝোতার ভিত্তিতে নাগরিক স্বাধীনতা ভোগের উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও কার্যক্রম সচল থাকে। জনগণের স্বাভাবিক জীবন নির্বাহের অধিকার নিশ্চিতকল্পে পবিত্র সংবিধান হয়ে থাকে রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার উৎসসূত্র। ‘বন্দুকের নল নয়, জনগণই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু’ প্রতিপাদ্যকে পরিপূর্ণ ধারণ করেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উৎকর্ষতা সভ্যসমাজের প্রাণিধানযোগ্য অনুষঙ্গ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর লাস্কির ভাষায় ‘কোন রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সে রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রদত্ত অধিকার দ্বারা’ এবং গণতন্ত্রকে যথার্থ মর্যাদায় আসীন রাখতে পারে জনগণের সঠিক চেতনা ও সতর্ক পাহারা যেটি লাস্কির ভাষায়- বঃবৎহধষ ারমরষধহপব রং ঃযব ঢ়ৎরপব ড়ভ ষরনবৎঃু। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনেক অন্তর্নিহিত দুর্বলতা বা গুটিকয়েক ব্যক্তি বা ক্ষুদ্রতর গোষ্ঠীর ক্ষমতা অধিগতের মাধ্যমে গণতন্ত্র অনুশীলন করা হলেও এটি গণতন্ত্রকে “ষবধংঃ ধৎনরঃৎধঃড়ৎু ধহফ সড়ংঃ ৎবংঢ়ড়হংরনষব, ষবধংঃ ফৎধংঃরপ ধহফ সড়ংঃ পড়হংরফবৎধঃবচ অর্থাৎ “সবচেয়ে কম স্বৈরাচারী সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল, সবচেয়ে কম কঠোর এবং সবচেয়ে বেশি সহানুভূতিশীল” বৈশিষ্ট্যের কারণে প্যারেটো, র‌্যাকো এবং সমবার্ট-এর মত খ্যাতিমান সমাজ-রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্যতীত প্রথিতযশা প্রায় সকলেই গণতন্ত্রের দুর্বলতা, অপূর্ণতা ও অপপ্রয়োগ স্বীকার করেও এর অপরিহার্যতার প্রতি অকৃত্রিম সমর্থন দিয়েছেন।
আধুনিক গণতন্ত্রের বিকাশের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীনতা ও মুক্তি তথা মানবজাতির মুক্তির সনদ হিসেবে জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ২১তম অনুচ্ছেদের ৩নং ধারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘সরকারের কর্তৃত্বের ভিত্তি হবে জনগণের ইচ্ছা যা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সার্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গোপন ভোটের মাধ্যমে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান অর্থাৎ জনগণের ইচ্ছার প্রকৃত প্রতিফলন’ জাতিসংঘ ঘোষিত এ নীতিমালা গণতান্ত্রিক ধারাকে সমগ্র বিশ্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। অনুচ্ছেদের ১নং ধারা বিশ্বের প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বাধীনভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশের শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার অর্জন করেছে। যথার্থ অর্থে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার সমুজ্জ্বল গতি-প্রকৃতির অবগাহনে গণতন্ত্র শুধু যে সরকার গঠন সম্পর্কিত বিষয় তা কিন্তু নয়। আধুনিক গণতন্ত্রের বিজ্ঞতাত্ত্বিক লিন্ডসের ভাষায়, গণতন্ত্র একটি সামাজিক প্রক্রিয়াও বটে। এটি মূলত কতগুলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও সামাজিক মূল্যবোধের সমন্বিত পরিচর্যা- প্রতিফলন-রোডম্যাপ স্বরূপে বিবেচ্য।
গণতন্ত্রের প্রাথমিক মূল্যবোধ হচ্ছে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ অর্থাৎ ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতা তথা চিন্তা-বাক-সংগঠন-ভোটপ্রদান-দলগঠন এবং অংশগ্রহণ-প্রার্থী-নির্বাচনে অংশগ্রহণ-স্বেচ্ছায় নির্বাচন গ্রহণ-বর্জনসহ অভিযোগ উত্থাপনের সমূহ স্বাধীনতা। সার্বিকভাবে জীবনধারণ-পরিবার গঠন-নিরাপত্তা-আইনের আশ্রয়-স্বাধীন মতামত প্রকাশ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিরোধিতার অধিকার সকল কিছুকেই অন্তর্ভূক্ত করার মধ্যেই গণতন্ত্রের গতিশীলতা-শক্তিমানতার বিকাশ ও বিস্তার লাভ করে। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ব্যক্তিত্বের উন্মেষ অধ্যায় তৈরির সাথে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হচ্ছে নির্ভরযোগ্য সহনশীলতা, অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতকে সাদরে গ্রহণ করার মানসিকতা। যেকোন সামাজিক প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশমানতার একমাত্র আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিশ্বাস-আস্থাশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ। গণতান্ত্রিক পাঠ্যক্রমের মূখ্য শিক্ষাই হচ্ছে নিজের ইচ্ছার সাথে অন্যের ইচ্ছার সমন্বয় ঘটানো বা অধিকাংশের ইচ্ছা বা আগ্রহকে যৌক্তিকভাবে নিজের বা ব্যক্তির অধিকারে সন্নিবেশন। ভল্টেয়ার বলেছেন, “তোমার মতের সাথে আমি একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন হলে প্রাণ দেব”।
এটি অধিকতর সত্য যে, গণতন্ত্রের প্রধান উদ্দেশ্য জনগণের শাসন শুধু প্রতিষ্ঠা নয়; শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থানের নিশ্চয়তা প্রদানও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী চিন্তা যা মানুষের অন্ধ বিশ্বাসের মূলে আঘাত হেনে সমাজদর্শন এবং রাষ্ট্রচিন্তার বিষয়ে মানুষের মানসিক-মানবিক শক্তিকে একীভূত করেছে, তারই সফল উচ্চারণ গণতন্ত্রায়ন ও এর সমকালীন পরিচর্যা। এরই যথার্থ বর্হিঃপ্রকাশ আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি ইউরোপীয় রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণে যা মানুষকে পার্থিব জগত ও পরিবেশের অপরিসীম সৌন্দর্য্য-আনন্দকে উপলব্ধি করার এক যুক্তিবাদী ধারণা এবং ক্ষমতায় অত্যুজ্জ্বল করেছে। সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যথাযথ রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদির যৌক্তিক পরিবর্তনে এর ইতিবাচক রূপই সংস্কার আন্দোলনের ধারাকে অতিশয় সমুজ্জ্বল করে আসছে। মানুষকে তার নিজের শক্তির প্রতি আস্থাশীল করা এবং সকল মানবীয় শক্তিকে জাগ্রত করে সমাজ উন্নয়নে এর মুক্ত বিকাশ-প্রয়োগ ছিল রেনেসাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য। কালক্রমে যা সমপ্রসারিত হয়েছে প্রাচ্যের এতদঞ্চলে এবং তারই বিকাশমান ধারায় উজ্জীবিত আজকের দক্ষিণ এশিয়ার স্বাধীন সত্ত্বার সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশ তথা পূর্ব বাংলার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস ব্যাখ্যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এর ভাঙ্গনের মূলে যে কারণগুলো বিদ্যমান ছিল, তা হচ্ছে প্রধানত- গণতন্ত্র বিবর্জিত কেন্দ্রীয় এক দেশদর্শী শাসন ব্যবস্থা ও পূর্ব বাংলার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ, এর ভাষার প্রতি অগণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী এবং সর্বোপরি শিক্ষিত সংস্কৃতিবান মধ্যবিত্তশ্রেণীর বিকাশকে রুদ্ধ করার অপচেষ্টা। দারিদ্র ও নিরক্ষরতা গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচিত যার সমুদয় উত্তরণ পরিপূর্ণভাবে দেশে অনুভূত নয়। এর পিছনে রয়েছে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামোয় অধিষ্ঠিতকরণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ইত্যাদি এক অপরাজনৈতিক সংস্কৃতির উদ্ভাবন। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তাঁর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার মূলমন্ত্র ছিল শোষণমুক্ত জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এরই আলোকে ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ অক্ষুন্ন রেখে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
স্বাধীনতাকে পরিপূর্ণভাবে অর্থবহ করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। ৭ মার্চের নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, সুন্দর এবং রাজনৈতিক গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকল দলের অংশগ্রহণে যথার্থ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা যায় তার জন্য ১৯৭৩ সালের ১০ জানুয়ারি গণভবনে মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রদত্ত ভাষণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুষ্পষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমার দেশ চলবে। এটা যে শুধু আমার কথা তা নয়। যে শাসনতন্ত্র আমরা দিয়েছি সে শাসনতন্ত্রে সেটা প্রত্যেক অক্ষরে অক্ষরে গ্রহণ করা হয়েছে। ……. এটা শাসনতন্ত্রের মূলনীতি। যে শৃঙ্খলাকে ভিত্তি করে শাসনতন্ত্র দিয়েছি যার জন্য আমরা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছি এতো শহীদ হয়েছে, এতো রক্ত দিয়েছি এটা মিথ্যা হয়ে যাবে যদি আমরা আমাদের আদর্শ এবং মূলনীতি থেকে দূরে সরে যাই।’
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সভ্যতার বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বরণের পরবর্তী পর্যায়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাতীয়করণে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের ঐতিহাসিক উদ্যোগকে নস্যাৎ করে অর্থব্যবস্থা-শিল্পায়ন-বিনিয়োগে ব্যক্তিখাতকে অধিক মাত্রায় গুরুত্ব দেয়া হয়। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান ব্যক্তিখাতের যে ধারাটি চালু করেছিলেন পরবর্তীতে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময় এ ধারাটির উলঙ্গ প্রকাশ ঘটে। সর্া্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়; গণতন্ত্রের জয়-পরাজয়ের দোলাচলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বার বারই ভূলুন্ঠিত হয়েছে। পক্ষান্তরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস-জঙ্গী ও মৌলবাদী শক্তির আস্ফালণ ধর্মান্ধ-দেশবিধ্বংসী পরাজিত অন্ধকারের শক্তি এক ধরনের রাজনৈতিক উম্মাদনা তৈরি করে। ফলশ্রুতিতে চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকের অবিচ্ছেদ্য গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে পরাস্ত করে ত্যাগী ও আদর্শ রাজনীতির স্থান দখল করেছে অবৈধ-অনৈতিক গুটিকয়েক বিপদগামী সামরিক-বেসামরিক আমলা-ঋণখেলাপী-ব্যবসায়ী-ঠিকাদার সমপ্রদায়।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপনকালে দেশবাসী গভীর পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছে উল্লেখিত অশুভ শক্তির বিনাশ সম্ভব হয়নি; অধিকন্তু বর্ণচোরা-অনুপ্রবেশকারী-অর্থ ও ক্ষমতালিপ্সু-দলবদলে পারদর্শী-পাপিষ্ট রাজনীতিকদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এরা সর্বত্রই শুধু সমাদৃত নয়, ছলচাতুরি-অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন পদ-পদক-পদবী দখলে নিয়ে দেশকে প্রায় করায়ত্ত করেছে বলে প্রবল জনশ্রুতি রয়েছে। ৪ অক্টোবর ২০২১ কোন এক গুরুত্ব্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদককেও বলতে হচ্ছে; দলে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য টাকা খেয়ে যেন খারাপ লোকের নাম কেন্দ্রে পাঠানো না হয়। ৫ অক্টোবর ২০২১ অন্য এক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ধর্মান্ধ মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের উঁচু পর্যায়ের এক নেতা দাবী করছেন, ‘বাংলাদেশে টাকার খেলা। টাকা দিয়ে জামায়াত প্রার্থী কেন, নৌকার মনোনয়নও পাওয়া কোনো ব্যাপার না প্রয়োজন হলে টাকা দিয়ে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে নেব। তারপরও চেয়ারম্যান পদে নেতৃত্ব দিতে চাই।’ এটি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির অপপ্রয়োগে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্খলন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। হাতেগোনা কিছু পেশী-বাহিনী পরিচালক, মাফিয়া-সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদীদের নিয়ন্ত্রণে চলমান রাজনীতি-রাজনীতিকদের চরিত্র বিশ্লেষণে ন্যূনতম দেশপ্রেম বা জনকল্যাণের কোন বৈশিষ্ট্যেরও লেশমাত্র প্রতিফলন দৃশ্যমান নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর আদর্শিক চেতনায় যথোপযুক্ত ঋদ্ধ হয়ে সচেতন জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অতীব জরুরি। আগামী নির্বাচনে নিখাঁদ ত্যাগী নেতৃত্বের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া না হলে জাতিকে কঠিন মূল্য দিতে হবে- নিঃসন্দেহে তা বলা যায়।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধভালোবাসার নাম শরীরে লেখালেন জাহ্নবী